স্বশরীরে পরীক্ষা দিতে ঢাকায় এসে লকডাউনে আটকে পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের পরিবহন সেবা পেতে আবেদন করতে বলেছেন সহ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ। শিক্ষার্থীদের লিখিত আবেদন পেলে বাস সেবা দিতে উপাচার্য বরাবর সুপারিশ করবেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন তিনি।
তবে লকডাউনে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দেয়া ধারণায়ও যায় না বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসে ঢাকায় আটকে পড়া পরীক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রশ্নটা কখনও শুনিনি। এটি কী বিষয়ে যে বলতেছ আমাদের ধারণায়ও যায় না। কারণ আমাদের সবার জানা আছে সামনের ১ তারিখ থেকে শাটডাউন।’
পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা আগামী ৮ জুলাই থেকে স্বশরীরে হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ইনস্টিটিউট। অনলাইনে এসব পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হলেও আজ সেটিও বাতিল করা হয়। বিধিনিষেধ শুরু হওয়ায় বাড়ি ফিরে যেতে বিপাকে পড়েছেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি খুবই হতাশাজনক। স্বশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলে আমাদের ঢাকায় আনা হয়েছে। আমরা টাকা খরচ করে বাসা ভাড়াও নিয়েছি। এখন বলা হচ্ছে পরীক্ষা হবে না। স্বশরীরে পরীক্ষা নেয়ার কথা না বললে আমরা ঢাকায়ও আসতাম না। জবাবদিহিতা না থাকায় প্রশাসন আমাদের সাথে যা ইচ্ছা তা করে যাচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের যারা ঢাকায় আটকে পড়েছে তাদের বাস সেবা দিলে আমাদের ভোগান্তি কিছুটা লাঘব হবে।
ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের কোর্স অর্ডিনেটর অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি আসলেই দুঃখজনক। আমার সঙ্গে কথা বলেই তারা বাসা ভাড়া নিয়েছে। করোনা বেড়ে যাওয়াতে আমাদেরও আসলে কিছু করার নেই। এ পরিস্থিতিতে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।’
শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফিরে যেতে পরিবহন সেবা দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো ছাত্ররা এ বিষয়ে আবেদন করেনি। তারা বিক্ষিপ্তভাবে বলেছিল। শিক্ষার্থীরা যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে আমি তাদের বলেছি, তোমরা ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলো। তারা মাননীয় উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলুক সেক্ষেত্রে হয়ত কোনো একটা সুযোগ হতে পারে।’
বাস সেবা পেতে ছাত্র নেতৃবৃন্দের দ্বারস্থ হতে হবে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই মিলে বললেই তো আমরা বুঝব যে, এটি একটি বড় সমস্যা। যখনই দেখা যাবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এ দাবির সঙ্গে একমত তখনই কর্তৃপক্ষ একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার চিন্তা ভাবনা করে।’
ইনস্টিটিউটের মতে, জুলাই মাসে স্বশরীরে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের ঢাকায় আনে উর্দু, ইসলামিক স্টাডিজ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসহ আরও বেশ কয়েকটি বিভাগ-ইনস্টিটিউট।
এসব বিভাগও লকডাউন শুরু হলে স্বশরীরে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এ অবস্থায় বিধিনিষেধ শুরু হওয়ায় বাড়িতেও ফিরে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। পরের মাসের বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহনে আমাদের বাড়ি পৌঁছিয়ে দিলে তাদের নতুন মাসের বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে হতো না। তারা নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পারতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বশরীরে পরীক্ষা হবে শুনে আমি ঢাকায় আসি গত ১৭ তারিখ। বাড়ি থেকে আসতেই খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকার মতো। এখন আবার আগামী মাসের বাসা ভাড়া দিতে হবে পাঁচ হাজার৷
‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। একেক সময় একেক কথা বলা হচ্ছে যা আসলে আমাদের সঙ্গে তামাশারই নামান্তর। এ অবস্থায় আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করলে আমাদের জন্য ভালো হয়।’
নাজমুল হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা শুনে আমরা ভর্তি হয়েছিলাম। এখন পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ভর্তি হওয়ার সময় করোনাকালে পরিবহন সেবা না পেয়েও আমাদের থেকে পরিবহন ফি নেয়া হয়েছিল। এখন আমাদের প্রয়োজনের সময় যদি পরিবহন সেবা দেয়া হয় তাহলে আমাদের ভোগান্তি কমবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিবহনের দায়িত্বে আমি। আটকে পড়া শিক্ষার্থীরা যদি বাড়ি যাওয়ার জন্য আবেদন করে তাহলে আমি সুপারিশ করে আবেদনটা উপাচার্য বরাবর পাঠিয়ে দিব। কারণ, করোনার সময়ে সব সিদ্ধান্ত উপাচার্যকে জানিয়েই করতে হয়। ছেলে-মেয়েবা বিপদে পড়ে গেছে। তাদের সহায়তার জন্য যা করা দরকার আমার দিক থেকে তা আমি করব।’
আবেদনের প্রক্রিয়া জানতে চাইলে অধ্যাপক সামাদ বলেন, 'শিক্ষার্থীরা আমার বরাবর বা সরাসরি উপাচার্য বরাবর এ বিষয়ে আবেদন করতে পারে। তবে যেসব বিভাগ শিক্ষার্থীদের ঢাকায় নিয়ে আসছে, সেসব বিভাগের পক্ষ থেকে যদি এটি বলা হয় সেটি সবচেয়ে ভালো হয়। তাহলে দাবি তোলার জন্য একত্রিত হওয়ার ঝামেলাটা ছেলে-মেয়েদের ওপর আর থাকে না।'