করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নেয়া হবে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসে এ তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, সে পদ্ধতিও জানালেন তিনি।
সেই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে যদি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে আগের পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং এবং অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে অথবা শুধু সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফলাফল দেয়া হবে। সেটি পরে জানানো হবে।
যেভাবে হবে মূল্যায়ন
এসএসসিতে ২৪টি ও এইচএসসিতে নৈর্বাচনিক বিষয়ে মোট ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে শিক্ষার্থীদের। তবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত এমন আবশ্যিক বিষয় ও চতুর্থ বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষার্থীদের কোনো অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে না। কেবল গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিন বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে।
এসএসসি ও সমমানের অ্যাসাইনমেন্ট ১৮ জুলাই থেকে দেয়া শুরু হবে। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ১২ সপ্তাহে ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। তারা প্রতি সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবে। এসএসসির ক্ষেত্রে প্রতিটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে মোট আটটি করে অ্যাসাইনমেন্ট করতে হবে। এর মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি সম্পন্ন করো হবে।
এইচএসসি ও সমমানের অ্যাসাইনমেন্ট ২৬ জুলাই শুরু হবে। ওই স্তরের শিক্ষার্থীদের ১৫ সপ্তাহে মোট ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। তাদেরও গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে মোট ছয়টি পত্রে (প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র) এই অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। প্রতি পত্রে পাঁচটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। তাদেরও সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। এভাবে তাদেরও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস সম্পন্ন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবারও গত বছরের মতো সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হবে। যেসব শিক্ষার্থীর পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত আছে তাদের এসব বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। যারা এসএসসি দেবে তাদের সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ক্ষেত্রে জেএসসি বিজ্ঞান বিষয়গুলোর সঙ্গে এসএসসির অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক বিজ্ঞান বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হবে। মানবিক বা কমার্সের বিষয়গুলোও কীভাবে মূল্যায়ন হবে সেটার বিস্তারিত স্কুলগুলোতে নির্দেশনা পাঠানো হবে।
পরীক্ষার সময় কমানো হবে
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ২৪-৩০টি অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে তিন ঘন্টার পরীক্ষা দেড় ঘণ্টায় হবে। আর ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে ৫০ নম্বরে।
তিনি আরও বলেন, তিন ঘণ্টার পরীক্ষা দেড় ঘণ্টায় নেয়া হবে। তাই কোনো শিক্ষার্থী যদি অ্যাসাইনমেন্টগুলো ভালোভাবে করে তবে পরীক্ষায় কোনো সমস্যা হবে না। আগে পরীক্ষায় যেমন ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ৮টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো। এখন সেই ১০টি প্রশ্নই থাকবে কিন্তু উত্তর দিতে হবে ৩টি প্রশ্নের। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অপশন বেড়ে যাবে। তাই পরীক্ষা দিতে সুবিধা হবে। মানবণ্টনও ১০০ নম্বরের জায়গায় ৫০ নম্বর করে দেয়া হবে। মূল্যায়নের সময় সেটাকে ১০০ নম্বরে কনভার্ট করে নেয়া হবে।
দেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় বন্ধ বাড়িয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত করা হয়েছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও এপ্রিলে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা শুরু হলেও এ বছর করোনার কারণে এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা এখনও নেয়া সম্ভব হয়নি। গত বছর এসএসসি পরীক্ষা নেয়া গেলেও এইচএসসিতে শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয় সরকার।
এর আগে সময় পিছিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি পরীক্ষা জুনে ও এইচএসসি পরীক্ষা আগস্টে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সে জন্য এসএসসির ৬০ দিন ও এইচএসসির ৮৪ দিন ক্লাস ধরে পরিমার্জিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসও প্রকাশ করেছিল শিক্ষা বোর্ড। হঠাৎ করে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এ ঘোষণার বাস্তবায়নও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।