দেশের ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের মানবিক বিভাগের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে শুক্রবার। এদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে সাতজন ‘বিশেষ শিক্ষার্থী’ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও স্বপ্নজয়ের চেষ্টায় তারা। দৃষ্টি কিংবা অন্য শারীরিক অক্ষমতা উচ্চশিক্ষার লড়াইয়ে তাদের বাঁধা হতে পারেনি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তাদের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজন পরীক্ষার্থী অসুস্থ থাকায় তারাও মেডিক্যাল সেন্টারে পরীক্ষা দিয়েছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী সাতজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচজনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী৷ এরা হলেন- ইফফাত জাহান বিথী, আবু ফারেজ, হুমায়রা জাহান জিনিত, নুসরাত জাহান কাকলি ও হিজবুল্লাহ। তারা সবাই শ্রুতিলেখকের সহযোগিতায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। অপর দুই শিক্ষার্থী আসফিয়া তাসনীম রুহী এবং মো. মাসুদ শাহরিয়ার শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের একজনের হাত নেই এবং অপরজনের হাতে সমস্যা। তারাও শ্রুতিলেখকের সহায়তায় পরীক্ষা দিয়েছেন।
এদের মধ্যে ফেনী থেকে তিন ভাইয়ের সঙ্গে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছেন আসফিয়া তাসনীম রুহী। তিনি ফেনীর পরশুরাম ইসলিমা ডিগ্রি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন।
অদম্য এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি লিখতে অক্ষম। তা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমি সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছি। প্রশ্নের মান আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পেরেছি। পরীক্ষাও ভালো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার লোকপ্রশাসন বিষয় নিয়ে পড়ার ইচ্ছা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হলে আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হব।’
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকতা নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসা ইফফাত জাহান বিথী ছোটবেলা থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার স্বপ্ন বুনেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ইতিহাস বিষয়ে তার পড়াশোনা করার প্রবল ইচ্ছা। লক্ষ্য তার বিসিএস। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন তিনি।
শ্রুতিলেখকের মাধ্যমে তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ ও সর্বাত্মক সহযোগিতা করে দেয়ার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
পরীক্ষা শেষে আরেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান কাকলী বলেন, ‘পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফেনী থেকে এসেছি। পরীক্ষা ভালো হয়েছে। আমাদের জন্য আলাদা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সবকিছু ভালোই ছিল।’
আবু ফারাজ বলেন, ‘আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিরিয়াল আসছে, কিন্তু আমার পছন্দের সাবজেক্ট আইন আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। গুচ্ছে আজ পরীক্ষা দিলাম। অনেক ভালো পরীক্ষা হয়েছে। গুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ হয়, তাহলে আমি এখানেই ভর্তি হব।’
শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের উপ-প্রধান চিকিৎসক মিতা শবনম বলেন, ‘শারীরিক সমস্যাজনিত কারণে আবেদনের প্রেক্ষিতে তালিকা অনুসারে ছয়জনের জন্য আগে থেকেই শ্রুতিলেখকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। পরবর্তীতে পরীক্ষার সময় পেট ব্যথা, পা ব্যথা নিয়ে দুজন এবং হাত নেই এমন একজন পরীক্ষা দিতে আসে। তাদের জন্যও পরবর্তীতে শ্রুতিলেখকের ব্যবস্থা করা হয়। আমরা সবার পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নিয়েছি।’
এদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বিভিন্ন হল পরিদর্শনের পাশাপাশি মেডিক্যাল সেন্টারও পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে উপাচার্য বলেন, ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে মেডিক্যাল সেন্টারে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। তারা সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিয়েছে।’
এদিন ভর্তি পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র ও এর আওতায় থাকা উপ-কেন্দ্রগুলোতে (উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল গর্ভমেন্ট গার্লস হাই স্কুল ও ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ) মোট ১৯ হাজার ৭৭৩ জন পরীক্ষার্থীর আসন বিন্যাস করা হয়। তার মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে আসন ছিল ১২ হাজার ৩৫২ জন পরীক্ষার্থীর। ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে উপস্থিতির হার ছিল ৮৭.৫০ শতাংশ।