সুদানে সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়টি নিশ্চিত না হতেই অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদকও আছেন বলে জানা গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কয়েকজন সেনাসদস্য প্রধানমন্ত্রীকে গৃহবন্দি করে রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই সেনাসদস্যদের পরিচয় জানা যায়নি।
এমন পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা রাজধানী খারতুমের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগে বিঘ্ন ঘটছে। শহরে শহরে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে। খারতুম বিমানবন্দর বন্ধ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, উত্তর আফ্রিকার দেশটির রাজধানী সোমবার অচল করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। সেনাবাহিনীর প্রধান কার্যালয়ের পাশ্ববর্তী একটি এলাকাতে প্রবেশ করতেও দেখা যায় তাদের। বন্দুকযুদ্ধের খবর শোনা গেলেও সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি সেনাবাহিনীর কোনো কর্মকর্তা। স্থানীয় সময় সোমবার ভোররাতে গ্রেপ্তারকাণ্ডের নেপথ্য ঘটনাও অস্পষ্ট।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সুদানের তথ্য মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ‘সশস্ত্র বাহিনী যৌথভাবে আটক অভিযান চালিয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের কোথায় বন্দি করে রাখা হয়েছে, তাও জানায়নি।’
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ওমদারমানে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান কার্যালয়েও অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী এবং কর্মীদের আটক করেছে।
তথ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সেনা অভ্যুত্থানে অনুমোদন দিতে প্রধানমন্ত্রী হামদককে চাপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং ‘বিপ্লব রুখে দিতে’ জনগণের প্রতি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ জারি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের সুদান ও দক্ষিণ সুদানবিষয়ক বিশেষ দূত রবার্ট ফেয়ারওয়েদার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে বলেছেন, বেসামরিক নেতাদের গ্রেপ্তার করে সুদানের সেনাবাহিনী ‘সুদানের জনগণ, বিপ্লবী ও পরিবর্তনকামীদের সঙ্গে প্রতারণা’ করেছে।
বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লীগ।
সুদানের প্রধান গণতন্ত্রপন্থি সংগঠন সমর্থকদের সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছে।
দুই বছর আগে ৩০ বছর দেশ শাসন করা সুদানের শাসক ওমর আল-বশির ক্ষমতাচ্যুত হন এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। তখন থেকেই সুদানের সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল।
কয়েক মাসের গণআন্দোলনের জেরে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বশির। এরপর থেকে সেনাবাহিনী ও বেসামরিক অন্তর্বর্তী সরকার যৌথভাবে দেশটি শাসন করে আসছে।
সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন সংগঠনের জোট ফোর্সেস ফর ফ্রিডম অ্যান্ড চেঞ্জের মধ্যে (এফএফসি) ক্ষমতা বণ্টনের চুক্তি হয়েছিল। উভয়পক্ষ মিলে একটি সার্বভৌম পরিষদ গঠন করেছিল। আরও এক বছর তাদের দেশ শাসনের কথা ছিল এবং নির্বাচনের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা পূর্ণ হস্তান্তরের কথা ছিল।
কিন্তু বরাবরই চুক্তিটির বিভিন্ন দিক নিয়ে ক্ষিপ্ত ছিল বিভিন্ন পক্ষ। চুক্তি নিয়ে অনেকগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিরোধ তো ছিলই, বিভাজন তৈরি হয়েছিল সেনাবাহিনীর মধ্যেও।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে, অর্থাৎ গত মাসে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বশিরের সমর্থকরা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করলে উত্তেজনা আরও বাড়ে।
১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করে আসছে সুদান। দেশটিতে অসংখ্যবার সফল অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান চেষ্টা হয়েছে।