বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা চাই

  • সম্পাদকীয়   
  • ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২২:৪০

নির্বাচন সামনে এলে সবার আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর বিষয়টি জোরেসরে উত্তাপিত হয়। অবশ্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি করে? লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর ও কম নয়। নিজেদের হুন্ডা ও গুন্ডা বাহিনী সামলানোর দায়িত্ব নের্তৃবৃন্দের ওপর বর্তায়। দায়িত্বশীল নেতাদের আচারণবিধি ও বহুলাংশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করার জন্য উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। তাই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর ব্যাপারে দায়িত্বশীল নেতাদের ভূমিকা প্রতিনিয়ত গুরুত্ব পাচ্ছে।

বর্তমানে আওয়ামী লীগবিহীন মাঠে পরিকল্পিতভাবে জামায়াতে ইসলামী বিশাল শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। বিএনপিকে ঠেকাতে ইসলামী আন্দোলন, নেজামে ইসলামী পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি, এবি পার্টি এবং গন অধিকার পরিষদ নিয়ে জোট বাধার প্রক্রিয়া শুরু করছে।নির্বাচনের আগে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি ও তৎপরতা জানান দিতে এবার রাজপথে নামছে জামায়াত জোটবদ্ধ হয়ে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি এবং ফ্যাসিবাদের দূসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি সামনে রেখে মাঠে নামার ঘোষণার মাধ্যমে তিন দিনের কর্মসূচি এরমধ্যে এসেছে। জামায়াত রীতিমতো বিএনপিকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে চাচ্ছে। এনসিপি ও এবি পার্টি অবশ্য শেষ পর্যন্ত নিম্নকক্ষের নির্বাচনে পিআর দাবি থেকে কিছুটা পিছুটান হঠলেও জামায়াতের এদের নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নেই। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ছাত্র শিবিরের বিশাল বিজয়ে জামায়াতে ইসলামীর মাঝে আত্মবিশ্বাস বহুগুণ বেড়েছে। এরা এখন খুব ফুরফুরে মেজাজে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিজয়ে জামায়াতে ইসলামী এসিড টেস্ট হিসেবে দেখছে। জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে জনগণ তাদের পাশে থাকবে বলে এই ধারণাটি তাদের মনোবল অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে।

তারেক জিয়া বহুপূর্ব থেকে বলে আসছে আগামী সংসদ নির্বাচন এতটা সহজ নয় খুব কঠিন পরীক্ষা হবে। দেশের বৃহত্তম দল হিসেবে যাদের বিস্তৃতি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সংগঠন আছে বিএনপি ও বসে নেই। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় যারা তাদের সহযোগী ছিল বর্তমানে এদের নিয়েই এগুতে চাচ্ছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আরও আগে থেকেই আগামী সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচনোত্তর সরকার গঠনের ক্ষেত্রে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠনের অঙ্গীকার করেছে। তাছাড়া রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে তারেক জিয়ার ৩১ দফা কর্মসূচি সংস্কারের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে -- এ মনোভাব নিয়ে বিএনপি প্রচারণা চালাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে জনগন বিএনপির সেবা পাবে এই আত্মবিশ্বাস এদের ও কম নয়।

রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করে আসছে। প্রথম ধাপে দলগুলোর সাথে আলাদাভাবে বসেছিল কমিশন। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ৩০টি দল ও জোট নিয়ে ২৩ দিন সংলাপ হয়। দুই ধাপের সংলাপে ৮৪টি বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয় যার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি করেছে কমিশন। কিন্তু বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক না হওয়ায় ঝুলে আছে জুলাই সনদে স্বাক্ষর।

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কার্যকারিতা হচ্ছে না। বরং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের অনৈক্য ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। দলগুলোর বিশ্বাস -- প্রশাসনকে একটি দলের প্রতি ঝুঁকে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এ জন্য নির্বাচনের সময় কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব এমনকি কেন্দ্র দখলের মত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শ ঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ভরসা করা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারন নিয়ে ভাঙ্গা ও বাগের হাটে চরম অরাজকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা ভাঙ্গা থানা ও নির্বাচন অফিস আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। পুলিশ ভয়ে স্থানীয় মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে। পুলিশের এমন ব্যর্থতায় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে কিভাবে নির্ভরশীল হওয়া যায়?

চলতি বছরের শুরুর ৫ মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ১৪১টি মব হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫২ জনের প্রাণহানি হয়েছে আহত হয়েছে ২৮৯ জন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্যে তা উঠে এসেছে। পুলিশ কোথায় ছিল?

