দীর্ঘ চার বছর প্রতীক্ষার পর আজ বহুল আকাঙ্ক্ষার বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। বিশ্বকাপের শুরুতেই যে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে, সেটি বাড়িয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে ভারতে গেছেন সাকিব, মুশফিকরা।
আমি মনে করি, হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালা স্টেডিয়ামে সেই লক্ষ্য পূরণের পথের যাত্রা জয় দিয়েই শুরু করবে তারা। গত মাসেই তো এশিয়া কাপে আফগান-যোদ্ধাদের হারিয়ে দারুণ জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল টাইগাররা। বিশ্বকাপের বড় মঞ্চেও এগিয়ে থাকবে তারা। কেননা অতীত অভিজ্ঞতা, অর্জন ও বর্তমান দলটির সামর্থ্য-সবকিছু বিবেচনায় নিলে নাম্বার ওয়ান সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দলই এগিয়ে থাকবে।
বিশ্বকাপের মাঠের লড়াই শুরু হওয়ার আগে উত্তপ্ত ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন। তামিম ইকবাল বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ফিটনেস সমস্যার কারণে দলে জায়গা পাননি অভিজ্ঞ এই ওপেনার। ইনজুরি কাটিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি দেশসেরা এই ব্যাটার, তবে খেলতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে নিয়ে ঝুঁকি নেয়নি। এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দল থেকে বাদ পড়ার পর সেটি মেনে নিতে পারেননি তামিম-ভক্তকুল। আমিও মনে করি, বিশ্বকাপে তামিমকে অনেক মিস করবে বাংলাদেশ, তবে এখন এ বিতর্ক পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। অবশ্য সব পেছনে ফেলে মাঠের অনুশীলনে মনোযোগী হয়েছেন সাকিবরা। কীভাবে বিশ্বকাপে সফল হওয়া যায়, সে অনুযায়ী রণকৌশলের পরিকল্পনা করেছেন তারা। নিজেদের ভুল-ত্রুটি শুধরে নিয়েছেন। এরই মধ্যে বিশ্বকাপে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছেন তারা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ, তবে ইংল্যান্ডের কাছে লড়াই করে হেরেছে। এই দুই প্রস্তুতি ম্যাচে নিজেদের বেশ ভালোভাবে ঝালিয়ে নিয়েছেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেননি সাকিব। পায়ে চোট পাওয়ায় বিশ্রামে থাকেন তিনি, তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দলের নেতৃত্বে থাকবেন এই বিশ্ব তারকা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হলো বোলিং। বর্তমান সময়ে দলের পেস বোলিং ইউনিট দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে যাচ্ছে। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তাসকিন, মোস্তাফিজ, শরিফুল, হাসান মাহমুদরা। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছেন নবীন তানজিম হাসান সাকিব। স্পিনেও এগিয়ে থাকবে টাইগাররা। বাঁহাতি কার্যকরী স্পিনার নাসুম দলে আছেন। সাকিব, মিরাজরা সবসময়ের পারফরমার। বোলিং নিয়ে দুশ্চিন্তা না থাকলেও বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে ভাবার আছে। কেননা অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম দলে নেই। তাই উদ্বোধনী জুটিতে লিটনের সঙ্গে তানজিদ হাসান তামিমের প্রতি আস্থা রাখতে হচ্ছে। অবশ্য উদ্বোধনীতে ব্যাট হাতে মেহেদী হাসান মিরাজকে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না, তবে বড় স্বস্তির জায়গা হলো নাজমুল হোসেন শান্ত সেরা ফর্মে আছেন। টপ অর্ডার যদি ভালো করে, মিডল অর্ডারে চাপ কমে যায়। অবশ্য এখন লোয়ার অর্ডারেও গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। বরাবরের মতোই ফিল্ডিংয়ে সুনাম রয়েছে টাইগারদের। আমার মতে, সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মাঠের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশই।
অন্যদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান ক্রিকেটে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। মোহাম্মদ নবি, রশিদ খান, মুজিব-উর রহমানের সমন্বয়ে গড়া তাদের স্পিন বোলিং ইউনিট খুবই বিধ্বংসী, বিশ্বমানের। এটাই তাদের মূল শক্তির জায়গা। অবশ্য পেসার ফজল হক ফারুকির কথা আলাদা করে বলতেই হবে। চমক হতে পারেন তিনি। এ ছাড়া আফগান দলে বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান অলরাউন্ডার আছেন, যারা ব্যাটিং ও বোলিংয়ে বিশ্বমঞ্চে আলাদাভাবে আলো কাড়তে পারেন। সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি রান করার সামর্থ্য রয়েছে আফগানিস্তানেরও। তারা ছন্দে রয়েছে। গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে তিন ওয়ানডে ম্যাচের সিরিজ জিতেছে রশিদরা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য বড় পরীক্ষার নাম আফগানিস্তান।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলা