বিশ্বকাপের ম্যাচে আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়বে আফগানিস্তান। আমি মনে করি, ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিয়ে ম্যাচটি জমিয়ে তুলবে আফগনিস্তান। কেননা তাদের রয়েছে বিধ্বংসী স্পিন অ্যাটাক। বিশ্বখ্যাত লেগ স্পিনার রশিদ খান, মুজিব-উর রহমান, মোহাম্মদ নবি- এই ত্রয়ী ইংলিশ ব্যাটারদের জন্য আতংকের কারণ হতে পারেন। তাই আলাদা হিসাব-নিকাশ করেই তাদের বিপক্ষে মাঠে নামতে হবে জস বাটলারদের; বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে তাদের।
ভারতের মাটিতে ‘হোম-অ্যাডভান্টেজ’-এর মতো সুবিধা পাবেন আফগান যোদ্ধারা। দিল্লির যে মাঠে আজকের খেলাটি অনুষ্ঠিত হবে, এখানকার সবকিছুই হাতের তালুর মতো চেনা আফগানদের। প্রতিপক্ষকে ব্যর্থ করার জন্য কী কৌশল নির্ধারণ করতে হবে, কীভাবে বোলিং করতে হবে, কোন জায়গায় বল ফেললে বেকায়দায় পড়বে ব্যাটাররা- তা বেশ ভালোভাবে রপ্ত আছে রশিদ-মুজিবদের।
অবশ্য আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সফল হতে চাইবেন ইংলিশরা। তারাও যে স্পিন খেলায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে, সেটি বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে দেখিয়েছেন ডেভিন মালানরা। ধৈর্য ধরে কীভাবে স্পিন খেলে রান বের করে নিতে হয়, সে দক্ষতা আছে তাদের। আমি মনে করি, ইংলিশ ব্যাটিং বনাম আফগানদের স্পিন অ্যাটাকের মধ্যে লড়াইটা বেশ জমবে।
লড়াই জমাতে দিল্লির উইকেটও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গত ম্যাচে এই উইকেটে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ স্কোর (৪২৮) গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের পেস ও স্পিন অ্যাটাক উপমহাদেশের মাঠে যথেষ্ট সমীহ জাগানিয়া। এমন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে যেভাবে ব্যাটিং করেছেন আফ্রিকান ব্যাটাররা, তা অবিশ্বাস্য, অসাধারণ। ওই ম্যাচটিতে প্রায় সাড়ে সাতশর মতো রান হয়েছে। আজকের ম্যাচেও ব্যাটারদের হয়ে কথা বলতে পারে দিল্লির উইকেট। এ উইকেটে বল ব্যাটে আসবে, ফলে রান হবে প্রচুর। এক্ষেত্রে ইংলিশ ব্যাটাররা নিপুণ দক্ষতা দেখাতে পারে।
গত ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে সাড়ে তিনশর বেশি রান তুলেছে তারা। এখানেও রানবন্যা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এমন উইকেটে পেসারদের জন্য বাড়তি প্রেসার থাকবে উইকেট শিকারের ক্ষেত্রে। এ মুহূর্তে আফগান দলে সবচেয়ে ভয়ংকর পেসার হলেন ফজল হক ফারুকি। তার ধারালো গতির বোলিং বিপাকে ফেলতে পারে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের পাশাপাশি বোলিংয়েও বৈচিত্র্যময় ইংল্যান্ড। দুর্ধর্ষ পেস অ্যাটাক রয়েছে তাদের। রিস টপলি ও স্যাম কারানরা দারুণ ফর্মে রয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে গত ম্যাচে ৪ উইকেট শিকার করে বাঁহাতি পেসার টপলি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। আদিল রশিদ, মঈন আলিরাও স্পিনে ভীতি ছড়াবেন। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের বোলিংয়ের সামনে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে আফগান ব্যাটারদের। গত দুই ম্যাচে যে ব্যাটিং করেছেন তারা, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চমক দেখাতে পারে আফগানিস্তান।
দুই দলই জয়ের অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে। জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চাইবে ইংল্যান্ড। প্রথম দুই ম্যাচে হারের হতাশা কাটিয়ে ওঠার প্রত্যয় আফগান শিবিরে। তবে এই দুই দলের অবস্থান দিগন্তের দুই মেরুতে। এক দল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন এবং বিশ্ব ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত পরাশক্তি। অন্যদিকে আরেক দল শক্তভাবে আবির্ভাবের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিশ্বকাপের মঞ্চ ছাড়া দুই দলের সাক্ষাত হয় না। গত দুই বিশ্বকাপে একটি করে ম্যাচ খেলেছে দুই দল। এবার তাদের তৃতীয় সাক্ষাত এটি।
আমি মনে করি, আফগানিস্তানের হারানোর কিছু নেই। তাদের সামনে অর্জনের হাতছানি। কিন্তু ইংল্যান্ড বেশ সতর্ক হয়ে খেলবে। তাদের ওপর চাপটা থাকবে বেশি। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের এই চাপ-টাপ নেয়ার অনেক অভিজ্ঞতা আছে। দাপুটে জয় তুলে নেয়ার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে তারা।
তবে আমি চাই, ম্যাচটি একপেশে না হয়ে লড়াই জমে উঠুক, আরেকটি ক্রিকেটীয় বিনোদন উপভোগ করার সুযোগ পাক দর্শক।