ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিধায়ক চন্দনা বাউরি। বিধায়ক হওয়ার আগে নির্দিষ্ট কোনো পেশায় ছিলেন না তিনি। সংসার সামলাতে মাঝে মাঝে রাজমিস্ত্রি স্বামীর সঙ্গে দিনমজুরি করেন।
রাজ্যে কিছুদিন আগে হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে জিতলেও আর্থিক সংকটের চিত্র এখনও খুব একটা বদলায়নি তার।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে জেতার পর তার সংসারে মানুষ বেড়েছে। বিজেপির বিধানসভা প্রার্থী হওয়ার পর রাজ্য পুলিশের এক নিরাপত্তারক্ষী পান তিনি। বিধায়ক হয়ে যাওয়ার পর থেকে বাঁকুড়ার কেলাই গ্রামে তার বাড়িতে থাকেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৪ জওয়ান।
বাড়তি পাঁচ নিরাপত্তারক্ষীকে নিজেই রান্না করে খাওয়াচ্ছেন এই বিধায়ক।
মাটির বাড়িতে চন্দনার সংসার। স্বামী শ্রাবণ বাউড়ি সরকারি সহযোগিতার জন্য আবেদন করলেও নামে ভুল থাকায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা আটকে যায়।
চন্দনা বলেন, ‘জওয়ানদের রাখার মতো ঘর তো আমাদের নেই। তার ওপর থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী তাদের নিজেদেরই রান্না আর খাওয়ার ব্যবস্থা করে নেওয়ার কথা। কিন্তু এখনও সেসব ব্যবস্থা হয়নি।
‘আমরা যা খাই তাই খাওয়াচ্ছি। ওরা রুটি পছন্দ করেন। কিন্তু আমাদের খাওয়া হচ্ছে ভাত আর মুড়ি।’
একই রকম চাপে কোচবিহারের তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতি রাভা রায়। বিধায়ক হওয়ার পর মালতির নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর চার জওয়ান পেয়েছেন।
মালতি জানান, আরেকটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে জওয়ানদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। জওয়ানদের জন্য আলাদা রান্নার গ্যাসের সংযোগ না হওয়া পর্যন্ত একসঙ্গেই চলছে খাওয়া-দাওয়া।
তিনি বলেন, ‘একটু চাপ হচ্ছে। তবে দলের নির্দেশও মানতে হবে। গ্রামে গেলে নিরাপত্তা রক্ষীসহ বিধায়ককে দেখে কর্মীরা মনে ভরসা পান।’
সোনামুখির বিধায়ক দিবাকর ঘরামিও একই রকম চাপে। মাঠে চাষ করেই সংসার চালান বাঁকুড়ার এই বিধায়ক।
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা দিবাকর বলেন, ‘আমার একটা দোকান ছিল। সেখানেই খুব কষ্ট করে জওয়ানরা থাকছেন। যৌথ পরিবারে আমাদের ১০ জন সদস্য। সেই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের একজন আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর চারজন যুক্ত হয়েছেন। ১৫ জনের খাওয়া-দাওয়া একসঙ্গেই চলছে। আমরা যা খাচ্ছি, তাই খাওয়াচ্ছি।’
দিবাকর অপেক্ষা করছেন, কবে থেকে বিধায়ক হিসেবে ভাতা পাওয়া শুরু হবে। কেন্দ্রীয় প্রকল্প কিষাণ সম্মান নিধির টাকারও অপেক্ষায় আছেন বিজেপির এ বিধায়ক।
প্রায় একই রকম অবস্থা মালদহের গাজোলের বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মনের।
বেসরকারি বিমা সংস্থার কর্মী চিন্ময় আপাতত ছুটিতে আছেন। বিধায়ক হওয়ার পর সেই কাজ করার সময় আর পাবেন কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন।
তাকেও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা চার জওয়ানের জন্য বাড়ি ভাড়া নিতে হয়েছে। যদিও এ খরচের জন্য পাশে পেয়েছেন স্থানীয় বিজেপি নেতাদের। খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন নিজেই।