তৌহিদি জনতার ব্যানারে রাজবাড়ীতে নুরাল পাগলার মাজারে হামলা হয়েছে । কবর থেকে লাশ উঠিয়ে আগুন দিয়ে পুড়ানো-- সংহিতার জঘন্যতম কার্যক্রম দেশের জনগণকে দেখতে হলো। কিন্তু এ ঘটনায় পুলিশ বিন্দুমাত্র ভূমিকা রাখতে পারিনি। ১৮ আগস্ট কুমিল্লার হোমনায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে জনতা ৪টি মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে৷ সেখানেও পুলিশ প্রশাসন নির্বিকার। প্রশাসন এমন দুর্বল হওয়াতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা থেকে যাচ্ছে। সরকার আরো কঠোর হউক এটা ও জাতীর প্রত্যাশা।

কিন্তু মব যারা করছে এরাতো এদেশের ছাত্র জনতা ও যুব সমাজ। এরা কোনো না কোনো দলের সাথে সম্পৃক্ততা আছে। তা প্রতিহত করতে রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীলরা এগিয়ে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে শঙ্কা থাকলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নির্বাচন কিভাবে হবে। তাইত বিভিন্ন দলগুলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে মতবাদ ব্যক্ত করেছেন।

আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে সবচেয়ে বেশি শষ্কা প্রকাশ করে সোচ্চার জামায়াত। এ বিষয়ে দলটি সরকারের কাছে দাবি ও জানাচ্ছে। ৬ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে জামাতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ‘সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও সংস্থার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও প্রশাসনকে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের সব স্তরে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। ১০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের সাথে দেখা করে নির্বাচনের পূর্বে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আহবান জানান ডা: তাহের। তিনি আরও বলেন এ বিষয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে চাই।’

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে চরম অনিশ্চিয়তা কথা জানাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও। দলটির মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান খান বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং সবার জন্য সমান সুযোগ, তা দেখা যাচ্ছে না।কারণ সরকার একটি পক্ষের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। প্রশাসন ও মনে করছে একটি দল ক্ষমতায় যাবে। আর আমাদের ট্রাডিশন হলো - যারা ক্ষমতায় যাবে তাদের পক্ষে সবাই চলে যায়। এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে।

‘নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ‘এখনই কিসের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখন তো নির্বাচন কমিশন ভোটের মাঠেই নামেনি। তবে আমরা চাই একটি গুনগত ও মানসম্পন্ন নির্বাচন যাতে হয়, সে উদ্যেগ নেওয়া। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আশা-নিরাশায় মাঝে আছি। সরকার ইচ্ছা করলে সবকিছু করতে পারবে।’

তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে এখনই কিছু বলার সময় আসে নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা।আমরা সবাই এটাই চাই। আমরা আশা করি সরকার অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা করার করবে। কারণ ড.ইউনূস একটি ইতিহাস সেরা সুন্দর নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আর ও বলেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে যারা শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারাই তার কারণ ভালো বলতে পারবেন। এতে কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না সেটাও প্রশ্নের বিষয়।

তবে সরকার দৃঢ়ভাবে বলেছে, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট লাখের বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবে। সেনাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে ৮০ হাজারের বেশি। ড. ইউনূস বলেছেন আসন্ন নির্বাচনটি হবে ইতিহাস সেরা সুন্দর নির্বাচন। এ ধরনের একটি নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা অপরিহার্য। গত তিনটি নির্বাচনের জন্য দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। ফলে গণঅভ্যুত্থানের পর গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচনের ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই।

ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে দেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান অবশ্যই সম্ভব হবে বলে অনেকেরই অভিমত।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছা দরকার। যে কোন দলেই নির্বাচনের বেলায় পেশিশক্তির উত্থানকে নিজেদেরকে প্রতিহত করতে হবে। যারা পেশিশক্তি দেখাবে স্ব স্ব দলগুলো তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি । এ ব্যাপারে আমাদের ছাত্র/ যুব সমাজকে কাজে লাগানো যেতে পারে।যে ছাত্র/যুব সমাজ নিরাপদ সড়ক এর আন্দোলন ও স্বৈরাচার সরকার পতনের ব্যাপারে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছে,এরাই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে ভোট কেন্দ্রে নিরাপদ বেষ্টনী গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন নির্বাচনের এত আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে মন্তব্য করার যুক্তি নেই। নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলে বিষয়টি সামনে আসবে। তাছাড়া এসিড টেস্ট হিসেবে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ গ্রহনযোগ্যভাবে হয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অমনটি হবে সে আশাবাদ আমরা করতেই পারি।

লেখক : মিজানুর রহমান, কলামিস্ট ও সাবেক ব্যাংকার।

এ বিভাগের আরো খবর