বহু প্রতীক্ষার পর বিশ্বকাপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সেরা ম্যাচে আজ পরস্পরের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের এ ম্যাচকে ‘মাদার অফ অল ব্যাটল’ বলা হয়। যে ম্যাচের জন্য মুখিয়ে থাকে পুরো ক্রিকেটবিশ্ব।
অবশ্য বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে ম্যাচটি ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য যত বেশি আবেদনের, মর্যাদার ও উপভোগ্যের বিষয়ে পরিণত হয়, তা ক্রিকেটারদের মধ্যেও বাড়তি চাপ তৈরি করে। বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার মতোই চাপ নিয়ে ব্যাট-বল চালাবেন দুই দলের খেলোয়াড়রা। বড় ম্যাচের যে প্রবল চাপের কথা বলছি, সেটি ভারতীয় ক্রিকেটারদের ওপর বেশি থাকবে।
সাত বছর পর ঘরের মাঠে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামবে ভারত। স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাছে তাদের দর্শকদের প্রত্যাশা বেশি থাকবে। এ ছাড়া এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হার মানেনি ভারতীয়রা। এই ধারাটা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জটাও নিতে হবে। তাই ভালো খেলতেই হবে- এমন মানসিকতা নিয়ে খেলবেন রোহিত শর্মারা। এই চাপ জয় করতে না পারলে সেটি মাঠের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে। ক্রিকেটারদের সহজাত খেলা বাধাগ্রস্ত করে।
তবে উত্তেজনা-উত্তাপের ম্যাচ কীভাবে নার্ভ শক্ত করে খেলতে হয়, এটি ভালো করেই জানেন বিরাট কোহলিরা। তাই চাপকে পাত্তা না দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন তারা।
বড় ম্যাচে ভালো কিছু করে দেখানোর দারুণ সুযোগ। তাই বলে চাপমুক্ত থাকবে না পাকিস্তানিরাও। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের প্রায় দেড় লাখ দর্শকের মাঝে লড়বেন তারা। তাদের সমর্থকদেরও উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকবে। দীর্ঘদিন অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অনেক ঝক্কি-ঝামেলার পর ভারতের মাটিতে খেলতে এসে কিছু অর্জন করে নেয়ার চাপও তো রয়েছে তাদের। এ জন্য মন-প্রাণ উজাড় করে দিয়ে ম্যাচে এগিয়ে যেতে হবে বাবর আজম বাহিনীকে।
মহারণের আগে ভারত ও পাকিস্তান দুই দলই বিশ্বকাপে দুটি করে ম্যাচ জিতে এসেছে। তাই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর দুই শিবিরই। শক্তির বিচারে কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই। বিশ্বমানের স্পিন অ্যাটাক, বিধ্বংসী পেস অ্যাটাক এবং দুই দলের ব্যাটিং লাইনআপও দুর্দান্ত। আশা করি, বিশ্বকাপের ফাইনালের মতোই সেরা দুটি দলের ক্রিকেট-মহাযুদ্ধ দেখা যাবে আহমেদাবাদের মাঠে।
ভারতের সবচেয়ে বড় তারকা ব্যাটার বিরাট কোহলি বিশ্বকাপে ভালো খেলছেন। প্রথম দুই ম্যাচেই দুটি অর্ধশত রানের ইনিংস উপহার দিয়েছেন। তার ওপর দল নির্ভর করবে। তবে পাকিস্তানি বোলারদের দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে তাকে। নির্ভরযোগ্য হতে পারেন কে এল রাহুলও। ধারাবাহিক ভালো খেলছেন তিনি। শুভমান গিলের অনুপস্থিতিতে রানে আছেন ইশান কিষানও। অধিনায়ক রোহিত শর্মা তো ব্যাট হাতে একের পর এক রেকর্ড গড়ে যাচ্ছেন। ভারতীয় এই ব্যাটিং লাইনআপকে ব্যর্থ করতে হলে অসাধারণ কিছু করে দেখাতে হবে পাকিস্তানি বোলারদের।
তবে শাহিন শাহ আফ্রিদি খুবই ভয়ংকর বোলার। তার বাঁহাতি মারাত্মক পেস বোলিং সামলানো কঠিন। অতীতেও ভারতীয় ব্যাটারদের ব্যর্থ করেছেন শাহিন। হারিস রউফ, হাসান আলির বোলিংও ধারালো। তবে পাকিস্তানি পেসাররা উইকেটের সুবিধা কতটা পাবেন, সেটার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। স্পিনেও শক্ত পাকিস্তান। শাদাব খানদের দেখে-শুনে খেলতে না পারলে বিপদ হতে পারে ভারতীয় ব্যাটারদের।
এদিকে পাকিস্তান দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার বাবর আজমের ব্যাটে রান দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচেই হতাশ করেছেন তিনি। তাকে আজ জ্বলে উঠতে হবে। গত ম্যাচে শফিক সেঞ্চুরি পেলেও ইমাম-উল হক রানে নেই। এটা পাকিস্তানের চিন্তার কারণ। তবে তাদের স্বস্তির বিষয় হলো মোহাম্মদ রিজওয়ান দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। একাই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন এই ব্যাটার।
অবশ্য পাকিস্তানি ব্যাটারদের জন্য জসপ্রিত বুমরাহ আতঙ্কের কারণ হতে পারেন। দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন ভারতীয় এই পেসার। আজ ঘরের মাঠে পরিচিত দর্শকদের সামনে খেলতে নেমে আরও ধারালো বোলিং উপহার দিতে পারেন এই বোলার। তবে তাদের নির্ভরযোগ্য পেসার সিরাজ ফর্মে নেই। তাকে স্বরূপে ফিরতে হবে।
স্পিনেও ভালো করছে ভারত। অভিজ্ঞ অশ্বিন, বৈচিত্র্যময় কুলদীপ ও জাদেজার হার না মানা মনোভাব কাজে আসতে পারে। অবশ্য স্পিন ভালো খেলেন বাবররা। সাবধান হয়ে ব্যাট চালাবেন তারা। সবচেয়ে বড় কথা, ভারত ও পাকিস্তান দলে বেশ কিছু অলরাউন্ডার আছেন, তারা যেকোনো সময় ম্যাচের রং পাল্টে দিতে পারেন।
আশা করি, সব মিলিয়ে উত্তেজনার বারুদ ছড়ানো নানন্দিক উপভোগ্য বিশ্বকাপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি ম্যাচ উপহার দেবে ভারত ও পাকিস্তান।
তবে আবহাওয়ার খবর রয়েছে, এ ম্যাচে নাকি বৃষ্টি বাধা দিতে পারে। সত্যি এমনটা হলে হতাশা ছাড়া কিছু পাবে না দর্শকরা।