বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সামিয়ার আরও অনিয়ম: অনুমতি না নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ

  •    
  • ১৪ মার্চ, ২০২১ ২০:৪৮

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন (অনাপত্তি) না নিয়ে সামিয়া রহমান অন্তত তিনবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের ওই তিনটি অনুমোদনহীন ভ্রমণ নিয়ে তার বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির বৈঠকে আলোচনা হলেও বিষয়টি সাংবাদিকতা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনেনি।

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অপরাধে সম্প্রতি পদাবনমনের সাজাপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সামিয়া রহমানের বিষয়ে আরেকটি গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই অনিয়মের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ‘অবগত’ নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন (অনাপত্তি) না নিয়ে সামিয়া রহমান অন্তত তিনবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের ওই তিনটি অনুমোদনহীন ভ্রমণ নিয়ে তার বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির বৈঠকে আলোচনা হলেও বিষয়টি সাংবাদিকতা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনেনি। বরং সামিয়া রহমানের নাম উল্লেখ না করে সব শিক্ষকের উদ্দেশে অভিন্ন সতর্কবার্তা দেয়ার সিদ্ধান্তে শেষ হয় ওই বৈঠক।

সামিয়া রহমানের এই অনুমোদনহীন বিদেশ সফরের বিষয়ে অবগত নয় প্রশাসনিক দপ্তর ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সামিয়া রহমান অবশ্য দাবি করছেন, একটি পক্ষ ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ তাকে বিপদে ফেলতে চাইছে।

একই ধরনের অনিয়মে সাম্প্রতিককালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে চাকরিচ্যুতি ও পদাবনমনের সাজা ভোগ করতে হয়েছে।

এর চেয়ে কম অপরাধে মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদের পদ অবনমন করে সহযোগী অধ্যাপক করা হয়েছে। অধ্যাপক নাসরীনের অপরাধ ছিল, তিনি ভারত যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটির অনুমোদন নিলেও অনুমোদিত ছুটির এক সপ্তাহ আগে সফর করেছিলেন। তার ছুটি অনুমোদিত ছিল ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে। তিনি ২৭ এপ্রিল ভারতের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি নাসরীন ওয়াদুদের গাফলতির সত্যতা পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট তার পদ অবনমন করে।

এ ছাড়া অননুমোদিতভাবে বিদেশে অবস্থান করায় পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাদিয়া তাইসিকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই অনিয়মে অব্যাহতি দেয়া হয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সাবরিনা জাহানকে।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সামিয়া রহমান একাধিকবার অনুমোদন বা অনাপত্তি না নিয়ে বিদেশ সফর করলেও প্রশাসনিকভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

নিউজবাংলা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জেনেছে, সেখানে তার (সামিয়া) বিদেশ সফরের কোনো অনাপত্তিপত্র নেই। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরেও তা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. সামাদ নিউজবাংলাকে বলেন, বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে এনওসি (অনাপত্তি) নেয়া বাধ্যতামূলক। কেউ যদি এটি না নেয়, তাহলে তার চাকরি চলে যাবে। এটি ল অব দ্য স্টেট।

গত ২৯ জানুয়ারি একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির দায়ে সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তাকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করা হয়। এ ছাড়া সামিয়ার গবেষণা প্রবন্ধের সহলেখক অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানকে শিক্ষা ছুটি শেষে চাকরিতে যোগদানের পর দুই বছর একই পদে থাকতে হবে।

শাস্তির সিদ্ধান্তে বলা হয়, ২০১৬ সালে সামিয়া ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অফ কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্টাডি অফ দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধের প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা ছিল ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধের হুবহু নকল।

২০১৮ সালের আগস্টে পারিবারিক ভ্রমণে মালদ্বীপ যান সামিয়া রহমান

অনুমোদন না নিয়ে বিদেশ সফর

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সামিয়া রহমান ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর কলকাতা সফরে যান, কিন্তু তার এ সফরের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তরে কোনো অনাপত্তিপত্র নেই। সামিয়া রহমান ভারত থেকে ফিরে আসেন ২৭ অক্টোবর। তিনি ওই দুদিনের সফরে বাংলাদেশের ডুব চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শোতে যোগ দেন।

