বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘গেস্টরুমের ভিডিও’ সন্দেহে সাংবাদিককে জাবি ছাত্রলীগের মারধর

  • প্রতিনিধি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ২১ আগস্ট, ২০২৩ ২০:১০

ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিক আসিফ আল মামুন বলেন, ‘আমি এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। মারধরে অভিযুক্তরা আমার জুনিয়র ব্যাচের হবে। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর তারা আরও বেশি মারধর করে। এসময় তারা 'সাংবাদিককে মারতে পেরেছি' বলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।

রোববার রাত ২টার দিকে হলের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম আসিফ আল মামুন। তিনি বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশে (ইউএনবি) কর্মরত।

মারধরের ঘটনায় জড়িত সবাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্বলন প্রোগ্রাম শেষে হলে ছাত্রলীগের ‘গেস্টরুম’ চলছিল। ৪৭ ব্যাচের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে ৪৮ এবং ৪৯তম ব্যাচের ‘গেস্টরুম’ চলছিল।

গেস্টরুম চলাকালে বাইরে থেকে কেউ ভিডিও করছে- এমন সন্দেহে নেতা-কর্মীরা দৌঁড়ে বের হয়। এসময় তারা ‘চোর চোর’ বলে ধাওয়া করায় হলে উৎসুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আসিফ হলের মাঠে নেমে এলে তাকে মারধর করা হয়। ‘সাংবাদিকরা গেস্টরুমে ভিডিও করতেই পারে’ এমন সন্দেহে তাকে মারধর করা হয় বলে মারধরের পরবর্তী নেতা-কর্মীদের আলোচনায় উঠে আসে।

হলের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, গেস্টরুম থেকে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী হলগেট থেকে একজনকে ধাওয়া করছে। অজ্ঞাত সেই ছেলে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এসময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এদিকে সেদিক দৌঁড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়।

গেস্টরুম চলাকালে বাইরে খেয়াল না রাখার জন্য ইতিহাস বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সারোয়ার শাকিলকে হলের গার্ডদের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায়। এসময় তারা সন্দেহভাজনকে না পেয়ে হল মাঠে সাংবাদিক আসিফেকেই মারধর করে।

সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে শনাক্ত করেছেন।

তারা হলেন- উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের আমিনুর সুমন ও নাঈম, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের হৃদয়, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শাফায়েত হোসেন তোহা, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মেহেদী হাসান, ইতিহাস বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সরোয়ার শাকিল, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের রিজওয়ান রাশেদ সোয়ান, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের ফয়জুল ইসলাম নিরব, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৌরভ পাল, পরিসংখ্যান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের তাওহিদ, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মাহীদ এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সীমান্ত। এছাড়াও ৪৭, ৪৮ ও ৪৯তম ব্যাচের আরও কয়েকজনকে অতিথি কক্ষ থেকে একসঙ্গে বের হতে দেখা যায়। তারা সবাই শাখা ছাত্রলীগের কর্মী এবং শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী।

ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিক আসিফ আল মামুন বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি দোকানে চা খাচ্ছিলাম। হলে মাঝেমধ্যেই সাইকেল বা বিভিন্ন জিনিস চুরির ঘটনা ঘটে। তাই হট্টগোল শুনে কৌতুহলবশত হলের মাঠে যাই। এসময় ধাওয়াকারীরা অন্ধকারে আমাকে বেধড়ক মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। নিজেকে হলের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও আমাকে মারধর করা হয়। তাদের মারধরে প্রথমেই আমার চশমা খুলে যায়। ফলে অন্ধকারে আমি কাউকে সেভাবে চিনতে পারিনি। মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করলে আমি দুই হাত দিয়ে মাথা রক্ষা করছিলাম। এখন হাতের আঙুল নাড়াতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। মারধরে অভিযুক্তরা আমার জুনিয়র ব্যাচের হবে। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর তারা আরও বেশি মারধর করে। এমনকি আমি গেস্টরুমের আশেপাশে ছিলাম কি না, ভিডিও করছিলাম কি না, এসব বিষয়ে তারা প্রশ্ন করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার শার্ট এবং জুতা ছিঁড়ে যায়। এসময় তারা 'সাংবাদিককে মারতে পেরেছি' বলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।’

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ওয়ার্ডেন ও ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. এজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আসিফের ঘটনায় আমি মর্মাহত। সিসিটিভি ফুটেজে কয়েকজনকে দৌঁড়ে যেতে দেখেছি। তবে তারা কোন প্রেক্ষিতে দৌঁড়ে যাচ্ছিল সেটি তদন্ত করে দেখতে হবে। তদন্ত করে সে অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিষয় জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ‘আমি শুনেছি গেস্টরুমে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক আলোচনা চলাকালে বাইরে থেকে বিনা অনুমতিতে ভিডিও করা হচ্ছিল। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা মারধর করেছে। ছাত্রলীগের কেউ মারধরের ঘটনায় জড়িত ছিল না।

‘তবে সিটিটিভি ফুটেজে যেসব ছাত্রলীগের কর্মীদের দেখা গেছে তারা যদি মারধর করেছে বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর