বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুষ্ঠু নির্বাচন: সেনাবাহিনী দ্বারাই সম্ভব

  • সম্পাদকীয়   
  • ২০ আগস্ট, ২০২৫ ০০:৪১

সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি ঘোষণা আসার পর থেকেই অনেক রাজনৈতিক মহলের ধারণা এই পুলিশ বাহিনী দিয়ে নির্বাচন? কিন্তু আমাদেরত একটি গর্বিত চৌকস সাহসী সেনাবাহিনী আছে। এদের দায়িত্ব, নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ন নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। দেশের ক্লান্তিলগ্নে সে দৃষ্টান্তত বহুবার দেখিয়েছে।

এদের নৈতিকতার জন্য জনগণ ও আস্থা রাখে। আমরা কেন এদেরকে কাজে লাগাতে পারব না? অবশ্যই তা সম্ভব। দরকার শুধু সুষ্ঠ পরিকল্পনা। আমরা কি ভুলতে বসেছি ছাত্র ও জনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ও ক্ষমতার মসনদ ঠিক রাখার জন্য স্বৈরাচারী সরকার দমন-পীড়ন সমানতালে চালাচ্ছে। এরি মধ্যে অনেক লোকের জীবনহানি হল কিন্তু সরকারের টনক নড়ছে না। তারা জনগণের ভাষা না বুঝে চরম দাম্ভিকতার উচ্চ শিখরে আরোহন করছিল। যেখানে ক্ষমতাই মূখ্য। জনগণ বিবেচ্য বিষয় নয়। ঠিক তখনই দেবদূতের মত দেশের সেনাবাহিনীর প্রধান ৩ আগষ্ট/২৪ স্বৈরাচারী সরকারকে ছাপ জানিয়ে দিলেন ---জনগণের ওপর সেনাবাহিনী গুলি চালাতে পারবে না। তখনই জনতার আন্দোলনের মোড় ঘুরে গেল । সেনাবাহিনীর এই ভূমিকার কারণে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।পৃথিবীর সব দেশেই গণঅভ্যুত্থানে অমনটি হয়ে থাকে। আমাদের সেনাবাহিনী যে কোন দুর্যোগমুহূর্তে জনগণের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়ায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ অগ্নি নির্বাপক, জঙ্গি দমনে অতীতে সেনাবাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্তের প্রতীক আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনী। এরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা ও নির্বাচনে সহযোগিতা করে আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করে আসছে। বিশ্ববাসী এদের ওপর নির্ভর করতে পারে। শেখ হাসিনা তার স্বার্থ হাসিলের জন্য জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনের সময় এদেরকে কোনঠাসা করে রাখতেন। এখন সময় এসেছে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোর।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার পর থেকে রাজনৈতিক দলসমূহ নড়েচড়ে বসেছে। বাংলাদেশের জনগণ প্রায় ১৫ বছর যাবত সুষ্ঠু নির্বাচন দেখেনি। সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার কারণে ভোট কেন্দ্রে যাওয়াটা ও অনেকে ভুলতে বসেছে। গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই। সকল মতের সকল মানুষের অংশগ্রহণে যে নির্বাচন হয় সেই সংসদ হয় জনগণের। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসলে দেশের অর্থনীতি হয় ভঙ্গুর। যেখানে আমাদের পুলিশ সড়কের নিরাপত্তা দিতে পারে না সেখানে কিভাবে ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা দেবে? পুলিশের দায়িত্ব হীনতার কারণে যে দেশে ঐকমত্যের ভিত্তিতে চোখের এক পলকে খনিজ মূল্যবান সম্পদ সাদা পাথর লুট হয়ে যায় সে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ভাবাটা দুরূহ ব্যাপার। অবশ্য সাদা পাথর ও সেনাবাহিনী কতৃক উদ্ধার হয়েছে। তাছাড়া দেশে একটি প্রচলিত কথা আছে ১০টা হোন্ডা ১০টা গুন্ডা থাকলেই নির্বাচনে জেতা কোনো ব্যাপার না। অমনটি হলে এত বিপ্লব মানুষের ত্যাগ বৃথা যাবে। মানুষ আশাভঙ্গ হবে। এদের দায়িত্ব কর্তব্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন আছে। দেশে এখন পুলিশের সাংগঠনিক ক্ষমতা ও মনোবল নিম্ন পর্যায়ে। এদের কারণে মব সন্ত্রাস দিন দিন বেড়েই চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নয়।এমন অবস্থায় ভালো নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবয়ব,আয়তন ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো রেখে নির্নাচন করতে হলে সেনাবাহিনীর বৃহত্তর ও কার্যকর অংশগ্রহণ দরকার। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লাগবে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ এখন মাঠে আছে পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য। সেনাবাহিনী মাঠে থাকা স্বত্বেও

৫ আগস্টের পর পুলিশ এর মাঝে এখনো শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। তাইত বাস্তবতার নিরিখে ইসির নির্বাচন বিষয়ক প্রস্তাবনায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পরিবর্তন আসবেই। এই পরিবর্তনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব অনেক বেড়ে যাবে। বিদ্যমান আইনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সংজ্ঞায় বলা আছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অর্থ হলো: পুলিশ বাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ব্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, আনসার বাহিনী ব্যাটালিয়ন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং কোস্ট গার্ড বাহিনী। সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে ২০০১ সালে আরপিওতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছিল। এই বিধানটি ২০০৮ সাল পর্যন্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী সরকারের আমলে ২০০৯ তাদের অশুভ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এই আইনটি বাদ দেওয়া হয়। আইনে সশস্ত্র বাহিনী সংজ্ঞাভুক্ত না থাকলে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বাধ্যবাধকতা থাকে না। কিন্তু গত তিনটি নির্বাচনের আগে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে অনেকই সশস্ত্র বাহিনীকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত দাবি জানিয়েছিল। আওয়ামী লীগ বিষয়টি আমলে নেয়নি। বিগত তিনটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী টহলরত ছিল কিন্তু একটা আনসারের যে ক্ষমতা ছিল তাও ছিল না। এতে ভোট কারচুপি করে নির্বাচনের আয়োজনকে বিতর্কিত করেছেন।

বর্তমানে নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায়’ সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর ‘যুক্ত করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইনে এটি যুক্ত হলে তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব নিতে আলাদা কোন আদেশের প্রয়োজন হবে না। এই আইনের আওতায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ও পুলিশের মতো ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবেন।

বর্তমান সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপারে আরপিও ৮৭ ধারায় আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ক্ষমতার বিষয়ে বলা আছে। যেমন এই আইন অনুযায়ী পুলিশ কর্মকর্তা না হলে ও নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনরত ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার’ কোনো সদস্য ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে বা ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্বাচনী অপরাধের জন্য যে কোনো ব্যাক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারেন। ইসি সেভাবে প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন সেভাবে আইনে সংশোধনে এলে সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনের সময় এ ক্ষমতাগুলো প্রয়োগ করতে পারবে।

আওয়ামী সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনে সংজ্ঞাভুক্ত না থাকলেও নির্বাচনগুলোতে সেনা মোতায়ন করা হয়েছিল। সেখানে দায়িত্ব ছিল --ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার- এর (বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার উদ্দেশ্য) আওতায়। এভাবে মোতায়ন করা হলে মূলত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে দায়িত্ব হলো- স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় তারা অবস্থান নেয়, প্রয়োজনে টহল দেয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশে তারা কাজ করে।

ফাউন্ডেশন ফর ষ্ট্রেটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফ-এস ডিএস) মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহি আকবর একটি সেমিনারে বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখার মানি হবে অরাজকতা তৈরির সুযোগ করে দেওয়া এবং বিপুল অর্থের অপচয়। আমি মনে করি সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞাভুক্ত করে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সযোগ)তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হোক। এতে জনগণ ভোট দিতে উৎসাহ পাবে।’

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে হলে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। আমি মনে করি সেনাবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সংযুক্ত রাখতে হবে। ভোটের তিন মাস আগে তাদের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দায়িত্ব দিতে হবে। ভোটের পরেও কমপক্ষে ১০ দিন সেনাবাহিনী মাঠে থাকতে হবে। একদম তৃণমূল পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সমন্বয় কমিটি হবে সেখানে সেনাবাহিনীকে রাখতে হবে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য ৮০ হাজার সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন। নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস সবচেয়ে ইতিহাসের সেরা যে নির্বাচন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সরাসরি সংযুক্ত রাখতে হবে। ফোর্স স্বল্পতার কারণে ভারতের মত একাধিক দিবসে ----যেমন ৮টি বিভাগের জন্য ৪ দিনে সংসদ নির্বাচন করা যেতে পারে। তাহলে নিরাপত্তার বিষয়টি ১০০% নিশ্চিত হবে। বিশ্বের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো উত্তম সময় এসেছে । এরা যদি শান্তি মিশনে নিরাপত্তা দিতে পারে আমাদের দেশে পারবে না কেন? তবে জনগণকে ও সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করতে হবে তাহলেই দেশে একটি উৎসব মুখর নির্বাচন করা সম্ভব।

লেখক: ব্যাংকার ও কলামিস্ট

এ বিভাগের আরো খবর