চরাই-উৎরাই অতিক্রম করে গোটা জাতি আনন্দ-উদ্দেলে অতিক্রম করল একটি বছর। একই সময়ে দুটো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এলো ৫ আগস্ট বর্ষপূর্তিতে। গণঅভ্যুত্থানের প্রারম্ভে যে গণআকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয়েছে প্রথমত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এবং পরবর্তীকালে রাজনৈতিক দল পেশাজীবীরা, সুশীল সমাজ এবং সর্বস্তরের জনসাধারণের পক্ষ থেকে যে পরিবর্তন আকাঙ্ক্ষা প্রদর্শিত হয়েছে- তা এক কথায় অভূতপূর্ব। বিগত অর্ধ শতাব্দী যাবত রাজনৈতিক সরকারগুলো যে যথাযথভাবে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে গ্রাহ্য করেনি, এই অভ্যুত্থান এবং অভ্যুত্থান পরবর্তী দাবি-দাওয়ার বেশুমার প্রদর্শন- জমে থাকা হতাশারই প্রমাণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সীমাবদ্ধতা সচেতন মানুষ জানেন। তার পরও অসচেতনভাবে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গন, সচিবালয় এমনকি প্রধান উপদেষ্টার আবাসস্থল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে জনগণের আবেদন ও আন্দোলন। এককভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই হিমালয়সম ক্ষোভ ও ক্রোধকে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অক্ষম। তাই সঙ্গতভাবেই জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার অর্থাৎ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত সরকারের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রধানত তিনটি প্রত্যয় নিয়ে সরকার তার যাত্রা শুরু করে। প্রথমত এটি বৈষম্যের নিরসন। দ্বিতীয়ত এটি সংস্কার প্রস্তাবণা। তৃতীয়ত এটি গণহত্যাকারী পতিত সরকারের বিচার। বৈষম্যের নিরসন এমন একটি গণদাবি যার সঙ্গে জড়িত আছে কোটি কোটি মানুষের দীর্ঘকাল ধরে বঞ্চনার ইতিহাস। আর সংস্কার প্রস্তাবণা এতই দীর্ঘ এবং অগণিত যে হিসেব-নিকেশ এক রকম অসম্ভব। সরকার এইসব সংস্কার বা মেরামতের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ১১টি কমিশন গঠন করে। অবশেষে ৬টি কমিশনের মৌলিক বিষয়বস্তু নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করে। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অসম্ভব ধৈর্য্য ও কুশলতার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য অর্জনের চেষ্টা করে। বাংলাদেশের জনচরিত্র বিভেদের-ঐক্যের নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর ভাঙন প্রক্রিয়া গভীরভাবে অবলোকন করলেই এই দ্বন্দ্ব, কলহ, কোন্দল ইত্যাদির প্রমাণ মেলবে। ৩০টিরও অধিক রাজনৈতিক দল এই সংলাপে অংশগ্রহণ করে। রাজনৈতিক দলগুলোর শতভাগ একমত হওয়া অসম্ভব কল্পনা। তবে গরিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতৃত্ব বেশিরভাগ বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করলেই- কমিশনের স্বার্থকতা প্রমাণিত হবে। যদিও কতিপয় মৌলিক বিষয়ে একমত হয়নি রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তবে যা অর্জিত হয়েছে এই দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষের দেশে, তাও কম নয়।
সংস্কারের প্রধান প্রধান বিষয়গুলো ছিল সংবিধান, ক্ষমতার ভারসাম্য প্রণয়ন, নির্বাচন ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ, গণপ্রতিনিধিদের সীমিত স্বাধীনতার গ্যারান্টি, আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতা ও নিরপেক্ষতা নির্ধারণ, শাসন ও বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনগুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর নিযুক্তির ন্যায্যকরণ। রাষ্ট্রযন্ত্রের এমন কোনো দিক নেই যে সংস্কারের আবেদন উত্থাপিত হয়নি। রাষ্ট্রের মৌলিক ১৯ সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একমত হয়েছে। এসব বিষয়গুলো হচ্ছে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নমনীয় করণ, কমিটির ভাগাভাগি, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমাসংক্রান্ত বিধান আইনানুগকরণ, বিচার বিভাগীয় বিকেন্দ্রীকরণ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা সীমিতকরণ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, নির্বাচন কমিটি গঠন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, সংসদের উচ্চ-কক্ষ গঠন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, রাষ্ট্রীয় মূলনীতি নির্ধারণ এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিধান ইত্যাদি। এসব বিষয়ে সাধারণ ঐকমত্য অর্জন সরকারের একটি বড় সাফল্য। এদিকে সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের দাবি এবং ব্যবস্থাপনাও এগিয়ে চলেছে। সেই কারণে ৫ আগস্টের সুন্দর সময়ে সরকার একই সঙ্গে দুটো গুরুত্বপূর্ণ দায় এবং দায়িত্ব পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
যে ঘোষণাপত্রটি প্রকাশিত হতে পারত অভ্যুত্থানের পরপরই, সেটি অবশেষে প্রকাশিত হলো। জুলাই বিপ্লবের প্রতি রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির অঙ্গীকার রেখে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঘোষণাপত্রে ২৮টি দফা রয়েছে। এখানে ১৯৭১ সাল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের বাঁকে বাঁকে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের স্বীকৃতি রয়েছে। ঘোষণাপত্রের ২৪ নম্বর দফায় গণঅভুত্থানের শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে ছাত্র গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে। ঘোষণাপত্রের শেষ কথা এ রকম, ‘৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো’। এই ঘোষণার মাধ্যমে বহুল প্রতিক্ষীত একটি বিষয়ের মীমাংসা হলো। জুলাই অভ্যুত্থানের নেতারা বারবার এ ধরনের একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। তারা নিজেরা ঘোষণাটি প্রদান করবে এ রকম তারিখও দু-একবার দিয়েছে। সর্বশেষ এনসিপি বলেছিল ৩ তারিখে জনসমুক্ষে ঘোষণাটি প্রকাশ করা হবে। সরকার তাদের আশ্বস্ত করায় তারা হয়তো সরকারকেই এই ঘোষণার আইনানুগ ঘোষণাকারী মনে করেছে। ঘোষণাটি অনেককে তুষ্ট করেছে। আবার রাজনৈতিক দলের কয়েকজন জুলাই ঘোষণায় সন্তুষ্ট হননি।
৫ আগস্ট ২০২৫ জাতীয় জীবনে গৌরবময় দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের পরপরই প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়কাল ঘোষণা করেন। আগামী বছর, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকাররের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি পাঠানোর কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইতোমধ্যেই সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত চিঠি নির্বাচন কমিশন বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে কমিশন যেন রমজান মাস শুরুর আগে ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যার বিচার ও সংস্কারসহ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের বিশদ বিবরণ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তার ভাষায়, ‘এবার আমাদের সর্বশেষ দায়িত্ব পালনের পালা, নির্বাচন অনুষ্ঠান। এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করব। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব।’
নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে একটি প্রচ্ছন্ন দূরত্ব ছিল। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন অনুষ্ঠানে বারবার ওয়াদা করছিলেন বটে, তবে সঠিকভাবে সুনির্দিষ্টভাবে তিনি কোনো কথা বলেননি। রাজনৈতিক দলগুলো স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনমুখী। যে দলটি যতটা প্রত্যয়ী তারা তত জোড়ে-সোরে নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছিলেন। এই অনিশ্চিত অবস্থাটি প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে বেশ দ্বন্দ্বিক অবস্থা তৈরি করে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের মধ্যে একটি সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয় লন্ডন বৈঠকে। রাজনৈতিক মহলে মোটামুটি স্বস্তি ফিরে আসে। তবে অন্য দলগুলো বিএনপির এই প্রাধান্যের বিরোধীতা করে। যাহোক ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে এরকম আশ্বাসের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটে। সেই ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্টের এই ঘোষণা এসেছে। এই ঘোষণার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো যে সংশয় ও সন্দেহে ভুগছিলেন তার অবসান ঘটে। কিন্তু কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দল জুলাই ঘোষণা এবং নির্বাচনের তারিখ নিয়ে অস্বস্তির কথা বলেছে। তবে কোনো রাজনৈতিক দলই নির্বাচন নাকোচ করা বা প্রতিরোধের কথা বলেনি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে গুজব ছিল যে ঘোষিত সময়সীমার বিপক্ষে অবস্থান নেবে বিএনপির পরের ধারার ডান-বাম রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু অসম্পূর্ণতা, অগ্রহণযোগ্যতা ও অসহযোগিতার কথা উচ্চারিত হলেও প্রত্যাখ্যাত হয়নি ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনের দিন-ক্ষণ।
