রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড কেমেস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী ২০১৮ সালের ৭ মার্চ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন।
দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি শুরু করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ আছে, অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী তার রাজশাহী শহরের পৈতৃক বাড়ির বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল ও গৃহকর্মীর বেতনও কয়েক মাস বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে মিটিয়েছেন।
উপাচার্যের সই করা কয়েকটি রসিদ ঘেঁটে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তিনি নিজেও এই অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন নিউজবাংলার কাছে।
নিউজবাংলার হাতে আসা কয়েকটি রসিদ ঘেঁটে দেখা যায়, উপাচার্য অধ্যাপক রোস্তম আলী তার রাজশাহীর বাড়ির ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বিদ্যুৎ বিল বাবদ ২ হাজার ৯২৮ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে পরিশোধ করেছেন। তহবিলের সেই অর্থ উপাচার্য কর্তৃক অনুমোদন করা হয় ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিলে। এভাবে বেশ কয়েক মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ পৈতৃক বাড়ির কাজে লাগিয়েছেন।
রসিদগুলো ঘেঁটে দেখা যায়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রোস্তম আলী রাজশাহীর ওই বাড়ির ইন্টারনেট বিল বাবদ বেশ কয়েক মাস তিন হাজার টাকা করে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে।
পাবনার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের যে বাংলো রয়েছে, সেখানে পিয়ন, গৃহকর্মীসহ সব ধরনের সুবিধা আছে। এই বাংলোর সব ধরনের খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করে। উপাচার্য রোস্তম আলী বেশির ভাগ সময় এই বাংলোতেই থাকেন। তার ছেলে থাকেন রাজশাহীর বাড়িতে।
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপাচার্য অধ্যাপক রোস্তম আলী বেশ কয়েক মাস ওই বাড়ির বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বিলের পাশাপাশি গৃহকর্মীর বেতনও নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে, যে গৃহকর্মীর মাসিক বেতন সাড়ে তিন হাজার টাকা।
এভাবে প্রতি মাসে পাবনার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে রাজশাহীর পৈতৃক বাড়ির জন্য গড়ে সাড়ে ৯ হাজার টাকা তুলেছেন উপাচার্য রোস্তম আলী। ভেতরে ভেতরে তার এই অনিয়মের খবর ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ।
তাদের মধ্যে একজন শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে সম্প্রতি কথা বলতে রাজি হন নিউজবাংলার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলকে নিজস্ব তহবিল মনে করে সব সময় খরচ করে আসছেন ভিসি স্যার। তা ছাড়া তিনি ভিসি হওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে অনিয়মের পর অনিয়ম করে যাচ্ছেন। সেগুলোর ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে আলোচনা-সমালোচনা, এমনকি আন্দোলন হলেও এসবের তোয়াক্কা করেন না তিনি।'
ওই শিক্ষক আক্ষেপ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এগুলো কি বিশ্বাসযোগ্য কথা যে, ভিসি হয়েও তিনি নিজের বাড়ির ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ বিল বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে নেবেন। নেবেন সেই বাড়ির বুয়ার বেতনের টাকাও।
‘কিন্তু এটা এখন আর বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বিষয় না। দিনের আলোর মতো সত্য। সেসব বিলের সব ভাউচারও আছে। সেখানে ভিসি স্যারের সুপারিশসহ সই আছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক, দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘ভিসি স্যারের বিষয়ে এখন কথা বলা আর হরিণ হয়ে বনের বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করা একই কথা।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে শুক্রবার দুপুরে মোবাইল ফোনে কথা হয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর সঙ্গে।
নিউজবাংলার কাছে রাজশাহীর বাড়ির বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বিল এবং গৃহকর্মীর বেতনের টাকা কয়েক মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে তোলার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। তবে পাল্টা অভিযোগও করেছেন এই উপাচার্য। বলছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
উপাচার্য রোস্তম বলেন, ‘হ্যাঁ। আমি কয়েক মাস এমনভাবে বিল নিয়েছি। কিন্তু সর্বশেষ অডিট হওয়ার পর থেকে আমি আর এসব বিল নিই না। আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়। এসবই আসলে ষড়যন্ত্রের অংশ।’