বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জাল টাকার থাবায় বাংলাদেশ

  • সম্পাদকীয়   
  • ৮ অক্টোবর, ২০২৫ ২৩:২৪

৫ আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবের সূত্র ধরে অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতার আসার পর বিশেষ একটি পতিত দল এবং এর দোসর প্রতিবেশী দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে দেশকে অস্থিতিশীল করতে ওঠে পড়ে লেগেছে। কিছুতেই সুবিধা করতে পারছে না বলে শেষ পর্যন্ত ২ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছে। আর এই চক্রান্ত কাতারভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে এই অপকর্মে সরাসরি মদদ দিচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশটির নিজস্ব মুদ্রা ছাপানোর ব্যবস্থায় নকল মুদ্রা তৈরি করে দিচ্ছে তারা। এছাড়া বাংলাদেশের টাকশালে ব্যবহৃত মেশিন ও যন্ত্রাংশ ওই দেশেই তৈরি। সেই মেশিনও এ কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে জাল মুদ্রায় ব্যবহৃত কাগজ এবং বাংলাদেশের নোটের কাগজ একই হওয়ায় সন্দেহ আরও বেড়েছে। বিশাল অঙ্কের জাল নোট তৈরিতে সন্দেহভাজনদের মধ্যে আছেন টাকশালে টাকা তৈরির সাবেক ডিজাইনারসহ ওই পতিত দলের কারিগররা। এরা গোয়েন্দাদের তত্ত্বাবধানে লম্বা সময় নিয়ে জাল টাকা ছাপিয়েছে। এ ধরনের নোট নিজস্ব গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের টাকশালে ছাপা নোটের আদলে নিখুতভাবে তৈরি কাগজের জাল টাকাগুলো পার্শ্ববর্তী দেশে তৈরির পর গোয়েন্দারা চোরাই পথে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এরপর বিভিন্ন হাত ঘুরে এগুলো চলে যাচ্ছে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। জাল নোট তৈরি এবং দেশে পাঠানো চক্রে গোয়েন্দাদের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশে পলাতক নেতার সরাসরি জড়িত। আর দুপক্ষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা চক্রটি নতুন একটি চেইন তৈরি করেছে; সেখানে ডিলার থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সবাই সেই দলের নীতিতে বিশ্বাসী। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জানান, প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার জাল নোট দেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগ সত্য হলে এটি অত্যন্ত উদ্বেগনজক। তবে এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের খুব বেশি কিছু করার নেই। সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। আর সাধারণ মানুষকেও অনেক সচেতন হতে হবে। তিনি আরও বলেন যে বর্তমানে পুরোনো টাকা বাজারে ছাড়া হচ্ছে না, কেবল বাজারে শুধু নতুন টাকা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, বিগত সরকার আমলের রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজটি করা হলে বস্তুত এটা ঠেকানো কারও পক্ষে সম্ভব না। কারণ বিগত ১৫ বছরে টাকশালে নিয়োগ পাওয়া বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীই ছিলেন সেই দলের আদর্শের অনুসারী। আর অনেক মেশিনারিজও নেওয়া হয়েছে পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশ থেকে। তিনি উল্লেখ করেন যে, টাকা ডিজাইনের কারিগর, যারা গত এক-দেড় বছরে অবসরে গেছেন; তাদের দ্রুত নজরদারির আওতায় আনা সমীচীন।

উল্লেখ্য যে, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মদদে বিভিন্ন রুটে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট প্রবেশ করানো হচ্ছে। এসব টাকার কাগজ আর বাংলাদেশের নোটে ব্যবহৃত কাগজ একই হওয়ার কারণে খালি চোখে, এমনকি ব্যাংকের যাচাই মেশিনেও এসব জাল নোট চিহ্নিত করা দুরূহ ব্যাপার। আর নিরাপত্তা সুতাসহ হলোগ্রাম প্রিন্ট সবই নিখুঁতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় দেশটির নিজস্ব মুদ্রা ছাপানোর ফ্যাসিলিটিতে এসব নোট প্রিন্ট করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত মাধ্যমে জানা গেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাত এক প্রকারের ধ্বংস করতে এবং বিভিন্ন নাশকতামূলক কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য এসব নকল নোট অত্যন্ত কম মূল্যে দেশের জাল নোট কারবারিদের কাছে বিশেষ ব্যবস্থায় পৌঁছে দিচ্ছেন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্ট সদস্যরা।

