অর্থনৈতিকসহ নানা সংকটে পড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায় এখন থেকে যে কেউ চাইলেই আর জ্বালানি কিনতে পারবেন না। প্রয়োজনীয় জ্বালানি কিনতে করতে হবে নিবন্ধন; যাতে মিলবে ‘ফুয়েল পাস’। এ পাস দিয়ে কেনা যাবে নির্দিষ্ট পরিমাণের জ্বালানি।
দেশটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এই ঘোষণা শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিলন টুডে।
জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা বিজেসেকেরা জানিয়েছেন, নিবন্ধন শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করে সেবা নেয়া যাবে।
লঙ্কান সরকারের দেয়া তথ্যানুযায়ী, একটি জাতীয় পরিচয়ত্র দিয়ে একজন একটি গাড়ির নিবন্ধন করতে পারবেন। নিবন্ধন হয়ে গেলে কিউআর কোড দেয়া হবে।
মন্ত্রী কাঞ্চনা জানান, একটি পাসের বিপরীতে একজন সপ্তাহে দুদিন জ্বালানি সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে এই জ্বালানি নেয়া যাবে নির্দিষ্ট পরিমাপে।
অর্থনৈতিক সংকটের জেরে বড় ধরনের অস্থিরতা চলছে শ্রীলঙ্কায়। চলমান পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতাসীন রাজাপাকসে পরিবারকে দায়ী করে তাদের সরে যেতে দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যেই দেশ থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মালদ্বীপ হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর যান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে যাওয়ার পর পরই ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠান গোতাবায়া। এরই মধ্যে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবিবর্ধনে।
গোতাবায়া রাজাপাকসের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের পর শুক্রবার শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।
দুই কোটির বেশি জনসংখ্যার এই দেশে চলতি বছর অর্থাৎ আগামী ছয় মাস চলতে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি আমদানি করতে হবে বলে জানিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে।। এ ছাড়া দেশটির রান্নার গ্যাস আমদানি করতে হবে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশরাজের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র।
দেশটিতে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপর্যস্ত জনজীবন। মূল্যস্ফীতি, দুর্বল সরকারি অর্থব্যবস্থা এবং করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।
লঙ্কান সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটনশিল্প ধসে পড়েছে, রেমিট্যান্স পৌঁছেছে তলানিতে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ নেমে এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারে।
বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে জ্বালানি আমদানি কমে যাওয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কায় দিনের অর্ধেক বা এর বেশি সময় চলছে লোডশেডিং; খাবার, ওষুধ ও জ্বালানি সংকটে ক্ষোভ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজপাকসেকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। নতুন করে এই পদে আসেন রনিল বিক্রমাসিংহে। গঠন করা হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভাও। তবে দেশটির সংকট কাটছেই না।