বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভাতা নয় বয়স ভিত্তিক কর্মই সমাধান

  • সম্পাদকীয়   
  • ২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১৮:৩৭

জীবনের প্রতিটি স্তরই মূল্যবান এবং চ্যলেঞ্জিং।

প্রতিটা পর্বেরই আলাদা আলাদা চাহিদা আলাদা প্রাপ্তি। কোনটার সাথে কোনটার সাযুজ্যের সূত্র থাকলেও মোটা দাগে ফাঁরাক বিস্তর।

বার্ধক্য বা প্রবীণকাল মূল্যবান তো বটেই, এটা শুধু ভাগ্যবানরাই ভোগ করতে পারেন। তারা বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করে বলে প্রাজ্ঞ হয়ে ওঠে প্রাকৃতিকভাবেই।

সমাজ এই প্রাজ্ঞতাকে গ্রহণ করে নানাভাবে।

প্রবীনের অভিজ্ঞতা জ্ঞান এবং নবীনের কর্মক্ষমতা একত্রে গড়ে তোলে সমৃদ্ধ সমাজ।

প্রবীনের অভিজ্ঞতা জ্ঞান কাজে লাগলেও একসময় প্রবীণ হয়ে পরে অবহেলিত।

নতুন প্রভাতের সূর্য আর সন্ধ্যায় অস্তমিত সূর্যের রূপ রঙ ভিন্ন আবহ ভিন্ন, প্রাকৃতিকভাবে এর আবেদন গুরুত্বপূর্ণ হলেও জীবনের সূর্য অস্তমিত সময়ে এর গুরুত্ব অবহেলিত। অথচ এটা হবার কথা নয়।

তবে সবার ক্ষেত্রে এই অবস্থাও ভিন্ন হয়।

দেশের জনসংখ্যার দর্শণীয় একটা অংশ প্রবীণ অতি প্রবীণ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যা প্রায় এক চতুর্থাংশ প্রবীণ। গড় আয়ুর বৃদ্ধির সাথে সাথে এই সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।

প্রবীণ জীবনের জন্য আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রবীণদের কোনো প্রস্তুতি থাকে না বা থাকার কোন উপায়ও থাকে না।

প্রবীণদের মধ্যে সবক্ষেত্রের অবস্থা অবস্থান এক নয়।

সরকারি চাকরিজীবিদের কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে পেনশন থাকে।

মোটামুটি কেউ কেউ বাড়িঘর তৈরি করে শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পরে। ধনী প্রবীণদের সঞ্চয় থাকে। নিম্নবিত্ত আর বিত্তহীন প্রবীনরাই সবচেয়ে দুর্বিষহ অবহেলিত প্রবীণ জীবনযাপন করে।

সরকারি ভাতা আছে বটে সেটা এতোই অপ্রতুল এবং সব সরকারের আমলেই সেটা ভোট বিবেচনায় ব্যবহৃত হতো। নানা অনিয়মে দুষ্ট ছিল। তবুও মন্দের ভালো যে ভাতা প্রাপ্ত প্রবীণরা পরিবারে কিছুটা সম্মান পেত।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলিত মোট জনগণ এখানে আলাদা করে প্রবীণদের কথা কি আর বলা যায়।

খাদ্য বস্তু বাসস্থান চিকিৎসার সংকটের সাথে বিনোদন সম্মান সংকট প্রবীণদের প্রয়োজন এটা তো জোর দিয়েই বলা যায়।

শুধুমাত্র সন্তানদের উপর নির্ভরশীল প্রবীণরা সংসার ও সমাজের জন্যও বোঝা হয়ে যায় কখনো কখনো।

বৃদ্ধাশম তৈরি হয়েছে সরকারি বেসরকারি এবং মানবিক বিবেচনায়।

কোন কোন বৃদ্ধাশ্রম সংগত কারণেই ব্যয়বহুল হতে হয়। স্বাস্থ্যকর খাবার উপযুক্ত চিকিৎসা এবং যথোপযুক্ত সেবার মূল্য এরসাথে ধরা থাকে।

এটা একমাত্র ধনীদের জন্য।

এগুলোর ব্যবসায়িকভাবেই তৈরি হয়েছে এবং যার প্রয়োজন সেই পরিবারই গ্রহণ করে। মূলকথা পরিবারের প্রবীণজন যেন সুস্থ ও সুন্দর সেবায় থাকে। তারাও নিশ্চিতভাবে দেশবিদেশ তাদের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করতে পারে।

