বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সহস্র দিনের মাইলফলক পেরিয়েছি, যেতে চাই বহু দূর

  • চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত   
  • ১ অক্টোবর, ২০২৩ ০৯:৩০

আমাদের চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ভাইরাসজনিত মহামারির রেশ না কাটতেই ইউক্রেন যুদ্ধে ভাঙতে থাকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিন্যাস। আমরা সেই কঠিন সময়ে ঝড়ের মুখে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছি। প্রতিটি সংকটকে সম্ভাবনায় রূপান্তরের চেষ্টা ছিল আমাদের। চেষ্টায় কতটা সফল হয়েছি, সেই বিবেচনার ভার পাঠকের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।

২০২০ সালের শেষ প্রান্তিক। দেশজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির থাবা। বেসরকারি অন্য অনেক খাতের মতো সংবাদমাধ্যমেও চরম অনিশ্চয়তা আর উদ্বেগ। ঠিক এমন সময়ে ‘খবরের সব দিক, সব দিকের খবর’ স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে আবির্ভাব হয় নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

ওই বছরের পয়লা অক্টোবর যাত্রা শুরু করা সংবাদমাধ্যমটি আজ পা রাখল চতুর্থ বছরে। দিবসের হিসাবে হাজার দিনের মাইলফলক অতিক্রম করেছে নিউজবাংলা। মহাকালের পরিক্রমায় একে অতি দীর্ঘকাল বলা না গেলেও সংবাদমাধ্যমের বাস্তবতায় নিজেকে জানান দেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সেই সময়ে অসীম চ্যালেঞ্জের মধ্যে অমিত সম্ভাবনার পথে চলার চেষ্টা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

স্লোগানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা শুরু থেকেই কোনো খবরের আদ্যোপান্ত জানানোর চেষ্টা করেছি পাঠকদের। সংবাদের পূর্ণাঙ্গ একটি গল্প বলেই আমরা দায়িত্ব শেষ করিনি; সেই সংবাদে নতুন মাত্রা যোগ হলে তা পাঠককে জানানোর তাগিদ অনুভব করেছি। আমাদের প্রতি আস্থা রেখে সেই প্রচেষ্টার প্রতিদান দিয়েছেন পাঠকরা।

সংবাদ পরিবেশনে পেশাদারত্ব ছিল সবসময়ই আমাদের প্রাধান্যের শীর্ষে, যে কারণে আগে দেয়ার উত্তেজনা সামলে দেরিতে হলেও সঠিক সংবাদটি পাঠকদের জানাতে চেয়েছি। এ মনোভাব পাঠকের কাছে অনেক সংবাদমাধ্যমের তুলনায় আমাদের ভিন্ন ভাবমূর্তি তৈরি করেছে।

যেকোনো সংবাদের গল্পের খণ্ডিত চিত্রের পরিবর্তে পূর্ণাঙ্গ দিক তুলে ধরার চেষ্টা ছিল বরাবরই, যা পাঠক মহলে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা ও পেশাদারত্বকে তুলে ধরেছে।

পেশাদারত্বের অংশ হিসেবে আমরা প্রথম দিন থেকেই রোজকার জনদুর্ভোগ, সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তিগুলোকে তুলে ধরেছি ধারাবাহিকভাবে। আমাদের এসব সংবাদে টনক নড়েছে দায়িত্বশীল মহলের, তৈরি হয়েছে ভোগান্তি কমার পথ।

সংকট ও সম্ভাবনা নিয়েই আমাদের জগৎ। বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে থাকা সম্ভাবনাগুলো আমরা তুলে ধরেছি। আমাদের রিপোর্টারদের বিরামহীন প্রচেষ্টায় অনুপ্রেরণা জোগানো অদম্য মানুষদের কথা উঠে এসেছে একের পর এক।

প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিনিয়তই বিপুলসংখ্যক মানুষের ভোগান্তির কারণ হচ্ছে। আমরা সেসব অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরেই দায়িত্ব শেষ মনে করিনি; সেসব অনিয়মের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা চালিয়েছি।

কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিকেন্দ্রিক উদ্যোগগুলোকে তুলে ধরাকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। শুরু থেকেই চাষি ও কৃষি উদ্যোক্তাদের সংকট ও সম্ভাবনাগুলোকে ধারাবাহিকভাবে আমরা সামনে এনেছি। স্থানীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়মিতই উঠে এসেছে আমাদের সংবাদ গল্পগুলোতে।

সুস্থ মানুষ ছাড়া উন্নত জাতি গড়া যায় না বলে আমরা বিশ্বাস করেছি। সুস্থতার জন্য প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধকে জরুরি মনে করা অনেক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে একমত হয়ে সেই দিকটিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন রোগের কারণ, লক্ষণ নিয়ে আমরা একের পর এক কনটেন্ট পরিবেশ করেছি। পাশাপাশি প্রতিকার নিয়েও কথা বলেছি।

স্বাধীনতার পর দেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও সমাজে উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ এখনও বাস্তবতা। আমরা তা ভাঙার চেষ্টা করেছি। আমরা কথা বলেছি জেন্ডার নিয়ে, সচেতন করার চেষ্টা করেছি পাঠকদের। আমরা অনেকের কাছে ‘ট্যাবু’ হয়ে থাকা নারী স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক ও যৌনতা নিয়ে কথা বলেছি। এ ধরনের কনটেন্ট পাঠক মহলে আমাদের ভিন্নতা তৈরি করেছে।

একটি দেশের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি তার অর্থনীতি। আমরা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে পাঠকদের নিয়মিত জানানোর চেষ্টা করেছি। আমরা উন্নয়নের মহাযজ্ঞগুলো যেমন তুলে ধরেছি, তেমনি বাধাগুলোও সামনে এনেছি।

সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব প্রচলিত ভুলগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জয়জয়কারের যুগে অসত্য তথ্যকে সত্য হিসেবে চালিয়ে দেয়া নতুন বিষয় নয়। আমরা সেসব অসত্যকে চ্যালেঞ্জ করে সত্য তথ্যটা পাঠকদের দেয়ার চেষ্টা করেছি।

আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই আমাদের সংবাদে স্থান পেয়েছে। আমরা শিশুদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক শক্তি হওয়ার চেষ্টা করেছি। তরুণদের কর্মসংস্থানসহ অন্য সমস্যাগুলো নিরসনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের তাগিদ অনুভব করেছি। বৃদ্ধদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়-অনিয়ম নিয়ে কথা বলাকে করণীয় মনে করেছি।

আমাদের চলার এ পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ভাইরাসজনিত মহামারির রেশ না কাটতেই ইউক্রেন যুদ্ধে ভাঙতে থাকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিন্যাস। আমরা সেই কঠিন সময়ে ঝড়ের মুখে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছি। প্রতিটি সংকটকে সম্ভাবনায় রূপান্তরের চেষ্টা ছিল আমাদের। চেষ্টায় কতটা সফল হয়েছি, সেই বিবেচনার ভার পাঠকের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।

শুরুর পর থেকে আমরা ধীরে ধীরে এক হাজার দিনের মাইলফলক পেরিয়েছি। এ যাত্রায় আমরা টিকে ছিলাম পাঠকের আস্থায়। আমরা টিকে আছি তাদের ভালোবাসায়। আমরা বহু দূর যেতে চাই পাঠকের ভরসায়।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলা

এ বিভাগের আরো খবর