সুদানে প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদককে গ্রেপ্তারের পর অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে দিয়েছে সেনাবাহিনী। জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন সেনাবাহিনীর জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান।
সাবেক স্বৈরশাসক ওমর আল-বশিরের পতনের পর দুই বছর ধরে সুদান শাসন করা সার্বভৌম পরিষদের প্রধান জেনারেল বুরহান।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সুদানের বেসামরিক সরকারের মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্যকে সোমবার গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। এর প্রতিবাদে রাজধানী খারতুমে চলছে ব্যাপক বিক্ষোভ। রাজপথে গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের অবস্থান, গোলাগুলি ও ১২ জন আহত হওয়ার খবরের মধ্যেই এল সরকার ভেঙে দেয়ার ঘোষণা।
গণআন্দোলনের জেরে ২০১৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও ৩০ বছর সুদান শাসন করা বশির ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর থেকে যৌথভাবে দেশটি শাসন করছিল সেনাবাহিনী ও বেসামরিক অন্তর্বর্তী সরকার।
সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন সংগঠনের জোট ফোর্সেস ফর ফ্রিডম অ্যান্ড চেঞ্জের মধ্যে (এফএফসি) ক্ষমতা বণ্টনের চুক্তি হয়েছিল। উভয়পক্ষ মিলে একটি সার্বভৌম পরিষদ গঠন করেছিল। এই পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান।
ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হামদককে গ্রেপ্তার করে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সুদানের তথ্য মন্ত্রণালয়। সেনা অভ্যুত্থানে স্বীকৃতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সুদানের তথ্য মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত হামদকের সমর্থকরা নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ওমদারমানে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী এবং কর্মীদের আটক করেছে।
এ অবস্থায় সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সুদানের তথ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, খারতুমের সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়েছে লাখো মানুষ। সেনাবাহিনীর প্রধান কার্যালয়ের কাছে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হামদকের কার্যালয়ের পরিচালক অ্যাডাম হেরেইকা বলেন, ‘সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জেফ্রি ফেল্টম্যানের সঙ্গে সুদান সরকারের বৈঠকের পর হামদকের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে কাজ করছিল সেনাবাহিনী। ইতিবাচক অগ্রগতি সত্ত্বেও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে তারা।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগে বিঘ্ন ঘটছে। শহরে শহরে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে। খারতুম বিমানবন্দর বন্ধ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
সুদানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়। সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লীগ। যুক্তরাজ্যের সুদান ও দক্ষিণ সুদানবিষয়ক বিশেষ দূত রবার্ট ফেয়ারওয়েদার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে বলেছেন, বেসামরিক নেতাদের গ্রেপ্তার করে সুদানের সেনাবাহিনী ‘সুদানের জনগণ, বিপ্লবী ও পরিবর্তনকামীদের সঙ্গে প্রতারণা’ করেছে।
২০১৯ সালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই সুদানের সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল। আরও এক বছর তাদের দেশ শাসনের কথা ছিল এবং নির্বাচনের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা পূর্ণ হস্তান্তরের কথা ছিল।
কিন্তু ক্ষমতা বণ্টনের চুক্তি নিয়ে বরাবরই ক্ষিপ্ত ছিল বিভিন্ন পক্ষ। চুক্তিকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিরোধ তো ছিলই, বিভাজন তৈরি হয়েছিল সেনাবাহিনীর মধ্যেও।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে, অর্থাৎ গত মাসে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বশিরের সমর্থকরা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করলে উত্তেজনা আরও বাড়ে। এরপর চলতি বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঐক্য গড়ে বেসামরিক সরকার ভেঙে দেয়ার দাবি তোলে। দাবি আদায়ে খারতুমের প্রেসিডেনসিয়াল প্যালেসের বাইরে অবস্থান ধর্মঘটও শুরু করে তারা।
এর ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে খারতুমসহ সুদানের অন্য শহরগুলোতে বিক্ষোভ করে বেসামরিক সরকারের সমর্থকরাও। সামরিক শাসনের বিরোধিতায় ওই বিক্ষোভে যোগ দেন কয়েকজন মন্ত্রীও।
১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করে আসছে সুদান। দেশটিতে অসংখ্যবার সফল অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান চেষ্টা হয়েছে।