মানবিকভাবে তৈরি বৃদ্ধাশ্রমগুলোর খাদ্য পোশাক চিকিৎসা বাসস্থান কিছুটা নিম্নমানের এটা বলাই বাহুল্য। তবুও আশ্রয় খাদ্য জুটছে প্রবীণদের এটাও গুরুত্বপূর্ণ।

গ্রামীণ প্রবীণদের জীবন অনেক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত। দুর্গম এলাকায় না আছে রাস্তাঘাট না আছে চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। নিজের জন্য তৈরি ঘরটাও অন্যদের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।

অধিক সন্তানের মুখেই আহার জোটানো প্রশ্নের সম্মুখীন সেখানে প্রবীণের চাহিদা পূরণ সাধ্যের বাইরে । তবু তো বাঁচে প্রবীণ চিকিৎসাবিহীন খাদ্যহীন আশ্রয়হীন। ধুঁকে ধুঁকে চলে জীবন।

যে কারণেই অপ্রতুল ভাতার একটা ঠেকা দেয়া আছে সেটা কার্যহীন।

প্রবীণদের জন্য ভাতা নয় তারা কাজ করতে চায় খাদ্যের জন্য চিকিৎসার জন্য সম্মানের জন্যও।

এমত অবস্থায় তাদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মের ব্যবস্থা গড়ে তাদের জীবন মান উন্নত করতে হবে।

তাদের জন্য উপযুক্ত কর্ম হলো গরু ছাগল হাঁস মুরগি লালন পালন শাক সবজি ফলানো, বাঁশবেতের কাজ দড়ি তৈরি সহ এমন অনেক কিছু তারা করতে পারে, এতে সমাজে পরিবারে তারা অন্যের গলগ্রহ হবে না। হারিয়ে যাওয়া কুটিরশিল্পের বিকাশ হতে পারে।

গ্রামীণ প্রবীণদের জন্য স্পেশাল খাবারের তেমন প্রয়োজন হয় না।

প্রখর সূর্যালোক থেকেই পায় ভিটামিন ডি, লতাপাতা কুড়িয়ে খাদ্য থেকেই শরীরের প্রয়োজনীয় মিনারেল ভিটামিন সংগ্রহ করে। নিজের পালা মুরগী থেকে সপ্তাহে দুই তিনটি ডিম মাসে একবার মুরগী ঝোলে ভাত এগুলো খেয়েই তারা বছরের পর বছর পারি দিচ্ছে জীবন তরী।

এর জন্য চাই সমন্বিত পরিকল্পনা। খুব বড় বাজেটও নয় সুষ্ঠ বাস্তবায়ন হলে গ্রামীণ প্রবীণদের জন্য সুবিধা জনক জীবন এবং দেশের জন্য সমৃদ্ধ সমাজ হতে পারে।

আমি গ্রামীণ প্রবীণদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছি শুধু সঠিক মমতাময় পরিকল্পনা এবং সুস্ঠ বাস্তবায়নের অভাবে এটা হচ্ছে না।

গ্রামে ভিক্ষা বৃত্তিকে এবং চেয়েচিন্তে চলাকে খুব ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ চোখে দেখা হয়।

অতি প্রবীণও ছাগলের জন্য ঘাস কাটে মুরগীর জন্য দানাপানির ব্যবস্থা করে।

গাছের অনেক ফল তারা পোলাপইনা খাবার বলে এড়িয়ে যায়, এটার প্রয়োজন বুঝতে পারে না।

এ বিষয়ে কাউন্সিলিং করালে কোন ফলের কোন কার্যকারিতা বোঝাতে হবে।

কর্মের হাত সম্মানের হাত। ভাতার চেয়ে জরুরি যথোপযুক্ত কর্ম।

‘হাসি আনন্দের সাথে আসুক বয়সের রেখা’

উইলিয়াম সেক্সপিয়ার যথার্থই বলেছেন।

কর্ম থাকলে তার কিছুটা আয় থাকবে তখন জীবনের অপ্রাপ্তিগুলো প্রকট আর প্রখর হয়ে ধরা দেবে না প্রবীণের কাছে, কঠিনকেও সহজ করে মেনে ও মনে নিতে চাইবে।

এ বিভাগের আরো খবর