ভারতের কেন্দ্রীয় সচিবালয় থেকে চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে আজ সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে দিল্লির কর্মিদপ্তরে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছিল দেশটির সরকার। রাজ্য সরকার ছাড়পত্র না দেয়ায় দিল্লি গেলেন না আলাপন।
মুখ্য সচিব আলাপনের চাকরিজীবন থেকে অবসরের দিন ছিল সোমবার। কিন্তু রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আলাপনের মতো দক্ষ প্রশাসকের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য রাজ্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে তিন মাস মেয়াদ বাড়ায় সরকার।
এরপর আচমকা ২৮ মে আলাপনের বদলির নির্দেশ আসে। বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষে আবেদন করা হয়। সোমবার সকাল পর্যন্ত তার কোনো জবাব আসেনি সরকারের কাছ থেকে।
এই পরিস্থিতিতে জনস্বার্থে আলাপনের বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাঁচ পাতার চিঠি দিয়েছেন পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চিঠিতে মমতা লেখেন, ‘রাজ্যে এখন কঠিন পরিস্থিতি চলছে। এর মধ্যে আলাপনের বদলির নির্দেশ। চার দিনের মধ্যে দুরকম নির্দেশ। নির্দেশ বদলের কারণ বুঝতে পারছি না। রাজ্যের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা না করে কেন্দ্রের একতরফা নির্দেশে আমি স্তম্ভিত ও বিস্মিত। এই নির্দেশ বেআইনি, নজিরবিহীন, অসাংবিধানিক। এই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হোক। আশা করছি, কলাইকুন্ডা বৈঠকের সঙ্গে আলাপনের বদলির কোনো যোগ নেই।’
২৮ মে কলাইকুন্ডার এয়ারবেসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে রিভিউ মিটিংয়ে ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনায় হাজির থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্য সচিব দুজনই।
প্রধানমন্ত্রীর হাতে রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন তুলে দিয়ে দেড় মিনিটের মধ্যে বিদায় নিয়ে চলে যান তারা। দেশজুড়ে যা নিয়ে বিজেপির নেতা মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মমতার ‘অসৌজন্য’ আচরণ উল্লেখ করে টুইট করেন। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই আসে আলাপনের বদলির চিঠি।
চিঠিতে মমতা লেখেন, ‘মাত্র দিন কয়েক দিন আগে মুখ্য সচিবের মেয়াদ বাড়িয়েছে কেন্দ্র। সোমবার মুখ্যসচিবের চাকরিজীবনের শেষ দিন হলেও আমাদের অনুরোধে তিন মাস তার চাকরি জীবনের মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার। কোভিড পরিস্থিতির কারণেই এই আবেদন ছিল আমাদের তরফে। কিন্তু কী এমন হল যে তাকে ডেকে নেয়া হচ্ছে?’
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে প্রতিহিংসামূলক বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাও।
কংগ্রেসের পক্ষে বিবৃতিতে দিয়ে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে।’
কেন্দ্রের এক শীর্ষ কর্তার বলছেন, ‘কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত পাঠিয়েছে তা একতরফা। ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (ক্যাডার) রুলস-র ৬(১) বিধি বলছে, একজন অফিসার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সম্মতিতে নিযুক্ত হতে পারে।
‘কেন্দ্র-রাজ্য মতের ফারাক হলে, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মুখ্য সচিব হিসেবে তিন মাস মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপর আবার বদলি, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই। কেন্দ্রের নির্দেশ একতরফাই।’
আলাপন দিল্লি না গেলেও নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।