বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছেলেডা কানতিছে, মুবাইল করলিই কয় আব্বা কহন আসপা

  •    
  • ১৩ মে, ২০২১ ১৬:৪৫

জরুরি সেবাখাতসহ কয়েকটি পেশার মানুষের ঈদের দিন কাটবে বছরের আর সব কর্মব্যস্ত দিনের মতোই। এর মধ্যে কিছু মানুষের ঈদের দিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগও নেই। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকায় বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাহারায় নিয়োজিতদের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা।

রাত পোহালেই ঈদ উদযাপন দেশজুড়ে। ঢাকার রাস্তা প্রায় ফাঁকা। দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকলেও বিভিন্নভাবে রাজধানী ছেড়েছেন অসংখ্য মানুষ।

করোনা মহামারির ভেতরে ঈদের খুশি এবার অনেকটা ম্লান হলেও বেশির ভাগ মানুষ ছুটির দিনগুলো কাটাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে, যে যার সাধ্যমতো মেতে উঠেছেন আনন্দে।

তবে জরুরি সেবাখাতসহ কয়েকটি পেশার মানুষের ঈদের দিনও কাটবে বছরের আর সব কর্মব্যস্ত দিনের মতোই। এর মধ্যে কিছু মানুষের ঈদের দিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগও নেই।

ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকায় বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাহারায় নিয়োজিত মানুষেরা কেমন আছেন, ঈদের দিন তাদের কেমন কাটবে- সেটি জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।

শুক্কুর আলীর বাড়ি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জে। ধানমন্ডিতে একটি মার্কেটে বেসরকারি নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করছেন। এই পেশায় আছেন ২৪ বছর ধরে। এতগুলো বছরে কর্মস্থল বদলেছে অনেক, তবে জীবন আটকে আছে প্রায় আগের জায়গাতেই।

এবার ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন কিনা, জানতে চাইলে শুক্কুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছুটি ফামু (পাব) কই। আমগো ছুটি দেয় না।’

ঈদে বেতন পেলেও এবার বোনাস পাচ্ছেন না জানিয়ে শুক্কুর বলেন, ‘১৬ ঘণ্টা ডিউটি করোন লাগে। ব্যাতন দেয় ১০ হাজার। এর মইদ্দে নিজে খাই-লই। বাকি যা রই যায়, ব্যাক বাইত্তে পাডাই। যা পাডাই হেইডা দিয়া কোনো রকম ওরা (পরিবার) চলে।’

ঈদের দিন খুশি নয়, বরং আরও হতাশা নিয়ে আসে শুক্কুরের জীবনে। বাষ্পরুদ্ধ গলায় তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় বাইত্তে যে কয়ডা ট্যাহা বেশি পাডামু, হেরম (তেমন) নসিব আমার হয় নাই বাবা। বাইত (বাড়িতে) দুই মাইয়া আছে, দুগা মাইয়াই ফোনে আমার সাথে কথা কইছে বাড়ি যাওনের লাই। আমি বুঝ দিয়া বইলছি, গাড়ি-ঘোড়া চলে না। আসমু কেমনে? হ্যাতেগো তো বুঝ দিই, কিন্তু আমার মন তো আর মাইনতো ছায়নো।’

শুক্কুর জানান, অভাবের কারণে ঈদে মেয়েদের কোনো নতুন পোশাক কিনে দিতে পারেননি, নিজেরও কোনো ভালো পাশোক নেই। ঈদের দিন নিজের সিকিউরিটির পোশাক পরেই পাহারার দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি বলেন, ‘অইন্য চাকরিতে ছুডি কাডাইলে ব্যাতন কাডে না, কিন্তু আমগোর ছুটি চাইলে ব্যাতন কাডি লই। অহন কন, কয়দিন ছুটি কাডাইলে পরের মাস ক্যামনে চলমু!’

রাজধানীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শিফটভিত্তিক দায়িত্বপালন করতে হয়। দিনে ১৬ ঘণ্টা যারা কাজ করেন তাদের বেতন ১০ হাজার টাকা। ১২ ঘণ্টা কাজ করলে বেতন দেয়া হয় আট হাজার টাকা। আর যারা আট ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন, তাদের দেয়া হয় পাঁচ হাজার টাকা।

ধানমন্ডিতে একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরির দায়িত্বপালন করছিলেন লুৎফর আলী। ঈদের দিন কীভাবে যাবে, প্রশ্ন করতেই ক্ষোভ ঝরে তার কণ্ঠে।

লুৎফর বলেন, ‘আমাগো থেকে খালি কাজ আদায় করে লিবে, কিছু দিবে লয়(না)। আমরা এত্ত ঘণ্টা ডিউটি করি, এইহানে পড়ি থাকি বউ-ছইল ফেলি। বছর শেষের একটা দিনে আমাগোরে হাতে বুনাস দিবার কারো মন চায় না।

‘হঠাৎ হঠাৎ এ ও দুই-একশ টাকা করি দেয়, এই যা। যাগো কাম করি তারা আমাগো দ্যাহে না। আবার কোনো সমস্যা হোক, কিছু চুরি হোক. সব দায় তহন আমাগো।’

আরেক নিরাপত্তাকর্মী নজরুল ইসলাম। বাড়ি মাগুরা জেলায় হলেও চার বছর ধরে ধানমন্ডির বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন।

ঈদের কথা তুলতেই নজরুল বলেন, ‘ছেলেডা বাড়ি কানতিছে। মুবাইল করলিই কয় আব্বা কহন (কখন) আসপা। ছেলেডা তো আর জানে না ওর আব্বা পাহারাদারের কাজ করে।’

তিনি বলেন, ‘শুনছি এবার বেতন দেবে, বুনাস দেবে না। যেই টাকা পায় তা দিয়ে খ্যায়ে পইরে একটা সুতোও কিনতি পাত্তিসিনে। বাড়ি যাওয়ার কতা যে বলতিছেন, বাড়িডা যাবো কী হাতে করে। ঈদ আমাগের জন্যি না। আমাগের সব দিনই সুমান।’

নজরুল ধরা গলায় বলেন, ‘ঈদির দিন সবাই পুলাও-গোস্ত খায়। আমরা তাও পারিনে। বাসা-বাড়িতে যারা চাকরি করে তারাও খানা খাদ্য পায়। কিন্তু আমরা যারা অফিস পাহারার চাকরি করি তাদের ভাইগ্যে ঈদির দিনে ভালো খাবারও জোটে না।’

একই আক্ষেপ মুকছেদ হোসেনের। বাড়ি বাগেরহাটে, ধানমন্ডির একটি বিপণিবিতানে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করছেন। নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাতে এবারের ঈদটাও তাকে ঢাকায় করতে হচ্ছে। ছুটি নিতে গেলে চাকরি থাকবে না, আর চাকরি না থাকলে সংসার চলবে না।

ভাগ্যকে দোষারোপ করে মুকছেদ বলেন, ‘এসব দেকতি দেকতি (দেখতে দেখতে) আমাদের সয়ে (সহ্য) গেছে ভাই। আমাগের ঈদ কাটে চাকরি কইরেই। মার্কেটে শুধু দেহি মানুষ কিনতিছে। চেয়ে চেয়ে দ্যাহা ছাড়া আমাগের কিছু করার নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর