বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তাফসীরে হিদায়াতুল কোরআন

  • সম্পাদকীয়   
  • ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২০:৫৮

সুরা সাজদাহ, পর্ব ৪

অনুবাদ

(১৮) যে ব্যক্তি মুমিন, সে কি ফাসিকের মতো হতে পারে? তারা সমান নয় । (১৯) যারা ঈমান আনে ও নেক কাজ করে, তাদের বাসস্থান হলো জান্নাত, তাদের নেক আমলের প্রতিদানমূলক আতিথেয়তা হিসেবে। (২০) আর যারা অপরাধ করে, তাদের বাসস্থান হলো জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বেরুতে চাইবে, তাদেরকে তাতে ঠেলে দেওয়া হবে, আর বলা হবে: তোমরা দোযখের মজা ভোগ করো, যাকে তোমরা অস্বীকার করতে। (২১) আমি তাদেরকে বড় শাস্তির পূর্বে (দুনিয়াতে) ছোট শাস্তির স্বাদ ভোগ করাবো, যেনো তারা (সুপথে) ফিরে আসে। (২২) তার চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে, যাকে তার প্রতিপালকের আয়াতের মাধ্যমে উপদেশ দেওয়া হয়, কিন্তু তারপরও সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব।

মর্ম ও শিক্ষা:

ইতোপূর্বে দুনিয়া ও আখিরাতে বাতিলপন্থি ও সত্যপন্থিদের অবস্থা আলাদা আলাদাভাবে বর্ণিত হয়েছে। তারপর এখানে বলা হয়েছে, বাতিলপন্থি ও সত্যপন্থিদের অবস্থা সমান নয়। তারা আখিরাত ও দুনিয়া উভয় স্থানে দুই রকম অবস্থার সম্মুখীন হবে। বাতিলপন্থিদের জন্য রয়েছে কঠিন পরিণতি। আর সত্যপন্থিদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।

মুমিন ও ফাসেক সমান নয়:

আয়াতে বলা হয়েছে, মুমিন আর ফাসেক কখনো সমান নয়। মুমিন তারা, যারা ঈমানের দাবী অনুযায়ী জীবন যাপন করে। ফাসেক হলো অবিশ্বাসী ও শিরককারী, যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে। কিয়ামতের দিন ফাসেকরা ভয় ও আতঙ্কে ছুটোছুটি করবে, সন্তান-সন্ততিও কাউকে উপকারে আসবে না। তারা দোযখের কঠিন শাস্তি পাবে এবং মুক্তি পেতে চাইবে, কিন্তু ফের জাহান্নামেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে। অন্যদিকে মুমিনরা কিয়ামতে শান্তিতে থাকবে এবং জান্নাতে সম্মানিত অতিথির মতো মর্যাদাপূর্ণভাবে গ্রহণ করা হবে।

মুমিনের বাসস্থান জান্নাত:

মুমিন ও ফাসেক সমান নয়, একথা বলার পর প্রথমে মুমিনদের অবস্থা বর্ণনা শুরু হয়েছে। মুমিনরা আল্লাহর দেয়া কল্যাণময় জীবনাদর্শ ও জীবন-ব্যবস্থা অনুসরণের কারণে দুনিয়াতেও কল্যাণ পায়, আর আখিরাতেও রয়েছে তাদের জন্য জান্নাত। জান্নাতে আছে শান্তি আর শান্তি। সেখানে কোন অশান্তি নেই। দুঃখ-দুর্দশার কিছু নেই। মানুষ সেখানে যা চায় তাই পায়। জান্নাতে মানুষ এমন নিয়ামতের অধিকারী হবে যা দুনিয়াতে তারা কল্পনাও করতে পারেনি, চোখেও দেখেনি এবং কানেও শুনেনি। আর সেই জান্নাত হবে অনন্তকালের।

ফাসিকের বাসস্থান জাহান্নাম: আখিরাতের শাস্তি:

আখিরাতে মুমিনদের অবস্থা বর্ণনার পর ফাসেকের অবস্থা বর্ণনা শুরু হয়েছে। যারা অপরাধ করে অর্থাৎ যারা ফাসেক তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। জাহান্নাম হলো চরম অশান্তি ও কঠিন শাস্তির স্থান। সেখানে জাহান্নামবাসী আগুনে জ্বলবে। আগুনের ইন্ধন হয়ে জ্বলতে থাকবে। আগুনে তাদের দেহের চামড়া গলে যাবে। এরপর আবার চামড়া তৈরি হবে। তা আবার আগুনে জ্বলবে ও গলবে। এভাবে চলতেই থাকবে, এবং এভাবে তারা থাকবে ভীষণ কষ্টের মধ্যে। অবিশ্বাসী বাতিলপন্থিদের সে শাস্তি হবে অনন্তকালের।

