ইউক্রেন প্রশ্নে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার টানাপোড়েনের মধ্যে এবার পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে মস্কো। ক্রেমলিন বলছে, সাগরে হাইপারসনিক ব্যালেস্টিক ও ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষা সফল হয়েছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ক্রেমলিনের ‘সিচ্যুয়েশন সেন্টার’ থেকে শনিবার এই মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময় তার পাশে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ছিলেন।
ক্রেমলিন জানায়, যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন ও যুদ্ধবিমান থেকে মিসাইল পরীক্ষা করা হয়েছে। মিসাইলগুলো ভূমি থেকে ভূমি এবং সাগরে ছোড়া হয়।
‘দুটি ব্যালেস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। একটি রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে, অন্যটি বারেন্টস সাগরে একটি সাবমেরিন থেকে ছোড়া হয়। এটি কয়েক হাজার মাইল দূরে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলের কামচাটকা উপত্যকায় সফলভাবে আঘাত হেনেছে।’
মহড়ার কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আরআইএ। এতে দেখা গেছে, রুশ সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে মহড়া শুরুর নির্দেশ দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে মহড়া দেখছেন পুতিন। ছবি: এএফপি
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নর্দান ও কৃষ্ণ সাগরে যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন থেকে কালিবর ক্রুজ মিসাইল এবং জিরকন হাইপারসনিক মিসাইল সাগর ও ভূমি লক্ষ্য করে ছোড়া হয়। এ ছাড়া বিমান থেকে কিনজহাল হাইপারসনিক ব্যালেস্টিক মিসাইল ছোড়া হয়েছে, যা ভূমিতে যে লক্ষ্য ছিল তাতে সফলভাবে আঘাত হেনেছে।
ক্রেমলিন বলছে, এটা তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ। কোনো প্রকার উত্তেজনা ছড়ানোর উদ্দেশ্য নেই তাদের।
গত চার মাস ধরে ইউক্রেন সীমান্তের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সেনা জমায়েত শুরু করে রাশিয়া। পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, এই সংখ্যাটা দেড় লাখ বা তার চেয়েও বেশি।
মস্কোভিত্তিক থিংক ট্যাংক আইএমইএমও এর রিসার্চ ফেলো দিমিত্রি স্টেফানোভিচ বলছেন, ‘আমাদের পশ্চিম সীমান্তের বর্তমান অবস্থা একটা সংকেত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
‘ইউক্রেন প্রশ্নে কেবল পশ্চিমা হস্তক্ষেপ নয়। পরিস্থিতি এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যেন এটা স্পষ্ট হয় সমস্যটা আসলে ইউক্রেন নিয়ে নয়, এর চেয়েও বেশি কিছু।’
প্রেক্ষাপট
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর ইউক্রেনের জন্ম। সেই থেকে ইউক্রেনকে পশ্চিমা বলয় থেকে মুক্ত রাখতে মরিয়া রাশিয়া। প্রতিবেশী বেলারুশও মস্কোপন্থি। পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার আধিপত্য এখনও একচ্ছত্র।
এ অবস্থায় সামরিক সক্ষমতা দেখাতে সম্প্রতি বড় পরিসরে সেনা মহড়া শুরু করে পশ্চিমাদের সামরিক জোট-ন্যাটো।
ইউক্রেনকে জোটে ভেড়াতে তারা চেষ্টা চালাচ্ছে জোর। আর এখানেই আপত্তি রাশিয়ার। তাদের অভিযোগ, ন্যাটো জোটে ইউক্রেনের যোগ দেয়া রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। এ ছাড়া সীমান্তে ন্যাটোর সামরিক মহড়ায় উদ্বিগ্ন মস্কো।
পাল্টা ব্যবস্থা নেয় রাশিয়া। সীমান্তে সেনা মোতায়েন শুরু করে তারা। ক্রেমলিন শর্ত দেয়, ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে পশ্চিমাদের।
সেই সঙ্গে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সামরিক মহড়া বন্ধের পাশাপাশি পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া থেকে ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার কাছাকাছি কোনো দেশে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা যাবে না।
এসব দাবির মধ্যে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার দাবি ছাড়া বাকি ইস্যুগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর কথা বলছে হোয়াইট হাউস। কূটনৈতিক চেষ্টা চালাচ্ছে ইউরোপও।
কিন্তু এসব আলাপে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পশ্চিমাদের আচরণ তার কাছে স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন সাবেক কেজিবি প্রধান।
এ অবস্থায় ৩০ হাজার সেনা নিয়ে বড় পরিসরে বেলারুশে সামরিক মহড়া শুরু করে মস্কো। একে যুদ্ধের প্রস্তুতি দাবি করে আসছে পশ্চিমা বিশ্ব। কারণ ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখলে নেয়ার আগে এমন মহড়ায় দেখা গিয়েছিল রুশ সেনাদের।