আমরা সাধারণ জনগণ এক স্থান থেকে অন্যস্থানে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য চলাফেরা করতে পছন্দ করি, আর এই যোগাযোগের সহজ পথ হলো সড়কপথ তাই সড়ক পথে চলি। এই পথ চলার মাঝে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক হলে ঢাকা সিলেট রোড, এই সড়কটি মূলত বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়ক যা রাজধানী ঢাকা এবং সিলেট বিভাগের সিলেট শহর অতিক্রম করেও তামাবিলকে সংযুক্ত করেছে, এবং নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ এ জেলাগুলোকে সংযুক্ত করেছে। এটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক নামে পরিচিত।
যা বর্তমানে বেহাল অবস্থায় রয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দ্রুত সংস্কার ও যাতায়াতের দুর্ভোগ দূর করার দাবিতে সিলেটে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে গত এক সপ্তাহ ধরে একের পর এক কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়, টিভি টকশো ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা অব্যাহত আছ। একই দাবিতে সারাদেশে বিশেষ করে রাজধানী ও দেশের বাইরে অর্থাৎ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সিলেটের লোকজন প্রতিবাদী কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন এবং পালন করে চলেছেন একের পর এক নতুন নতুন কর্মসূচিব। সম্প্রতি ঢাকাস্থ সিলেটবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে পালিত হয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দীর্ঘ মানববন্ধন। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার জনগণ।
এই সড়কপথে চলাচলকারী জনগণের দুর্ভোগ এখন চরমে ও অবর্ননীয়, বিশেষ করে আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্ত পথটুকুতেই সবচেয়ে বড় বিপর্যয় পরিলক্ষিত হচ্ছে শাহাবাজপুর থেকে শাহাজাদপুর প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথই যেন গলার কাঁটা।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীত করার একটি প্রকল্প চলমান আছে, কিন্তু এর কাজ অত্যান্ত ধীরগতিতে চলছে। প্রকল্পটি ‘এশিয়ান হাইওয়ে’র আদলে তৈরি করা হচ্ছে, যা ঢাকা ও সিলেট বিভাগের মধ্যে আন্তঃনগর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে। প্রকল্পের একটি অংশ, সিলেট ও তামাবিলের মধ্যে বিদ্যমান জাতীয় মহাসড়ক N2 কে উন্নত করা হবে।
যদিও প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে অনেক আগে। এখনো পুরো কাজ শেষ হয়নি এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে এমন নিশ্চয়তাও নেই ফলে বেড়েছে দুর্ভোগ। এই পথে চলাচলকারীদের যেখানে ছয় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হতো তা এখন লাগছে ১৬-২২ ঘণ্টা, এটা যেন নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে এখন সাধারণ
বিষয়ে পরিনত হয়েছে। অথচ বিষয়টি দেখার কেউ নাই, সমস্যটি বলার কোনো মুখ নাই, দুঃখ দুর্দশা লাঘবের কোন সুব্যবস্থা বা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার জায়গাটা যে কোথায় তাও জানেনা এই এলাকার চলাচলকারী কোনো সাধারণ জনগণ।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের নাজুক অবস্থার অবসানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সিলেট বিভাগের আপামর স্থানীয় জনগণ ও সুশীল সমাজ একই সঙ্গে সিলেটের সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন সকলেই, সড়কপথের বেহাল অবস্থা হওয়ায় বিত্তশালীরা আকাশপথে ও সাধারণ মধ্যবিত্তরা রেলপথে চলাচল করছেন। সেই সুযোগে বেড়েছে টিকিট কালো হাজারীদের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, এই কালোবাজারি রোধের নামে আবার প্রশাসনের কোন কোন কর্তাব্যক্তি চাচ্ছেন ট্রেনে চলাচলের জন্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র বহন করতে হবে, একজনের এন আইডি দিয়ে অন্যজন ভ্রমণ করতে পারবেন না, এটা কতটুকু বাস্তবে পালিত হবে তা জানি না। যাত্রীদের কেউ কেউ আবার দাবি করেছেন অধিক ট্রেনের ব্যবস্থা করতে হবে, দাবি জোরদার করার লক্ষ্যে দলেবলে রেল লাইনের উপর শুয়ে পরে ট্রেন বন্ধ করে দেবার হুমকি দিয়ে চলেছেন এবং দুই এক জায়গায় চেষ্টাও করেছেন যার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে।, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হলেও এটি আজ মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে, জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।’
সড়কের বেহাল অবস্থার দ্রুত প্রতিকারের দাবি জানিয়ে গত ১২ অক্টোবর সিলেট নগরে এক ঘণ্টার প্রতীকী কর্মসূচি পালিত হয় ওইদিন নগরের দোকানপাট বন্ধ রাখা হয় এবং যানবাহন চলাচলে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালিত হয়।
বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। তবে উন্নয়নকাজের ধীরগতির কারণে বেহাল অবস্থা এই সড়কের একেবারেই চলাচলের ও অনুপোযোগী, মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে গর্তের কারণে যান চলাচলের কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই
গর্তে গাড়ি আটকে গিয়ে প্রায় সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। এতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চলাচলকারীদের। বেহাল ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক নিয়ে কত কথাই না হচ্ছে তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন এখানে যে কিছু হচ্ছে না তা নয় , হচ্ছে তা অত্যান্ত্য অপ্রতুল এবং মন্থর গতিতে।
আশুগঞ্জ থেকে সরাইল—মাত্র সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়কপথের জন্য পুরো সিলেট বিভাগ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। ভারতীয় ঠিকাদার সময়মতো কাজ শেষ করেনি। স্বাভাবিক মেরামতও বন্ধ। ফলে খানাখন্দের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের এই অংশে প্রতিদিনই যানজট, ভোগান্তি হচ্ছে।
এই ভোগান্তি লাঘবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরকে সময় বেঁধে দিয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়।
আর কাজ তদারকির জন্য গঠন করা হয়েছে ১২ সদস্যের একটি কমিটি।
সড়ক পরিবহন সমন্ত্রণালয়
সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সরাইলে স্থাপন করা হয়েছে ক্যাম্প অফিস। এই ক্যাম্প অফিসে প্রকৌশলীদের অবস্থান করে সার্বক্ষণিক মেরামত ও নির্মাণকাজ তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মহাসড়কের কাজ ও সবশেষ পরিস্থিতি দেখতে গত বুধবার আশুগঞ্জ যান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি নিজেও এই পথ পাড়ি দিয়েছেন মোটর সাইকেলে চড়ে, যার ছবি ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ও পত্রপত্রিকায়। মহাসড়কটির দূরবস্থা নিরসনে ‘যুদ্ধপরিস্থিতি’ বিবেচনায় নিয়ে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আমরাও আশা করবো শিগগিরই সংশ্লিষ্ট সকলের উদ্যোগে এই পথের চলাচলকারী সকলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। রাস্তা ভালো হবে, নিয়ম মতো স্বাচ্ছন্দ্যে সকল প্রকার যানবাহন চলবে সেই সাথে বর্তমানে চলাচলকারী আমাদের সকল শ্রেণির গাড়িচালক ভাইদেরকে একটু সচেতনতার সাথে গাড়ি চালানোর জন্য অনুরোধ করব, কারণ নিয়ম মেনে চললে এই পথে হয়তো এতটা কষ্ট করতে হবে না।