এক মাস রোজা শেষে এসেছে ঈদ। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছরও সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে ভিন্ন এক বাস্তবতায়।
করোনা সংক্রমণের কারণে এবারের ঈদও মোড়ানো বিধিনিষেধে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রাণ জেগেছে ঈদ আনন্দে। ঈদের চাঁদ উঁকি দিতেই শহরের অলিগলি, পাড়ামহল্লা মেতে উঠেছে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানে।
গত বছরের মতো এবারও ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজ আদায়ে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কোলাকুলি ও হাত মেলানোতেও।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখানে পর্যায়ক্রমে হবে পাঁচটি ঈদ জামাত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, বায়তুল মোকাররমে প্রথম জামাত হবে সকাল ৭টায়। দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত হবে বেলা পৌনে ১১টায়।
বৃষ্টিতে ভিজতে পারে ঈদের সকাল। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, ঈদের সকাল ভিজতে পারে বৃষ্টিতে
ঈদে স্বাভাবিক বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের যে উপস্থিতি দেখা যায় তা এ বছরও দেখা যাবে না। শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানাসহ বেশির ভাগ বিনোদন কেন্দ্রই লকডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা হয়েছে সিনেমা হল।
গত বছরের মতো এবারও বিধিনিষেধের মধ্যে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে হবে নগরবাসীকে। ঈদ সামনে রেখে স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো কয়েক দিনব্যাপী নানা আয়োজন সম্প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে এরই মধ্যে দেশবাসীর উদ্দেশে পৃথক পৃথক শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের শুভেচ্ছাবার্তায় উঠে এসেছে করোনাভাইরাস মহামারি প্রসঙ্গ।
দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘এ বছর ঈদুল ফিতর এমন একটি সময়ে উদযাপিত হচ্ছে, যখন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত। করোনা মহামারির কারণে জীবন ও জীবিকা দুটোই আজ হুমকির মুখে।
দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা ও সংযম পালনের পর অপার খুশি আর আনন্দের বারতা নিয়ে আমাদের মাঝে আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। দিনটি বড়ই আনন্দের ও খুশির।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঈদ যেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির উপলক্ষ না হয় সে জন্য জনগণের সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে আনন্দঘন পরিবেশে আরও ঈদ করা যাবে।
ঈদুল ফিতরের আগের সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রায় ১৬ মিনিটের এ ভাষণের একটি বড় অংশ জুড়েই করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে এবারও আমাদের ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হচ্ছে। আমরা ঈদ উদযাপন করব, তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
‘কোনোভাবেই এই ঈদ উদযাপন যাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির উপলক্ষ হয়ে না ওঠে, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’
লকডাউনের কারণে আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও শহর থেকে ঘরমুখী মানুষ বাধা মানেননি। যে যার মতো করে বাড়ি ফিরেছেন। বিশেষ করে ফেরিঘাটে হাজার হাজার মানুষের জড়ো হয়ে নদী পার হওয়ার প্রবণতায় করোনার সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
শিমুলিয়া ফেরিঘাটে ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ছবি: নিউজবাংলা
পরিস্থিতি নিয়ে স্পষ্টত উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী। সবার উপরে মানুষের জীবন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকলে আসছে বছর আবার আমরা আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারব। আসুন, আমরা সবাই যে যেখানে আছি সেখান থেকেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করি।’
ঈদ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
দেশে ১৩ এপ্রিল রজমান মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন থেকে শুরু হয় রোজা।