প্রায় বছরখানেক অপেক্ষার পর শিশুদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদানে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে যে শিশুদের জন্য টিকার চেয়ে করোনাভাইরাস বেশি নিরাপদ।
ইনস্টাগ্রামে গত ৫ নভেম্বরের একটি পোস্টে বলা হয়, ‘শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হলে যত না মৃত্যুঝুঁকি, সে ঝুঁকি ৫০ গুণ বেড়ে যায় তাদের করোনা প্রতিরোধী টিকা দেয়া হলে।’
এক সপ্তাহে তিন হাজার ‘লাইক’ কুড়ানো পোস্টটিতে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে ড. মিখাইল ইয়াদুনের। তিনি করোনা প্রতিরোধী টিকা প্রস্তুতকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান ফাইজারের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট।
প্রায় ১৬ বছর কর্মরত থাকার পর ২০১১ সালে ফাইজার ত্যাগ করেন ড. ইয়াদুন। এর আগে তিনি ফাইজারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাবিষয়ক অপপ্রচার ও ভুল তথ্যের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছেন এই ব্যক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের একসময়ের সহযোগী ও অন্যতম বিতর্কিত চরিত্র স্টিভ ব্যাননের সঙ্গে চলতি বছরের জুনে একটি সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়েছিলেন ড. ইয়াদুন। ইনস্টাগ্রাম পোস্টটিতে উল্লেখিত উদ্ধৃতিটি নেয়া হয়েছে ওই সাক্ষাৎকার থেকে।
ইয়াদুন বলেছিলেন, ‘শিশুদের এ রকম একটা টিকা দেয়া স্রেফ পাগলামি। ভাইরাসের যেটুকুও বা শিশুর প্রাণ কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা আছে, টিকা তার চেয়েও ৫০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।’
ইউএসএ টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, দাবিটি মিথ্যা।
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, করোনা প্রতিরোধী টিকায় শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি একেবারেই নেই।
জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, টিকা গ্রহণে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরোপুরি না কাটলেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া ঠেকানো সম্ভব। টিকা গ্রহণের উপযোগিতা এর স্বাস্থ্যঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি বলে মত বিশেষজ্ঞদেরও।
এ বিষয়ে ড. ইয়াদুন ও তার উদ্ধৃতি পোস্ট করা ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল ইউএসএ টুডে।
মৃত্যুর সঙ্গে টিকার সম্পর্ক নেই
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও সামগ্রিকভাবে মৃত্যুঝুঁকি কম। শিশুদের ক্ষেত্রে কথাটি আরও সত্য। তবে ভাইরাস থেকে পুরোপুরি তারা ঝুঁকিমুক্ত, এমন দাবি করার উপায় নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্য বলছে, ১৮ বছরের কমবয়সী ৭০০ শিশু করোনাভাইরাসে মারা গেছে। এদের মধ্যে দুই শতাধিক শিশুর বয়স চার বছরের কম ছিল।
টিকার ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই তা নয়।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্যনীতি ও ব্যবস্থাপনার অধ্যাপক ড. লিয়ানা ওয়েন ই-মেইলে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে করোনা প্রতিরোধী টিকায় একটি শিশুরও মৃত্যু হয়নি। কিন্তু করোনায় ছয় শতাধিক শিশু প্রাণ হারিয়েছে। ইয়াদুনের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য।’
পাঁচ বছর থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের ওপর ফাইজারের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও কারো মৃত্যু হয়নি। ১২ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ফাইজারের পৃথক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও কোনো প্রাণহানি হয়নি। মডার্নার প্রস্তুতকৃত টিকার পরীক্ষাতেও একই ফল মিলেছে।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জুলাইয়ে টিকা গ্রহণের পর ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)।
কিন্তু তাদের কারও মৃত্যুর কারণই টিকা ছিল না বলে জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডার শিশু ও মহামারিবিদ্যার অধ্যাপক ড. সোঞ্জা রাসমুসেন। ই-মেইলে তিনি লিখেছেন, ‘করোনার টিকার মাধ্যমে শিশুদের গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুঝুঁকি যতটা কমানো সম্ভব, তার কাছে টিকার অন্য ঝুঁকি একেবারেই ম্লান।’