রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মনের কথাটা জানতে তার সাক্ষাৎ চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। মূলত তার চাওয়া, চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দেশটির পূর্বাঞ্চলে এই মুহূর্তেই যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় আস্থা রাখে। ট্রাইলেটারাল কন্টাক্ট গ্রুপের (টিসিজি) বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার আশা রাখছি।’
ইউক্রেন, রাশিয়া ও অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই) রয়েছে এই গ্রুপে। চলমান সংকট নিরসনে তারা জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
টুইটে জেলেনস্কি বলেছেন, 'আমরা শান্তি প্রক্রিয়া জোরদার করার পক্ষে। তাৎক্ষণিকভাবে টিসিজির আহ্বানকে সমর্থন করছি।’
উত্তেজনা প্রশমনে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রোববার ফোনে কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এই আলোচনার বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে এলিসি প্যালেস বলছে, সংঘাত এড়াতে এটা সম্ভাব্য শেষ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ গত ৭ ফেব্রুয়ারি জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকে নিয়ে পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সে সময় ইউক্রেন ঘিরে থাকা রুশ সেনা সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।
বর্তমান পরিস্থিতি
ইউক্রেনের উত্তরে যৌথ সামরিক মহড়া অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া ও বেলারুশ। আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ১০ দিনের মহড়া রোববার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ইউক্রেন সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করায় মহড়া চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে মিনস্ক।
বেলারুশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভিক্টর ক্রেনিন বলেছেন, ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে উত্তেজনা কমা না পর্যন্ত রাশিয়ার সেনারা ফিরবে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন নিশ্চিত, পশ্চিমা দেশগুলো ও ন্যাটোর এমন সতর্কতার পরও রাশিয়ার মহড়া চালিয়ে যাওয়ায় বাড়তি চাপে পড়তে যাচ্ছে কিয়েভ।
ইউক্রেনের ডনবাসে গোলা ছোড়া অব্যাহত রেখেছে রুশপন্থি বিদ্রোহীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতে অঞ্চলের সাত চেকপোস্টের একটি সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে ইউক্রেন সরকার।
এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় রোববার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ চলছে। এতে এ পর্যন্ত দুই ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে কিয়েভ।
কী বলছে মস্কো
ইউক্রেনে রুশ হামলার সম্ভাব্য সময় নিয়ে পশ্চিমাদের ভবিষ্যদ্বাণীকে উসকনিমূলক বলছে ক্রেমলিন। রুশ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো বারবার ইউক্রেনে আক্রমণের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে কথা বলে যাচ্ছে। বিষয়টি উত্তেজনাকর। এর বিরূপ ফল হতে পারে।
‘প্রেসিডেন্ট পুতিন পশ্চিমাদের এসব বিবৃতি পাত্তা দেন না।' পশ্চিমাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা এই শঙ্কা প্রকাশের কারণ ব্যাখ্যা করুন।’
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রুশ সেনা সরিয়ে না নেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে ইউরোপিয়ান কাউন্সিল। জার্মানির মিউনিখে চলা সিকিউরিটি কনফারেন্সে জোটের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেছেন, ‘রাশিয়া যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে, সেনা বাড়াচ্ছে, সেখানে ইউরোপ চুপচাপ বসে থাকতে পারে না।’
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হুঁশিয়ারি
বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ইউক্রেন আক্রান্ত হলে ওয়াশিংটন ও লন্ডন রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। আর তাহলে তারা ডলার অথবা পাউন্ডে লেনদেনের সুযোগ হারাবে।
তবে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এসব আমলে নেবেন না বলে ধারণা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর। তার ভাষ্য, পুতিন বিষয়গুলো যৌক্তিকভাবে দেখছেন না। ফলে নিষেধাজ্ঞার হুমকি পাশ কাটিয়ে তিনি ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে বসতে পারেন।