ভাষা সৈনিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রার্থনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) যেন এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হয়। তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় এককালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিত ছিলো৷ এই নামে এবং গৌরবে ঢাবি যেনো আবার ফিরে পায় এটাই তার প্রত্যাশা।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তির ভার্চুয়াল আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। আলোচনা সভায় তিনি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ: ফিরে দেখা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রবন্ধে গাফফার চৌধুরী ভাষা আন্দোলনের সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ভাষা আন্দোলন রাজনৈতিক নেতারা শুরু করেনি, করেছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। ২১ ফেব্রুয়ারীতে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গা হবে এটির সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আগের রাতে ছাত্রদের গোপন বৈঠকে। স্থান ছিলো ফজলুল হক হলের সামনের পুকুর ঘাট৷ মিছিলে গুলিবর্ষণের পরে রফিকের লাশ দেখেই আমি আমার গানটা (আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো....) লিখি।
গাফফার চৌধুরী বলেন, সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসন আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই শাসকেরা নানা উৎপাত সৃষ্টি করেছিলেন। এই সময়ে ছাত্র ভর্তি এবং শিক্ষক নিয়োগে আগের নিয়ম নীতি অনুসরণ করা হয়নি৷ ফলে শিক্ষা ব্যবস্থাতেও অরাজকতা দেখা দিয়েছিলো৷ দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ফিরে আসার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজকতা দূর করার চেষ্টা শুরু হয়। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার আগের গৌরব ফিরে পেতে চলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাম্প্রদায়িক উদ্দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি উল্লেখ করে গাফফার চৌধুরী বলেন, পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপমহাদেশের একটি অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবাদী বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্ববঙ্গের অধিকাংশ মুসলমান শিক্ষার্থীরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও তখন শিক্ষকরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ছিলো। রমেশচন্দ্র মজুমদার দীর্ঘ সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। সুতরাং এই বিশ্ববিদ্যালয় সাম্প্রদায়িক উদ্দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল প্রবাদের সঙ্গে আমি একমত নই।
আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অর্জন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ৷ আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী। আমরা জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই ডিগ্রির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরও গৌরবান্বিত হবে৷ আজকের এই গৌরবময় দিনে আমাদের অঙ্গিকার হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালকে শিক্ষায়, গবেষণায়, এবং পাঠদানে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্বে এমন বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা জানি না, যে বিশ্ববিদ্যালয় গণহত্যার শিকার হয়েছিলো৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রান্তর এবং স্থাপনা আক্রমণের শিকার হয়েছে। স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করে একটি জাতি-রাষ্ট্র জন্ম দেয়া, এটিও অন্য কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। আমরা ধারণা করি, এই দুটো মানদন্ডে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান স্বতন্ত্র ৷
উপাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হবে সে প্রয়াস আমরা রেখেছি। আমাদের কর্মপ্রয়াস অব্যাহত আছে৷ আশা করি আপনাদের সবার প্রত্যাশা মতো পরবর্তী পাঁচ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন অবস্থানে পৌঁছাবে সেটি দেখে আপনারা সবাই খুব শান্তি পাবেন।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়াসহ অনেকে।