‘এইডা আমি খামু না, আমার দুই মাইয়ারে খাওয়ামু। ঈদের দিন মাইয়া দুইডারে সক্কালে রাস্তার ধরের হোটেল থেইক্যা আলু ভার্তা দিয়ে ভাত খাওয়াইছি। এখন গিয়া পোলাও খাওয়ামু। হেরা (মেয়েরা) অনেক খুশি হইবে। আমি তো ওগোরে ভালো কিছু খাওয়াইতে পারি না।’
বিদ্যানন্দের দেয়া ঈদের বিশেষ খাবার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছিলেন বেলাল মিয়া। তিনি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। হাতে একটা ছড়ি নিয়ে কাওরান বাজারে ভিক্ষা করাই যার পেশা।
দুই মেয়ে আর স্ত্রী নিয়েই বেলালের সংসার। থাকের কাওরান বাজারে ফুটপাতে। আজ এখানে তো কাল ওখানে। যেখানে জাইগা পান সেখানেই ঘুমান পরিবার নিয়ে। বেলালের ভিক্ষা আর তার স্ত্রী কাওরান বাজারে সবজি কুড়িয়ে যা পান তা দিয়েই চলে সংসার।
নিউজবাংলাকে বেলাল মিয়া বলেন, ‘ভাইরে কতদিন যে এই রহম খাবার খাই না কইতে পারুম না, কিন্তু মাইয়া গো (মেয়ে) রাইখা কী আমি এই খাবার খাইতে পারি? আমি ওগোরে দিমু। ওরা খুব খুশি হইব।’
শুধু বেলাল মিয়াই নন, ঈদের দিন বিকেল চারটায় কাওরান বাজারের লা ভিঞ্চি হোটেলের সামনে এরকম ৩০০ জন ছিন্নমূল মানুষদের জন্য ছিল বিদ্যানন্দের বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা। তাদের এ কার্যক্রম চলবে আরও দুই দিন। তাদের খাবারের মেনুতে ছিল- পোলাও, মুরগি, সালাদ আর কোমল পানিও।
ঈদ উপলক্ষে দুস্থদের মধ্যে বিদ্যানন্দের খাবার বিতরণ। ছবি: নিউজবাংলা
বিদ্যানন্দের এক টাকার আহার প্রজেক্ট থেকে ১ টাকার বিনিময়ে এই খাবার দেয়া হলেও ঈদ উপলক্ষে তিন দিন ছিন্নমূল মানুষদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হচ্ছে না।
বিদ্যানন্দের খাবার নিতে আসা ঝুনা খাতুন বলেন, ‘কারওয়ান বাজার কাজ কাম করি ভাই। এইহানেই থাকি। ঘর নাই। ঈদের দিন সকালে চাইড্ডা খাইছি হোডেলে। এহন এইহানে বালো খাবার দিব আনন্দ লাগতাছে। এরা রোজার মধ্যেও খাওন দিছে। আইজ নাকি এস্পিসাল (বিশেষ) খাওন দিবো। এহন ঈদ ঈদ মনে হইতাছে।’
খাবার নিতে আসা রেহানা আক্তার নামে আরেকজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কী লাটসাব? ঈদে খাবার পামু কই? এরা ঈদের মজার খাওয়া দেয়। এর আগেও দিছে। আমগোর মতো গরীবেরে এরা দেহে। অনন্দ হয়। মজা করি এইহানে খাওন নিতে আইসা। এই যে খাওন পাইলাম রাতেও খাইতে পারুম। কেনা লাগবো না। এইডাই তো আমাগো ঈদ।’
আসহায় মানুষদের মাঝে খাবার বিতরণে ব্যস্ত সময় পার করছে বিদ্যানন্দের সেচ্ছাসেবক সোহরাব হোসেন বিল্পব। ঈদের নিজের পরিবারের সঙ্গে না থেকে তিনি বেছে নিয়েছেন অসহায় মানুষদের সাথে ঈদ কাটানোর।
নিউজ বাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা যারা বিদ্যানন্দে কাজ করি তাদের সবারই পরিবার দুইটা। নিজের পরিবার একটা আর একটা পরিবার হলো এই অসহায় মানুষেরা। আমাদের একটু পরিশ্রমের কারণে আজ এতগুলো মানুষ ভালো খাবার খেয়ে তৃপ্তি হাসি দিচ্ছে। এটা অনেক বড় ব্যাপার। এই হাসির জন্যই আমরা কাজ করি।’
সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আজ আমরা কাওরান বাজারে তিনশত প্যাকেট, মিরপুরে তিনশত প্যাকেট আর বিচ্ছিন্নভাবে আরও একশত প্যাকেটসহ মোট সাতশত প্যাকেট খাবার বিতরণ করব। এভাবে আরও দুইদিন আমরা ঈদের বিশেষ খাবার বিতরণ চলবে। এ ছাড়া, এই তিনদিন করোনায় মৃত পরিবারের মধ্যে ৫০টি প্যাকেট বিশেষ খাবার বিতরণ করা হবে।’