ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে বুধবার সকালে ১৫৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। প্রায় ৯ ঘণ্টা পর শক্তি হারিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়।
প্রথম তিন ঘণ্টা শক্তিশালী ছিল ইয়াস। পরের ছয় ঘণ্টা দুর্বল হতে হতে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। ক্ষয়ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শুক্রবার আকাশপথে ইয়াসের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
বুধবার বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টা না গেলে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলা যাবে না। ক্ষতির পরিমাণ হিসেব হয়ে গেলে, তারপর আস্তে আস্তে পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে কারও অসুবিধা না হয়, আমরা দেখে নেব।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইমিডিয়েট, ৪৮ ঘণ্টা, যেটা বলছি, লোল্যান্ড যেখানে, দয়া করে ফিরবেন না। ত্রাণ শিবিরে বা যেখানে নিরাপদে আছেন, সেখানেই থাকুন।
কেননা অনেকে ভাবছেন আজকে ইয়াস হয়ে গেছে, চলো ফিরে যাই। দেখছেন তো বাঁধগুলো যেভাবে জলের স্রোতে ভেঙে নিয়ে চলে যাচ্ছে, তাতে একটার পর একটা গ্রাম ভেসে যাচ্ছে।
‘আপনাদের আমি রিকোয়েস্ট করব, আপনারা সব কথা শুনেছেন, কিন্তু নিজের জীবন সবচেয়ে বেশি দামি এবং আপনাদের সম্পত্তি নষ্ট হলে আমরা সবাই চেষ্টা করব শেয়ার করে নেয়ার।
‘আমরা যতটা পারব সাহায্য করব কিন্তু জীবন চলে গেলে জীবন পাওয়া যাবে না। কাজেই এটা একটু দেখে নেবেন দয়া করে। আর কলকাতাতে যেখানে যেখানে জল উঠেছে আজকে (বুধবার) দুপুর বেলায়। তারা সতর্ক থাকবেন। তারা যদি প্রয়োজন হয় আশেপাশের বড় বিল্ডিংয়ে আশ্রয় নেবেন।
‘সেখানে ক্লাব পুজো কমিটি ছেলেদের বলব, একটু সাহায্য করতে। আর পুলিশকে বলব যেখানে জল উঠেছে, সেখানে একটু মাইকে প্রচার করে দিতে।'
মুখ্যমন্ত্রী আধিকারিকদের বলেন, ‘বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। পরিশোধিত পানীয় জল সরবরাহ বজায় রাখতে হবে। বৃহস্পতিবার বানের জল ঢুকতে পারে। সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। যাতে কেউ বিদ্যুৎপৃষ্ট না হয় দেখতে হবে।
‘দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মেদিনীপুরে বহু জায়গা এবং কলকাতার কালীঘাট চেতলা রাসবিহারীতে জল উঠেছে।
‘নোনাজল ঢোকায় কৃষি ও মাছ চাষের ক্ষতি হয়েছে। ১৩৪ টি বাঁধ ভেঙে গেছে। মানুষ সমান উঁচু হয়ে উঠেছে। ১৫ লাখের বেশি মানুষকে রেস্কিউ সেন্টারে রাখা হয়েছে। ৩ লাখের বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
লবণাক্ত জমিতে ধান চাষ করতে হবে। নোনা জলের মাছ চাষ করতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের কাজে আরও জোর দিতে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। গাছ লাগিয়ে বাঁধকে শক্তিশালী করতে জোর দিতে হবে বলে, মুখ্যমন্ত্রী এদিনের ভার্চুয়াল বৈঠকে, আধিকারিকদের জানান।
এদিকে নবান্নে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগামী ২৮ মে দুদিনের সফরে আকাশপথে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাগর, হিঙ্গলগঞ্জ হয়ে দীঘা যাবেন । সেখানে ২৯ মে তিনি ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি পর্যালোচনা বৈঠক করবেন।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ১ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১০ কোটি টাকার ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।
এদিনের ভার্চুয়াল বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এ কথা জানান। পাথরপ্রতিমা, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, দীঘা, সাগর,রামনগর, নন্দীগ্রাম, দুই পরগনা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা না গেলে, মোট ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া যাবে না।