বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিবর্ণ বৈশাখ

  •    
  • ১৪ এপ্রিল, ২০২১ ১৪:৪৪

করোনাভাইরাস নামক অণুজীবের কারণে এবারও পয়লা বৈশাখ যা কি না, বাঙালির সার্বজনীন উৎসব, তা পালিত হচ্ছে উৎসবহীনভাবে; গৃহবন্দি থেকে। বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই দেশে শুরু হলো ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। তাই এবার ভিড়ে নয়, নীড়েই পালিত হচ্ছে বর্ষবরণ উৎসব।

সড়ক সুনসান। কোথাও শোভাযাত্রা নেই, ঢাকঢোলের আওয়াজ নেই। মাঝে মাঝে কেবল পুলিশের বাঁশির শব্দ ভেসে আসছে।

ক্যাম্পাসগুলোও ফাঁকা। মেলা নেই, সাউন্ড সিস্টেম থেকে ভেসে আসা বাউল সুর নেই, উজ্জ্বল রঙের শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরা তরুণ-তরুণীদের ভিড়ও নেই। এ যেন এক অন্য পয়লা বৈশাখ। অন্য নববর্ষ।

অনলাইনে কেউ গাইছে হয়তো, কিন্তু জনারণ্য থেকে ভেসে আসছে না বৈশাখের সেই আগমনী গান- ‘এসো হে বৈশাখ’, কোথাও বাজছে না- ‘মেলায় যাইরে’। সুর নেই, রং নেই, প্রাণের উচ্ছ্বাস নেই- তবু আজ নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়।

আজ পূর্ব দিগন্তে যে সূর্য উদিত হয়েছে, তা প্রতিদিনকার মতো হলেও, সে নিয়ে এসেছে এক নতুন বার্তা। নতুন দিনের বার্তা। এ যে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়।

এক আজব অসুখ এসেছে পৃথিবীতে। যা কেড়ে নিয়েছে মানুষের সব উদযাপন আর উৎসব। রূদ্ধ করে দিয়েছে মানুষে মানুষে মিলনের পথ। করোনাভাইরাস নামক সেই অণুজীবের কারণে এবারও পয়লা বৈশাখ, যা কি না, বাঙালির সার্বজনীন উৎসব- তা পালিত হচ্ছে উৎসবহীনভাবে; গৃহবন্দি থেকে।

বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই দেশে শুরু হলো ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। তাই এবার ভিড়ে নয়, নীড়েই পালিত হচ্ছে বর্ষবরণ উৎসব।

হোক না ঘরবন্দি, তবু নতুন বছরের প্রথম দিনে নিজেকে তো সাজিয়ে নেয়া চাই। তাই ফুল দোকানে এসেছেন এই দুই তরুণী।

বাঙালির আত্মোপলব্ধি আর আত্মজাগরণের কবি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন- ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী, কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ!’

কিন্তু এবার প্রতিদিনকার ক্ষুদ্র মানুষের মহৎ হয়ে ওঠার আর সুযোগ কই! মানুষের সঙ্গে একত্র হওয়ার সুযোগই যে বন্ধ! মিলনের এই উৎসবের দিনেও শহরে মাইক লাগিয়ে প্রচারণা চলছে- ‘দূরত্ব বজায় রাখুন’, ‘জনসমাগম এড়িয়ে চলুন’।

গত বছরও এমন হয়েছিল। করোনার কারণে গত নববর্ষও কেটেছে ঘরে বসে, উৎসবহীনভাবে। গত বছর মনে হয়েছিল, এই বছরটা অন্তত বেঁচে থাকা যাক। আগামীবার উৎসব হবে। কিন্তু করোনা এমন ঘাঁটি গেড়েছে যে, তা আর সহজে যেতে চাচ্ছে না। এবার বরং আরও জেঁকে বসেছে। ফলে আজ থেকে ঘর হতে বের হওয়া বারণ।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু মনে করেন, আগে জীবন, পরে উৎসব। বেঁচে থাকলে অনেক উৎসব করা যাবে। আর বেঁচে থাকার জন্য এখন ঘরে থাকা প্রয়োজন।