এ ব্যাপারে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, ব্যাপকভাবে জাল টাকার প্রবাহ অর্থনীতির কয়েকটি ক্ষেত্রে আঘাত হানবে। অনিয়ন্ত্রিত জাল টাকা অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি তৈরি করবে। এছাড়া জনগণের মধ্যে টাকার প্রতি আস্থা কমে গেলে নগদ গ্রহণ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় জটিলতা দেখা দেবে। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে যে, এ পর্যন্ত অনলাইন মাধ্যমে জাল নোট ব্যবসায়ীদের শতাধিক পেজ ও গ্রুপ শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন উপলক্ষে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। সে ক্ষেত্রে জাল নোট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। সঠিক টাকা চেনার বিভিন্ন নমুনা বা আলামত সংবলিত পোস্টার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবিলম্বে টানিয়ে দেওয়া জরুরি। ইতোমধ্যে জাল নোট চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জাল নোট বেচাকেনার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। চটকদার অফার দিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করছে সংঘবদ্ধ চক্রটি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সিক্রেট গ্রুপ তৈরি করে সেখানে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছে। এদিকে জাল টাকা বানানোর প্রসিকিউটর (জাল টাকা বানানো শেখানো হয়) নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে জাল নোটের ভিডিও আপলোড করা হয়েছে।

এটি সত্য যে, অর্থনীতির নিয়মানুযায়ী টাকা ছাপালে সেই টাকার বিপরীতে নিরাপত্তা ডিপোজিট থাকে। এ ক্ষেত্রে তা নেই। তাই অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন যে, একটি অর্থনীতি পঙ্গু করতে হলে অর্থনীতিকে অস্থির করে তুলতে জাল টাকাই যথেষ্ট। এতে অসংলগ্ন গ্যালোপিং মূল্যস্ফীতি হয়। অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। আর মানি মার্কেটের ওপর সাধারণ মানুষের বিশ্বাস থাকে না। দেশের সব অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন খাতের ওপর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে নেতিবাচক আঘাত হানে। আর এই টাকার পরিমাণ হিসাবের বাইরে থাকে বলে সঠিক পরিকল্পনা নেওয়াও সম্ভব হয় না। শুধু তাই নয় ব্যাষ্টিক অর্থনীতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতি উভয়ই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তা ছাড়া এই ভিত্তিহীন টাকার ভেলোসিটি বেশি থাকে বলে দ্রুত হাত থেকে হাতে ছড়িয়ে যায়। আর একটি কথা, সমগ্র কর্মকাণ্ড ক্যান্সরাস অর্থনীতির আওতার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। তখন আর কিছু করার থাকে না। তাই গোয়েন্দাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জোর তৎপর হতে হবে। শুধু তাই নয়, আপামর জনসাধারণকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থ উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থ বড় করে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি কথা না বললেই নয়; হয়তো অনেকেই ১৯৭৩-৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা অবহিত আছেন। আর এই দুর্ভিক্ষের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল প্রতিবেশী দেশের জাল নোট। পরিশেষে এই বলে ইতি টানছি যে, এই দুঃখী বাংলাদেশ আপনার, আমার এবং সবার। আর সেই মানসিকতা নিয়ে যেভাবে, যেখানে পারেন, এই জাল নোটকে রুখতে হবে। নতুবা এর পরিণতি হবে ভয়ানক।

লেখক: অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত।

এ বিভাগের আরো খবর