করোনাভাইরাসের বিষণ্নতার মধ্যেই ঈদ বয়ে এনেছে আনন্দ ও উৎসব। ঈদের নামাজের মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে এই উৎসবের ধর্মীয় ও সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা।
করোনা পরিস্থিতিতে ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহগুলোতে এবারও নামাজ হয়নি। তবে বিভিন্ন মসজিদে জড়ো হয়ে মানুষ এই আনুষ্ঠানিকতার অংশ হয়েছেন।
দিনাজপুর
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ হিসেবে দাবি করা হয় দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানকে। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সেখানে এবার হয়নি জমায়েত।
করোনার কারণে এ নিয়ে টানা চারবার এই ঈদগাহ শূন্য।
জেলা প্রশাসক ও গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের ঈদগাহ মিনার কমিটির সভাপতি খালেদ মোহাম্মদ জাকী জানান, ঈদের নামাজে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ গোর-এ শহীদে লাখো মুসল্লির সমাগম হয়। তাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় এবারও ঈদুল আজহার জামাত আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের ঈদগাহ মিনার কর্তৃপক্ষ জানায়, সবশেষ ২০১৯ সালের ১২ আগস্ট হয়ে যাওয়া ঈদুল আজহার নামাজে প্রায় ৪ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছিলেন।
বাগেরহাট
বাগেরহাটে ঈদের নামাজ হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ষাটগম্বুজ মসজিদে। সেখানে প্রথম জামাতটি হয় বুধবার সকাল ৭টায়। সকাল ৭.৪৫ মিনিটে দ্বিতীয় ও ৮.৩০ মিনিটে তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মুসল্লিদের নিরাপত্তায় মসজিদের সামনে পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন।
এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আজিজুল রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলামসহ প্রশাসনের অনেকে।
এখানে প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বাগেরহাট আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। দ্বিতীয়টিতে ছিলেন ষাটগম্বুজ মসজিদের ইমাম মাওলনা মো. হেলাল উদ্দিন ও তৃতীয়টিতে সিংগাই মসজিদের ইমাম মাওলানা শেখ মোজাহিদুল ইসলাম।
জামাতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশ নিতে দেখা গেছে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা একে অন্যের সঙ্গে কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও কাউকে কোলাকুলি করতে দেখা যায়নি।
ডিসি আজিজুল বলেন, করোনার মধ্যে সবাই যেন সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারে, সেজন্য একাধিক জামাতের আয়োজন করা হয়েছিল। নামাজ শেষে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
সিলেট
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় সিলেটের শাহী ঈদগাহে ঈদের জামাত না হলেও নামাজ হয়েছে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার মসজিদে।
এখানে বরাবরই সকাল ৮টায় একটিই ঈদের জামাত হয়। এবারও হয়নি এর ব্যাতিক্রম। হাজারো মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জামাতে অংশ নেন। দরগাহ মসজিদের ইমাম হাফিজ মাওলানা আসজাদ আহমদ ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশ ও জাতির মঙ্গলের পাশাপাশি করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করেন।
এখানে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অংশ নেয়ার কথা থাকলেও মঙ্গলবার রাতে শ্বশুড়ের মৃত্যুতে তিনি শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহে চলে যান।
সিলেট নগরীর বন্দরবাজারের ঐতিহ্যবাহী কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদে ৩টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সকাল ৭টায় প্রথম, ৮টায় দ্বিতীয় ও ৯টায় তৃতীয় জামাত হয়। প্রতিটিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশ নেন মুসল্লীরা।
তিনটি জামাত হয় বন্দরবাজারের কালেক্টরেট জামে মসজিদেও। সেখানে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ শাহ আলম। এখানে প্রথম জামাতে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম অংশ নেন। এছাড়া নগরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতেও ঈদ জামাত হয়।
বরিশাল
দেশ ও জাতির অগ্রগতি, মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও করোনা থেকে মুক্তি কামনার মধ্য দিয়ে বরিশালের মসজিদে মসজিদে হয়ে গেছে ঈদের নামাজ।
জেলার বেশিরভাগ মসজিদে জামাত হয়েছে সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত। প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সর্বোচ্চ ২টি করে জামাত হয়েছে। সকাল ৮টায় বরিশাল কালেক্টরেট জামে মসজিদের ঈদ জামাতে অংশ নেয় বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল ও জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। জামাতে ঈমামতি করেন মসজিদের পেশ হাফেজ মাও আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ ছাড়া বরিশালের চরমোনাইয়ে সকাল ৮টায় জেলার সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতে ইমামতি করেন চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিম।
ময়মনসিংহ
জেলায় ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৮টায় মহানগরীর কেন্দ্রীয় আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাস্ক পরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেছেন।
গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাসসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নামাজে অংশ নেন। এরপর একে একে অন্যান্য মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পেতে নামাজ শেষে দোয়া করা হয় সব মসজিদেই। করোনায় আক্রান্ত ও মৃতদের জন্যেও করা হয় দোয়া।
নাটোর
স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ঈদের জামাত হয়েছে নাটোরে মসজিদগুলোতে। প্রথম নামাজটি হয় শহরের কান্দিভিটা জামে মসজিদে সকাল ৭টায়। সেখানে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম গোলাম মোস্তফা। নামাজ পড়তে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল ইসলামসহ প্রশাসনের অনেকে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাদিম সারোয়ার নামাজ পড়েন শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদে।
সকালে জেলার সিংড়া উপজেলার গোডাউনপাড়া মসজিদে ডাক ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ঈদের নামাজ আদায় করেন।