ফাসিকদের দুনিয়ার শাস্তি:

আয়াতে আল্লাহ বলেন, তিনি ফাসিকদেরকে বড় শাস্তির পূর্বে দুনিয়াতে ছোট শাস্তি ভোগ করাবেন। এর একাধিক অর্থ হতে পারে। প্রথম, ফাসিকরা দুনিয়াতেও বাতিলের পথে অনৈতিক, অশ্লীল, উচ্ছৃংখল জীবনযাপন করে, যা তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে অশান্তি ও ধ্বংস নিয়ে আসে। তারা মানুষের চোখেও হেয় প্রতিপন্ন হয়। অনেক সময় আইনের হাতে ধরা পড়ে শাস্তি পায়। দ্বিতীয়, আল্লাহর পক্ষ থেকেও তাদের উপর শাস্তি আসে, গজব আসে। অনেক সময় আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের ধ্বংস করেন। এদিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, মানুষের কর্মের দরূণ জলে-স্থলে ফাসাদ ছড়িয়ে পড়েছে। কোরআনের বিভিন্ন স্থানে সীমালংঘনকারীদের ধ্বংসের ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে।

ছোট শাস্তি দিয়ে সতর্ক করা:

দুনিয়াতে বড় শাস্তির পূর্বে ছোট শাস্তি দেয়ার আরেকটি উদ্দেশ্য হলো অপরাধী ও বাতিলপন্থিদেরকে সতর্ক করা, যেন তারা সুপথে ফিরে আসে। অর্থাৎ ছোট খাট শাস্তি দিয়ে তাদের সতর্ক করা হয় যে, এটা হলো তোমাদের কুকর্মের কিছুটা শাস্তি। তোমাদের সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত। বাতিল পথ ত্যাগ করে সত্য পথে আসা উচিত। যাদের মধ্যে বিবেক ও জ্ঞান আছে তারা তা বুঝতে পারে এবং সত্য পথে ফিরে আসে। আর যারা হঠকারিতার কারণে সত্য-প্রত্যাখ্যানে অবিচল থাকে, তারা আরো বড় শাস্তির সম্মুখীন হয়। তাদের পক্ষে হিদায়াত সম্ভব হয় না।

শাস্তি সংশোধন ও হিদায়াতের সহায়ক:

আলোচ্য আয়াত ও উপরের বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, দুনিয়ার শাস্তি অনেক সময় হিদায়াতের জন্য সহায়ক হয়। দুনিয়ায় কোনো বিপদ এলে মানুষ আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। আল্লাহকে ডাকে এবং কৃত পাপ ও অপকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী হয়। এভাবে কমপক্ষে বিপদের সময় তারা আল্লাহর পথে চলে। এরপর বিপদ থেকে উত্তরণের পরও অনেকে সত্য উপলদ্ধির মাধ্যমে সত্য পথে থেকে যায়। এভাবে দুনিয়ার বিপদ-আপদ হিদায়াতের সহায়ক হিসাবে কাজ করে। দুনিয়ার বৈষয়িক জীবনেও তা প্রযোজ্য। সন্তানকে আদর করতে হবে, কিন্তু প্রয়োজনে সংশোধনের জন্য শাস্তিও ফলপ্রসূ হতে পারে। একইভাবে সামাজিক ও জাতীয় জীবনেও সংশোধনের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা প্রযোজ্য।

বিপদ আপদে তওবা ও সংশোধন:

আলোচ্য আয়াতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, যারা সুস্থ বিবেকের অধিকারী তারা বিপদের সময় তওবা ও সংশোধন হয়ে যায়। অপরাধ, গুনাহ ও পাপ কাজ করতে করতে হৃদয়ে কাল দাগ পড়ে যায়। তাদের বিবেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের চিন্তা শক্তি লোপ পায়। বিপদ এলে তা আবার জীবন্ত হয়ে উঠে। তখন সুস্থ বিবেকের সাথে তাওবা করা উচিত এবং সংশোধন হয়ে যাওয়া উচিত। সারকথা, বিপদ এলে প্রতিটি মানুষকে চিন্তা করে দেখা উচিত, সে জীবনে কি কি অপরাধ করেছে, কি কি মাত্রায় বাতিলের পথে চলেছে। সে অনুযায়ী আল্লাহর কাছে তাওবা করা উচিত এবং সংশোধন হওয়া উচিত।

বাতিলপন্থিদের বিদ্রূপের বদলায় বিদ্রূপ:

বাতিলপন্থিরা দুনিয়াতে মুমিনদের সাথে ঠাট্টা ও বিদ্রূপের আচরণ করে, তাদেরকে সেকেলে ও বোকা বলে এবং প্রগতির বিরোধী বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। শুধু সত্যপন্থিদের সাথেই নয় বরং নবীদের সাথেও সকল যুগের বাতিলপন্থিরাই ঠাট্টা বিদ্রূপ করেছে। কোরআনে আল্লাহ আফসোস করে বলেন, আমার বান্দার জন্য আফসোস, তাদের নিকট এমন কোন রাসূল আসেনি যাদের সাথে তারা বিদ্রূপ করেনি। বাতিলপন্থিরা দুনিয়ার এ বিদ্রূপের বদলায় আখিরাতে বিদ্রূপাত্মক আচরণ পাবে। তাদেরকে কঠিন শাস্তির মধ্যে ফেলে বলা হবে, এবার দোযখের মজা ভোগ করো। নিঃসন্দেহে দোযখে মজা নেই, আর তা ভোগ করার ব্যাপারও নয়। বরং তা হলো চরম কষ্টের জেল খাটার মতো। এভাবে দুনিয়ায় যেভাবে তারা সত্যপথ, সত্যপন্থি ও নবীদের প্রতি বিদ্রূপ করত, কিয়ামতের দিন তারা নিজেরাই সেভাবে বিদ্রূপের সম্মুখীন হবে।

কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অপরাধ:

আয়াতে বলা হয়েছে, তার চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে, যাকে তার প্রতিপালকের আয়াতের মাধ্যমে উপদেশ দেয়া হয়। কিন্তু তারপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের উচিত নিজ উদ্যোগেই সত্যের সন্ধান করা, আল্লাহর কিতাব অধ্যায়ন করা, প্রকৃতিতে আল্লাহর যে নিদর্শন রয়েছে তা অনুধাবন করতে চেষ্টা করা। এভাবে সত্যপথের অনুসন্ধান করা এবং সে পথে চলা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। কিন্তু সে যদি তা না করে বরং সত্যপন্থিরা তাদের কাছে আল্লাহর কিতাবের মাধ্যমে সত্য কে উপস্থাপন করে, তখন তাদের জন্য আরো বেশি কর্তব্য হয়ে পড়ে সত্য পথে আসা এবং সত্য পথে চলা। কিন্তু এরপরও যদি কেউ সত্যপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে বড় যালেম আর কেউ হতে পারে না। সে এভাবে নিজের উপর যুলুম করে। সে দুনিয়াতেও বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। আর আখিরাতে তার কষ্টের সীমা থাকবে না।

শাস্তির সাধারণ কারণ: সত্য-প্রত্যাখ্যান:

আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, নিশ্চয় তিনি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। এখান থেকে একটা মূলনীতি পাওয়া যায় যে মানুষের উপর যে বিপদ ও শাস্তি আসে তার একটা সাধারণ কারণ হলো সত্য-প্রত্যাখ্যান ও অপরাধ। কেউ যদি সত্যকে অস্বীকার করে, প্রত্যাখ্যান করে এবং বাতিলের পথে চলে, সে শাস্তির সম্মুখীন হবে। দুনিয়াতে তার শাস্তির মাত্রা যদি ছোট হয়, তাহলে সে হয়তো অনুধাবন নাও করতে পারে, কিন্তু যদি শাস্তির মাত্রা বেশি হয়, তখন নিশ্চয় তার পক্ষে অনুভব করা উচিত। আর আখিরাতে সে শাস্তির কথা তো বলাই বাহুল্য।

আল্লাহ বাতিলপন্থিদের উপর প্রতিশোধ নেন:

এখানে আয়াতের একটা বিশেষ শব্দের প্রতি লক্ষ্য করা উচিত। একথা বলা হয়নি যে আল্লাহ অপরাধীদের শাস্তি দিবেন, বরং বলা হয়েছে যে, আল্লাহ অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। শাস্তি দেয়ার চেয়ে অনেক কঠিন হলো প্রতিশোধ গ্রহণ করা। শাস্তির মধ্যে অসন্তুষ্টির ইঙ্গিত থাকে। আর প্রতিশোধের মধ্যে থাকে চরম অসন্তুষ্টি, ভীষণ ক্রোধ, প্রতিশোধ প্রবণ মানসিকতা ইত্যাদি। বিশেষ করে দুটি মাত্রার অপরাধে এরূপ প্রতিশোধমূলক শাস্তির অবস্থা থাকে। একটি হলো আল্লাহকে অস্বীকার করা ও নাস্তিকতা, এবং অন্যটি হলো আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে শরিক করা। এ দুটি অপরাধের মাত্রা ব্যতীত যদি কোন মুমিন অপরাধ করে ফেলে, তাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বটে, কিন্তু সেখানে প্রতিশোধ গ্রহণ করার মতো শাস্তির মাত্রা নেই বলে ধারণা করা যায়।

এ বিভাগের আরো খবর