এরপর তিনি ২০১৮ সালের আগস্টে পারিবারিক ভ্রমণে মালদ্বীপ যান। ওই ভ্রমণের বিষয়েও তিনি তার বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছু জানাননি। ৩০ আগস্ট তিনি তার ফেসবুকে লেখেন, পারিবারিক পিকনিক করতে তারা মালদ্বীপ আছেন। মালদ্বীপের অবকাশ যাপন কেন্দ্রে সপরিবারে অবস্থানের ছবিও পোস্ট করেন ফেসবুকে। এই সফরেরও কোনো অনাপত্তিপত্র পাওয়া যায়নি।

এরপর সামিয়া রহমান ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আবার ভারত সফরে যান। ওই সফরেও তার কোনো অনাপত্তিপত্র ছিল না। তিনি ওই সফরে কলকাতার ‘চোখ’ সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করেন। তার ওই সফর ও সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণের সচিত্র প্রতিবেদন দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তর ওই সফরের কোনো অনাপত্তিপত্র এই প্রতিবেদককে দেখাতে পারেনি।

কী পাওয়া গেল প্রশাসনিক দপ্তরে?

সামিয়া রহমানের অনাপত্তিপত্র ছাড়া বিদেশ গমনের সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে নিউজবাংলা। গত ৭ মার্চ নিউজবাংলার পক্ষ থেকে প্রশাসনিক ভবনে সামিয়া রহমানের ছুটি না নিয়ে বিদেশ গমনের তথ্য জানতে চাওয়া হলে বলা হয়, লিখিত আবেদন করে তথ্য পেতে হবে।

পরে রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান বরাবর আবেদন করা হলে মঙ্গলবার জানানো হয়, আবেদনপত্রটি তারা হারিয়ে ফেলেছেন। একই দিন আবার আবেদন করা হলে তা রেজিস্ট্রারের অনুমোদনে উপাচার্য অফিসে পাঠানো হয়।

বুধবার উপাচার্যের কার্যালয়ে বসা ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহজাহান হাওলাদার জানান, তারা তথ্যপ্রাপ্তির আবেদনটি উপাচার্যের কাছে দিয়েছেন এবং উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছেন।

উপাচার্যের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে, জানতে চাওয়া হলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহজাহান হাওলাদার বলেন, যে নির্দিষ্ট তিনটি তারিখের কথা বলা হয়েছে, ওই তারিখগুলোতে সামিয়া রহমানের বিদেশ গমনের অনাপত্তিপত্র ছিল কি না সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে উপাচার্যকে জানাতে বলা হয়েছে।

একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও একজন সহকারী রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব দেয়া হয় এই বিষয়ে। বলা হয়, যতগুলো সংশ্লিষ্ট শাখায় অনাপত্তিপত্রের অনুলিপি থাকার কথা, সেইসব দপ্তরে খোঁজ নেয়া হবে। তবে বুধবার দিনভর খোঁজাখুঁজি করার পরও সংশ্লিষ্ট কোনো শাখাতেই সামিয়া রহমানের ওই তিন বিদেশ সফরের বিষয়ে কোনো অনাপত্তিপত্র পাওয়া যায়নি।

প্রশাসনিক দপ্তর নিউজবাংলাকে তথ্য দেয়ার জন্য যে সময় দেয়, সেই সময়ে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনিক শাখার এক কর্মকর্তা জানান, তারা এখনও এমন কোনো নথি খুঁজে পাননি, তবে তারা আরও খোঁজ করে জানাবেন। আর কোথায় খোঁজ করা হবে তা জানতে চাওয়া হলে বলা হয়, যদি বিভাগে থেকে থাকে, তবে সেটাও জানানো হবে।

বুধবার বিকেলে আবার যোগাযোগ করা হলে প্রশাসনিক ভবন থেকে বলা হয়, বিভাগ থেকেও কিছু পাওয়া যায়নি। এখন তারা এই বিষয়টি উপাচার্যকে অবহিত করবেন।

প্রশাসনিক দপ্তরের অনুসন্ধানের এ ফলাফল বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সকাল ১১টায় উপাচার্যকে জানানোর কথা থাকলেও প্রশাসনিক দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপাচার্য ওই দিন থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত কার্যালয়ে থাকবেন না।

তবে নথি খুঁজে বের করার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মোক্তার হোসেন অনানুষ্ঠানিকভাবে নিউজবাংলাকে জানান, তারা কোনো অনাপত্তিপত্র খুঁজে পাননি। বিষয়টি তারা উপাচার্যকে জানানোর পর নিউজবাংলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত করবেন।

ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহাজাহান হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপাচার্য স্যার এলে আপনাদের এই বিষয়টি জানানো হবে। এর আগে আমরা কিছু বলতে পারব না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে যদি এমন কিছু আমাদের কাছে থেকে থাকত, তবে আমরা আপনাকে আগেই দিয়ে দিতে পারতাম। যেহেতু কিছু নেই, তাই আমাদের খুঁজে দেখার দায়িত্ব ছিল। এখন স্যার এলে আমরা স্যারকে বিষয়টি জানাব।’

‘চোখ’ সাহিত্য পুরস্কার নিতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত সফরে যান সামিয়া রহমান

কী বলছে সাংবাদিকতা বিভাগ

অনুমোদনহীন বিদেশ সফরের বিষয়ে অবগত থাকলেও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শুধু মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি সাংবাদিকতা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের একজন শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির বৈঠকে সামিয়ার অননুমোদিত বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে তখন শুধু মৌখিকভাবে তাকে সতর্ক করা হয়।

একই অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের পদাবনমনের দৃষ্টান্ত নিয়ে আলোচনা হয় কমিটির বৈঠকে। এর আগে আগে মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদের পদাবনমনের বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। বৈঠকের শুরুতে সামিয়া রহমানকে সতর্ক করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও পরে কয়েকজন শিক্ষকের পরামর্শে সামিয়া রহমানের নাম উল্লেখ না করে বিভাগের সবার উদ্দেশে অভিন্ন সতর্কবার্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেন এমন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার কোনো সদুত্তর বিভাগের কেউ দিতে পারেননি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের ওই শিক্ষক জানান, বৈঠকে সামিয়া রহমানের পক্ষের কিছু শিক্ষক তাকে সতর্ক করা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। এরপর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিভাগের চেয়ারম্যান সব শিক্ষককে এ ব্যাপারে সতর্ক করে ই-মেইল করবেন।

নিউজবাংলার কাছে ওই অ্যাকাডেমিক কমিটির সভার উপস্থিতি ও সিদ্ধান্তের একটা কপি রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় দীর্ঘদিন অনুপস্থিতি, এনওসি (অনাপত্তিপত্র) না নিয়ে বিদেশ গমন, ক্লাস না নেয়া ও অন্যান্য বিষয়ে অ্যাকাডেমিক কমিটির সকল সদস্যকে সতর্ক করে চেয়ারপারসন সাধারণ ই-মেইল করবেন।’

অনুমোদন না নিয়ে সামিয়া রহমানের বিদেশ সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বুধবার নিউজবাংলাকে বলেন, তার বিদেশ সফরের বিষয়ে বিভাগ অবগত নয়।

কাবেরী গায়েন বলেন, ‘তার যে তিনটি ভ্রমণের বিষয়ে বলা হচ্ছে, সেটির একটি আমার আসার (চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের) আগেই ঘটেছে, তাই সেটি আমার জানা নেই। বাকি দুটির বিষয়ে হয়তো রেজিস্ট্রার ভবন অবগত থাকতে পারে।’

রেজিস্ট্রার ভবনে এই বিষয়ে কোনো নথি পাওয়া যায়নি উল্লেখ করলে কাবেরী গায়েন বলেন, ‘বিভাগ এই (সফরের) বিষয়ে অবগত নয়।’

২০১৭ সালে যখন তিনি প্রথম অনুমতি না নিয়ে বিদেশ সফর করেন তখন ওই সময় বিভাগের চেয়ারপারসন ছিলেন অধ্যাপক মফিজুর রহমান।

উপাচার্য যা বললেন

বৃহস্পতিবার উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, এই ছুটির বিষয়ে জানতে চাওয়া উচিত নয়। এটা বিশ্ববিদ্যালয় দেখবে।

তিনি নিউজবাংলার সাংবাদিককে বলেন, ‘তুমি যদি জেনে থাকো, তবে তা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাও। তুমি এটা দিয়ে কী করবে? এটা একেবারেই ব্যক্তিগত। কে কোথায় কবে গেল বা কী করল, এটা ব্যক্তিগত। তোমার কোনো অবজারভেশন থাকলে তুমি আমাদেরকে জানাও। আমাকে এটি জানালে আমি সেটি দেখব।’

