চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে এবার চার দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সংগঠনটি।
রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, ‘উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে প্রশাসনিক ভবনের সামনে চলমান প্রশাসনের নানা অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রম বিষয়ক সংবাদ প্রদর্শনী চলতে থাকবে।
‘পাশাপাশি আগামী ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এবং ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি ক্যাম্পাসে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ঘোষণা করছে।’
তবে পরীক্ষা এ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করে পরবর্তীতে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার ব্যাপারে শিক্ষক সমিতি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’
অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রমের কারণে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানামুখী বির্তকের জন্ম দিয়ে আসছেন।
‘তাদের নেতৃত্বাধীন এ প্রশাসন মহান বিজয় দিবস উদযাপনের ব্যানারে শহীদ মিনারের ছবি, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরিতে বঙ্গবন্ধু টানেলের নামে যুক্তরাষ্ট্রীয় টানেলের ছবি স্থাপন করে যেমন অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, তেমনি শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত অডিও কেলেঙ্কারিতে যুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে চরম লজ্জার মধ্যে নিপতিত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যয়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ব্যাখ্যা চেয়েছে। পরে জবাব সন্তোষজনক হয়নি উল্লেখ করে এ সকল অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে ইউজিসির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন প্রমাণ করে, বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির উত্থাপিত অনিয়মের অভিযোগসমূহ এবং তার ধারাবাহিকতায় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি মোটেও অমূলক নয়।
‘এই দুজন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য শিক্ষক সমিতি সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি, ৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনকে সমুন্নত রাখার এবং বিধি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার কথা আমরা বলে আসছি, কিন্তু উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার চেষ্টা করছেন। এর কারণে আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য সবচেয়ে বড় বাধা।’
উল্লেখ্য, আইন ও বাংলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবিতে গত ১৭ ডিসেম্বর উপাচার্যের কাছে যায় চবি শিক্ষক সমিতি। তাদের অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের লঙ্ঘন।
তবে ওই দিন তাদের দাবি না মানায় পরদিন থেকে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে টানা আন্দোলনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। টানা তিন দিন অবস্থান কর্মসূচি শেষে চতুর্থ দিন প্রতীকী গণঅনশন করেন তারা।
এরপর শীতকালীন ছুটি ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। গত ১৪ জানুয়ারি থেকে আবার লাগাতার কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সমিতি।