আগেই বলা হয়েছে বিএনপি স্বস্তির মধ্যে ছিল। এই ঘোষণা দুটোর পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তাদের আস্থা ও বিশ্বাস আরও দৃঢ়তর হবে এটাই স্বাভাবিক। নির্বাচন ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্রে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে, বিএনপি তা স্বাগত জানায়। আমরা বিশ্বাস করি এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবিকতা, সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি নতুন, প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের ভিত্তি তৈরি হবে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণাকেও ইতিবাচকভাবে নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বৈঠকে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথ সুগম করবে। তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণকে নির্বাচনকে সফল করে গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। মির্জা ফখরুল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা, আহতদের প্রতি সহানুভূতি ও সুস্থতার জন্য দোয়া করেন।
অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের দাবি করেন জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন আমরা লক্ষ্য করছি, নির্বাচনের উপযুক্ত যে পরিবেশ থাকার কথা ছিল তা সরকার এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। এ জন্য প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত টাইমলাইন অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে তার আইনি ভিত্তি দিতে হবে। অতীতে বিভিন্ন অভ্যুত্থান ও আন্দোলন হয়েছে- পরবর্তী সময়ে তার আইনি ভিত্তি দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন- ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর লিগাল ফ্রেম ওয়ার্কের ভিত্তিতে ৭০-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত গণপরিষদে ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুমোদন হয়েছিল। জাতীয় ইতিহাসে এ ধরনের আরও ঘটনার উল্লেখ করে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিতে তিনি নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি জানান। বাংলাদেশের মতো শতধাবিভক্ত ও রাজনৈতিক ঝগড়ায় নিত্য নিয়োজিত নেতৃত্বকে একটি সমন্বিত ও সম্মিলিত ধারায় একত্রীকরণ একটি সুকঠিন কাজ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে ধন্যবাদ যে তারা যতটা সম্ভব ‘বিরোধের মাঝে ঐক্য’ নিশ্চিত করতে পেরেছেন। জুলাই ঘোষণাপত্র এবং নির্বাচন সম্পর্কে দোলাচলে ছিল দেশবাসী। ঘোষণার পরে গরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলগুলো এক বাক্যে নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন যে প্রধান ধারার বিপরীতে অবস্থানকারী শক্তিশালী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কিনা। এটি সন্তোষের বিষয় যে অবশেষে ওইসব রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিক্রিয়া সমালোচনা সত্ত্বেও নির্বাচনী দিন-ক্ষণকে মেনে নিয়েছে। জুলাই ঘোষণা সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রিয়া -প্রতিক্রিয়ায় অস্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি আগের মতো এসব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগেরমাধ্যমে মতামত জেনে নিতেন, তাহলে অদৃশ্যমান বিভেদটি দৃশ্যমান হতো না। তবে নাগরিক সাধারণ জুলাই ঘোষণার বাস্তবায়ন, জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে নির্ধারিত সংস্কারগুলো সর্বোপরি নির্বাচনের শতভাগ নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তিনটি উপায়ে নাগরিক সাধারণের এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান করা যায়। প্রথমত সকল রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বাক্ষরে জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা যায়। দ্বিতীয়ত অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানের স্বীকৃত সংশোধনীর প্রকাশ ঘটানো যায়। তৃতীয়ত রাষ্ট্রপতি তথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আইনানুগ ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সংস্কার কার্যক্রম এবং প্রশাসনিক দায়-দায়িত্বের ঘোষণা দেওয়া যায়।
লেখক: সাবেক অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক ভিসি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।