এখানে অনিয়ম হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে উপাচার্য বলেন, ‘যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, সেটি আমরা দেখব। এটা ইউনিভার্সিটি দেখবে। তোমার কোনো অবজারভেশন থাকলে সেটি ইউনিভার্সিটিকে জানাও। কে কোথায় গেল সেটি অফিশিয়ালি তোমাকে কেন দেবে, ভাই? তুমি জানিয়েছ ভালো করেছ। তবে মনে থাকবে না।’

যেভাবে অনাপত্তিপত্র নিতে হয়

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও বিদেশ সফর করতে হলে আগেই বাধ্যতামূলক অনাপত্তিপত্র নিতে হয়।

শিক্ষককে বিদেশ গমনের জন্য রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে ছুটি নিতে হয়, তবে এ আবেদন রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠাতে হয় ওই বিভাগের চেয়ারপারসনের মাধ্যমে। চেয়ারপারসনের সুপারিশে অনাপত্তিপত্রের আবেদন প্রশাসনিক দপ্তরে পাঠানো হয়।

প্রশাসনিক দপ্তরে যাওয়ার পর সেই ছুটি দেয়া যাবে কি না তা বিবেচনা করেন রেজিস্ট্রার। যদি ছুটি দেয়া হয়, তবে সেই অনাপত্তিপত্রের একটি অনুলিপি যায় ইমিগ্রেশনে (বহির্গমন বিভাগ), একটি রেজিস্ট্রার অফিসে থাকে নথি হিসেবে, একটি অনুলিপি যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগে এবং একটি অনুলিপি থাকে বিভাগের চেয়ারপারসনের কাছে। তাছাড়া বিভাগে ওই শিক্ষকের ব্যক্তিগত ফাইলেও অনাপত্তিপত্রের জন্য করা আবেদনের অনুলিপি থাকে। এটি বিদেশ গমনের যেকোনো ছুটির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ও বাধ্যতামূলক।

সামিয়া রহমানের অনুমোদনহীন বিদেশ সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. সামাদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ভাইস-চ্যান্সেলরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়, সেটি উনি (উপাচার্য) সিন্ডিকেটে নিয়ে তদন্ত করবেন। এরপর তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।’

এনওসি নেয়ার নিয়মের বিষয়ে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, নিয়ম হলো, বিভাগের চেয়ারম্যান বা সিএমপির মাধ্যমে রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন আসবে। রেজিস্ট্রার উপাচার্যকে বলবেন। এরপর উপাচার্য এটি অনুমোদন করবেন।

এনওসি না নিয়ে বিদেশ যাওয়ার শাস্তি কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করে। বিষয়টা যেহেতু আমি ডিল করি না, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা আছে কি না আমি জানি না।’

সামিয়া রহমানের অনাপত্তিপত্র না নিয়ে বিদেশ গমনের বিষয়টি অবগত নন রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে হলে আমাকে রেকর্ড চেক করতে হবে ।

এ রকম কোনো রেকর্ড প্রশাসনিক ভবন থেকে দেখাতে পারেনি জানালে তিনি বলেন, ‘অফিশিয়াল কোনো রেকর্ড না থাকলে আমিও অবহিত থাকব না এটিই স্বাভাবিক। রেকর্ড থাকলেই না আমি অবহিত থাকব।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সামিয়া রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা আমার নামে ফেক চিঠি দিয়ে একটা মিথ্যা ষড়যন্ত্র করতে পারে, তারা অনেক কিছুই করতে পারে। যে প্রশাসনের মধ্য থেকে একটা মিথ্যা চিঠি দিয়ে আমাকে ফাঁসানো হয়, তারা অনেক কিছুই করতে পারে। ’

প্রতিবেদককে টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘অন্যদের ব্যাপারে খোঁজ নাও। যাদের চাকরি পর্যন্ত চলে যাচ্ছিল, বিদেশ থেকে ফেরত আসছিল না তাদের খোঁজ নাও। যারা মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে ফাঁসাতে পারে, তারা অনেক কিছুই করতে পারে।’

অভিযোগ ওঠা তিনটি বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাপত্তি নিয়েছিলেন কি না- জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো জবাব দেননি। তবে সামিয়া রহমান বলেন, ‘সবই আছে, তারা অনেক কিছুর নথিপত্র গায়েব করে দিয়েছে।’

বিভাগ বা প্রশাসনিক দপ্তর কোনো নথি দেখাতে পারেনি জানালে তিনি বলেন, ‘তারা গায়েব করে দিয়েছে। যে সালের কথা তখন কেন এটা উঠেনি?’

এ বিভাগের আরো খবর