ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার ১৩৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহিদ মিনার। যেসব প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার আছে তা বছরের পর বছর পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়।
শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শহিদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বলে জানান সুধিজনেরা।
বোয়ালমারী উপজেলায় ১০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৬টি, কলেজ ৬টি ও ১৭টি মাদরাসাসহ মোট ১৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এর মধ্যে ছয়টি কলেজ, ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৪টি মাদ্রাসা ও ৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাষা আন্দোলনের প্রতীক শহিদ মিনার থাকলেও ৭১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই। ফলে ৭১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় শুধুমাত্র জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে।
অপরদিকে আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২০টি, মাদ্রাসা সাতটি, কলেজ চারটি ও ৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট ১০৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এর মধ্যে চারটি কলেজ, ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার থাকলেও সাতটি মাদ্রাসার একটিতেও শহিদ মিনার নেই। মোট এ উপজেলায় ৬৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মিনার।
এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন থেকে প্রতি বছর বঞ্চিত থাকে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
আর যেসব প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার আছে; তার মধ্যে কিছু শহিদ মিনার বছরের পর বছর অযত্নে পড়ে থাকে। এসব শহিদ মিনারে কখনও গবাদিপশুর বিচরণ আবার কখনও বখাটেদের আড্ডাস্থলে পরিণত হতে দেখা গেছে।
বোয়ালমারী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার না থাকা সত্যিই দুঃখজনক। এ এলাকার শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানতে এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে শহিদ মিনার নির্মাণ করা জরুরি। উপজেলা পরিষদের আগামী মিটিংয়ে মিনার নির্মাণ সম্পর্কে আমি প্রস্তাব রাখব।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রীতিকণা বিশ্বাস বলেন, ‘আমার উপজেলায় ৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার রয়েছে।
‘শহিদ মিনার না থাকার বিষয়ে গত সপ্তাহে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। জেলা শিক্ষা স্যার বলেছেন দ্রুত বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে। আশা রাখছি এ বছরের মধ্যেই এ উপজেলার সবকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার স্থাপন হয়ে যাবে।’
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঝোটন চন্দ বলেন, ‘কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক নিজ উদ্যোগে অনেকটা শহিদ মিনার করেছেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এখনো শহিদ মিনার নির্মাণের কাজ চলছে।’