উৎসবহীন পয়লা বৈশাখ দ্বিতীয়বার দেখছে সিলেটবাসী।

তিনি বলেন, প্রতিবছর আমরা বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের আয়োজন করি। এবার সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও করোনার কারণে উৎসব বন্ধ রেখেছি। আশা করছি, আগামী বছর করোনা চলে যাবে। আগামী বছর আরও বড় করে উৎসব হবে।

ঢাকায় যেমন ছায়ানট, তেমনি সিলেটে বর্ষবরণ উৎসবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে ‘আনন্দলোক’। রবীন্দ্রসংগীত চর্চাকারী এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতি বছর ‘শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ’ মাঠে আয়োজন করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। গত বছর থেকে যা বন্ধ রয়েছে।

এই উৎসব, আয়োজন নিয়ে রয়েছে মৌলবাদী গোষ্ঠীর অপপ্রচারও। তবে এগুলো বর্ষবরণ উৎসবে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন আনন্দলোকের প্রতিষ্ঠাতা রানা কুমার সিনহা। করোনা চলে গেলেই আরও উৎসবের আমেজে বর্ষবরণ করা হবে বলে মত তার।

রানা বলেন, এই যে দুই বছর ধরে উৎসব হচ্ছে না, এ জন্য সবার মনের ভেতরেই একটা খারাপ লাগা আছে। করোনা চলে গেলে মুক্ত হাওয়ায় উদযাপনের তাড়না আছে। এটা সব সম্প্রদায়ের সব বাঙালির উৎসব। এটা সব সময়ই থাকবে।

তিনি বলেন, কূপমণ্ডূকরা একটু বিরক্তির তৈরি করতে পারে হয়তো, তবে বর্ষবরণ উৎসব কখনও বন্ধ হবে না। কারণ, বেশির ভাগ বাঙালিই উৎসবপ্রিয়।

একই মত সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশুরও। তিনি বলেন, মৌলবাদের কারণে কখনওই বর্ষবরণ উৎসব বাধাগ্রস্ত হবে না। বর্ষবরণ নিয়ে বাঙালির উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা রয়েছে। তরুণরা এই উৎসবের শক্তি। তারাই এটি টিকিয়ে রাখবে। এ ক্ষেত্রে সংস্কৃতিকর্মীদেরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটে প্রথম নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন করে ছাত্র ইউনিয়ন, ১৯৬৮ সালে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে উদীচী প্রথমবারের মতো নববর্ষের আয়োজন করে।

আর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সিলেটে প্রথম বৈশাখী মেলার আয়োজন শুরু হয় ১৯৮৩ সাল থেকে। খেলাঘর ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর উদ্যোগে নগরের মীরাবাজারে মডেল হাই স্কুল প্রাঙ্গণে প্রথম বৈশাখী মেলার আয়োজন হতো।

রঙিন পোশাকে নর-নারী নয়, পয়লা বৈশাখে রাস্তায় কেবল পুলিশ সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে

এ ছাড়া প্রতিবছর সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজের কাছে সুরমা নদীর পাড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়।

সিলেটে ব্যাপক আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান প্রথম শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজে। ১৯৯৫ সালে ‘উচ্ছ্বাস’ নামে একটি সংগঠন প্রথমবারের মতো এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বর্ষবরণ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রতিবছর বর্ষবরণ হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও বর্ণাঢ্য আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করা হয়। এই দুই ক্যাম্পাসে তারুণ্যের ভিড় থাকে সর্বাধিক।

এ ছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনও নিজ নিজ উদ্যোগে বর্ষবরণের আয়োজন করে।

নতুন বছরের প্রথম দিনে দোকানে দোকানে হালখাতাও বাঙালির ঐতিহ্য। দোকানে আসা ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানো হয়, মিষ্টি খেয়ে পুরোনো ক্রেতারা পরিশোধ করে যান বকেয়া টাকা। তবে দুই বছর ধরে এই আয়োজনও বন্ধ রয়েছে।

নগরের জিন্দাবাজার এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী সঞ্জয় দে বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা হালখাতা করি। এটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। বছরে এই একটিবার নতুন-পুরোনো সব ক্রেতাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত হয়। কিন্তু দুই বছর ধরে করোনার কারণে এই আয়োজন হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়িকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর