ইউক্রেনের ব্যাপক ড্রোন হামলায় রাশিয়ার কুরস্কে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্ষমতা হঠাৎ কমে গেছে এবং লেনিনগ্রাদ অঞ্চলের উস্ত-লুগা জ্বালানি টার্মিনালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই হামলাগুলোর বিষয়ে নিশ্চিত করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত রোববার অন্তত ৯৫টি ইউক্রেনীয় ড্রোন বিভিন্ন অঞ্চলে ভূপাতিত করা হয়। এ দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে ইউক্রেন। ১৯৯১ সালের এ দিনেই সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়েছিল দেশটি।
ইউক্রেনের সর্বশেষ হামলার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে রাশিয়ার কুরস্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই কেন্দ্রের ৩ নম্বর রিঅ্যাক্টরে ড্রোন হামলার কারণে একটি সহায়ক ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে রিঅ্যাক্টরের কার্যক্ষমতা অর্ধেকে নেমে আসে। কেন্দ্রটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া অন্য দুটি রিঅ্যাক্টর বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখেছে এবং একটি মেরামতের কাজের জন্য বন্ধ রয়েছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক তদারকি সংস্থা (আইএইএ) ঘটনাটির প্রতি গভীর নজর রাখছে। সংস্থাটি বলেছে, সামরিক কর্মকাণ্ডের কারণে কুরস্ক প্ল্যান্টে ট্রান্সফরমারে আগুন লাগার খবর তারা পেয়েছে এবং সব ধরনের পারমাণবিক স্থাপনাকে যেকোনো মূল্যে সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, উত্তরে ফিনল্যান্ড উপসাগরের তীরে উস্ত-লুগা বন্দর এলাকায় ড্রোন হামলার পর নোভাটেক পরিচালিত একটি বিশাল জ্বালানি রপ্তানি টার্মিনালে আগুন ধরে যায়। লেনিনগ্রাদ অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্ডার দ্রজদেনকো জানিয়েছেন, অন্তত ১০টি ড্রোন গুলি করে নামানো হলেও এর ধ্বংসাবশেষ থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ছড়িয়ে পড়া কালো ধোঁয়া আকাশ ঢেকে ফেলে। দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলেও তিনি জানান। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রুশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ড্রোন সরাসরি টার্মিনালে আঘাত হানে এবং সঙ্গে সঙ্গে বিশাল আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে উঠে যায়। নোভাটেক জানিয়েছে, ২০১৩ সালে চালু হওয়া এই টার্মিনালে গ্যাস কনডেনসেট প্রক্রিয়াজাত করে ন্যাপথা, জেট ফুয়েল, ফুয়েল অয়েল ও গ্যাস অয়েল উৎপাদন করা হয়। পরে এগুলো মূলত এশিয়া ও তুরস্কে রপ্তানি করা হয়।
হামলার কারণে কয়েক ঘণ্টার জন্য রাশিয়ার বেশ কয়েকটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট বন্ধ রাখা হয়। এর মধ্যে লেনিনগ্রাদ অঞ্চলের পুলকোভো বিমানবন্দরও ছিল। এছাড়া দক্ষিণ রাশিয়ার সামারা অঞ্চলে একটি শিল্প কারখানায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় একটি শিশু আহত হয়েছে বলে স্থানীয় গভর্নর জানিয়েছেন।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনার কথা উঠলেও বাস্তবে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এটাই সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত, যেখানে ইউক্রেন-রুশ সীমান্ত বরাবর দীর্ঘ দুই হাজার কিলোমিটারজুড়ে তীব্র লড়াই চলছে।