সেরা ক্রিকেট খেলে খাদের কিনারা থেকে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক দৃষ্টান্ত আছে অস্ট্রেলিয়ার। আমি মনে করি, ওই একইভাবে আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচেও এগিয়ে যাবে টিম অস্ট্রেলিয়া। টানা দুই ম্যাচে হেরে টিমের মধ্যে যে চাপা হতাশা বিরাজ করছে- সেটি কাটিয়ে ওঠার জন্যই শুধু নয়, বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে হলে জয়ের বিকল্প নেই তাদের। একই কথা প্রযোজ্য শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও।
এই বিশ্বকাপে যে ফরম্যাটে খেলছে ১০টি দল, সেখানে সেমিফাইনালের আগে ৯টি করে ম্যাচ প্রত্যেক দলের। যদি টুর্নামেন্টের শুরুতেই তিন ম্যাচ হেরে যায় কোনো দল, তাহলে তাদের শেষ চারে খেলাটা কতটা কঠিন, সেটি সহজেই অনুমেয়। তবে অপ্রিয় সত্য যে, এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা কোনো এক দল। আজ এই দুই দলের মধ্যে যারা টুর্নামেন্টে প্রথম জয়ের মুখ দেখবে, তাদের সেমিফাইনালে খেলার রাস্তাটা চওড়া হবে।
যে দলটি ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ের দৌড়ে আলোচনায়, সেই প্রভাবশালী দলটিই কিনা প্রথম দুই ম্যাচে হেরে খাদের কিনারায়। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হলো ব্যাটিং। বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না ব্যাটাররা। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে দুটি ম্যাচ খেলেছেন তারা, ওয়ার্নার-স্মিথদের কেউই ফিফটির দেখা পাননি। ওই দুই ম্যাচে দলীয় রান দুইশর ঘরে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হলে ব্যাটিং শক্তি দেখাতে হবে তাদের। আমি মনে করি, ব্যাটিংয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখানোর সক্ষমতা আছে অস্ট্রেলিয়ানদের।
অবশ্য শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের সামনে তাদের ভালো পরীক্ষা দিতে হবে। স্পিনেই ভুগতে পারে তারা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে অজি ব্যাটাররা স্পিনে ধরাশায়ী হয়েছেন। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনশক্তির প্রধান ভরসা লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। সম্প্রতি খরুচে বোলিং করে গেলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্বরূপে ফিরতে পারেন তিনি। তার সঙ্গে পার্টটাইমার হিসেবে অফস্পিনে কম যান না ম্যাক্সওয়েলও। অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলিং অ্যাটাকের সেরা অস্ত্র হলেন মিচেল স্টার্ক। তার ঝড়োগতির বলের সামনে বিপাকে পড়তে পারেন লঙ্কান ব্যাটাররা।
তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে রেকর্ড ভালো কুশল মেন্ডিসের। সেটি আত্মবিশ্বাস জোগাবে তাকে। অপরদিকে শ্রীলঙ্কার পেস অ্যাটাকও ভারতের উইকেটে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে। ডানহাতি তরুণ পেসার পাথিরানা না খেললে সুযোগ কমে যেতে পারে তাদের।
অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে ইনজুরির কারণে নিয়মিত অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার দাসুন শানাকাকে হারিয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে শ্রীলঙ্কা দল। কুশল মেন্ডিস এখন দলকে নেতৃত্ব দেবেন। টানা দুই ম্যাচ হারের পর নতুন করে মিশন শুরু করবেন লঙ্কানরা। হারলেও গত দুই ম্যাচে তাদের ব্যাটাররা স্কোরবোর্ডে তিনশর বেশি রান তুলেছেন। ব্যাটিং ভালো হলেও হতাশ করে যাচ্ছেন বোলাররা। গত দুই ম্যাচে প্রতি ওভারে গড়ে প্রায় ৮ রান করে খরচ করেছেন তারা। এই রান রেটের লাগাম টানতে না পারলে দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনশর বেশি রান করেও দলকে হারের মুখ থেকে রক্ষা করতে পারবেন না মেন্ডিসরা।
লক্ষ্ণৌর উইকেট বিবেচনায় আজ টসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। দিবা-রাত্রির ম্যাচ হওয়ায় উইকেটের আচরণও বদলে যাবে। দিনের আলোতে যে সুবিধা পাওয়া যাবে, সেটি রাতে পাওয়া যাবে না। প্রথম ইনিংসে রান উঠবে, বল ব্যাটে আসবে। উইকেট পুরোনো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আচরণও বদলে যাবে। যেটি গত ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেখেছে অস্ট্রেলিয়া। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে স্বাচ্ছন্দ্যেই ব্যাটিং করেন আফ্রিকানরা। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে দুইশ রানের মধ্যে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
সেদিন উইকেট বোলারদের হয়ে কথা বলেছিল। আজও উইকেটের একই আচরণ দেখা যাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে লক্ষ্ণৌর গরমে হাঁপিয়ে উঠতে পারেন স্মিথরা। যেখানে কন্ডিশনের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিতে পারেন লঙ্কানরা।
যাই হোক, সবশেষে একটা কথাই বলব, হতাশার মাঝে থেকে যে দল আত্মবিশ্বাসী মনোভাব নিয়ে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে পারবে, আজ তারাই জয়লাভ করবে।