বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জেল হত্যা রহস্যের পূর্ণ উন্মোচন হোক

  • ড. মো. শাহিনুর রহমান   
  • ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০৪

৩ নভেম্বর অভ্যুত্থানের কোনো কোনো অংশগ্রহণকারী ও সমর্থক পরে প্রচার করেছেন, তারা ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান ও জাতির পিতাকে হত্যার বদলা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ দাবি ভিত্তিহীন বলেই মনে হয়।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ডের পর সুদীর্ঘ ৪৭টি বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু কারাগারের নিরাপত্তা হেফাজতে চার জাতীয় নেতাকে কীভাবে কেন হত্যা করা হয়েছিল, কারা এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছিল, এর কুশীলব ও পেছনের সূত্রধর কারা ছিল- এসব রহস্যের আজও সুস্পষ্ট কিনারা হয়নি।

স্মরণ করা যেতে পারে, স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির মদদে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে আকস্মিক অভ্যুত্থানে জাতির পিতা, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে।

একই রাতে স্ত্রী-সন্তানসহ হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও তার মন্ত্রিসভার পানিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং ভাগ্নে ও বাকশালের অন্যতম সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণিকে।

এটা সুস্পষ্ট, জাতির পিতা ও তার বংশধারা নিশ্চিহ্ন করে দেয়াই ছিল অভ্যুত্থানকারীদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা এ সময় বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যাওয়ায় খুনিদের সুদূরপ্রসারী অসদুদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার আটদিন পর ২৩ আগস্ট গ্রেপ্তার হন তার দক্ষিণহস্ততুল্য চার শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, মুহাম্মদ মনসুর আলি ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা গ্রেপ্তার করার পর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে বছরের ১৭ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারে তিনি উপ-রাষ্ট্রপতি হন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদে তিনি শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি বাকশালের ভাইস-চেয়ারম্যান হন।

তাজউদ্দীন আহমদ মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদে তিনি অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

মুহাম্মদ মনসুর আলী মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের স্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন।

এ এইচ এম কামারুজ্জামান মুজিবনগর সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত সরকারেও একই দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

তখনকার পরিস্থিতিতে তাদের গ্রেপ্তার হওয়াটা অবধারিতই ছিল। কারণ কোনো প্রলোভনেই তারা যে অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে হাত মেলাবেন না সেটা সবাই জানত। অথচ তখন দলের দ্বিতীয় সারির নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ খুনিদের সঙ্গে আঁতাত করেন এবং তার নেতৃত্বে একটি সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে।

খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভার সব সদস্যই ছিলেন হত্যাকারীদের সঙ্গে হাত মেলানো আওয়ামী লীগার এবং এটা ছিল একটা আধা-সামরিক সরকার। অভ্যুত্থানকারী মেজর-ক্যাপ্টেনরাই এ সরকারের ওপর ছড়ি ঘোরাত। এ সরকারের পেছনে সেনা সমর্থন থাকলেও, বঙ্গভবনের ওপর তাদের পুরোপুরি কর্তৃত্ব ছিল না। সে সময়ে বঙ্গভবন পাহারার দায়িত্বে ছিল ৪৬ ব্রিগেডের দুটি কোম্পানি, যার নেতৃত্বে ছিলেন কর্নেল শাফায়াত জামিল।

২৪ আগস্ট তখনকার সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহকে সরিয়ে জিয়াউর রহমানকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। তখনকার চিফ অফ জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) খালেদ মোশাররফ আগের পদেই বহাল থেকে যান। কিন্তু ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী ৮০ দিনের মাথায় সিজিএস খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এক পাল্টা অভ্যুত্থান। শাফায়াত জামিল তার ব্রিগেড নিয়ে ২ নভেম্বর মধ্যরাতেই অভ্যুত্থান শুরু করে দেন।

৩ নভেম্বর অভ্যুত্থানের কোনো কোনো অংশগ্রহণকারী ও সমর্থক পরে প্রচার করেছেন, তারা ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান ও জাতির পিতাকে হত্যার বদলা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ দাবি ভিত্তিহীন বলেই মনে হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছিল। ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানকারীরা ১৫ আগস্টের আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চাইলে মুজিবপন্থি একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে পারতেন। এ জন্য তারা জেলবন্দি চার শীর্ষ নেতাকে বের করে এনে তাদের হাতে এ সরকার গঠনের ভার দিতে পারতেন। কিন্তু চার নেতার কথা তাদের দূরতম চিন্তা বা পরিকল্পনাতেও ছিল, এমন মনে করার কোনো প্রমাণ তখন দেখা যায়নি।

হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী পুরো একদিনেরও বেশি সময় কেটে যাওয়ার পরই কেবল তারা জানতে পারেন, চার নেতা জেলখানার ভেতরে নিহত হয়েছেন। জানার পরও এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা বা উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি।

প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাদেরকে দিয়ে যদি সরকার গঠন করার সদিচ্ছা থাকত, তাহলে তো প্রথম কাজটিই হওয়া উচিত ছিল তাদের নিরাপত্তার সুব্যবস্থা করা এবং তাদেরকে বঙ্গভবনে আনার উদ্যোগ নেয়া। সে রকম কিছুই কিন্তু তখন দেখা যায়নি। বরং স্বজনরা দোয়েল চত্বরের কাছে তিন নেতার মাজার প্রাঙ্গণে চার নেতাকে কবরস্থ করার উদ্যোগ নিলে তাদের সে অনুমতিও দেয়া হয়নি।

লক্ষণীয়, ৩ নভেম্বরের পাল্টা অভ্যুত্থানকারীরা ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের খলনায়কদের ৩ নভেম্বর রাতেই নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ দেয়। এর কারণ হিসাবে বলা হয়, গৃহযুদ্ধ বাধুক সেটা তারা চায়নি। দুই পক্ষের মধ্যে এই আপস-মীমাংসায় মধ্যস্থতা করেছিলেন তখনকার রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল (অব.) এম এ জি ওসমানী এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান।

এর ঠিক দুদিন পর ৫ নভেম্বরই মোশতাককে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক অভ্যুত্থানকারীরা। এভাবে চিরকালের জন্য ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হন বাংলার ইতিহাসের দ্বিতীয় মীরজাফর খন্দকার মোশতাক।

তারপরও একটা জিজ্ঞাসা থেকেই যায়, চার নেতাকে কেন খুন করা হয়েছিল। তারা তখন কারাবন্দি ছিলেন, ৩ নভেম্বরের পাল্টা অভ্যুত্থানকারীদের পরিকল্পনায়ও তারা ছিলেন না। তাহলে কেন হঠাৎ করে তাদের হত্যা করা হল? এর পেছনে কি অন্য কোনো মহলের অন্য কোনো পরিকল্পনা ছিল?

স্মরণ করা যেতে পারে, পাল্টা অভ্যুত্থানের পরদিন ৪ নভেম্বর ঢাকায় বাকশালের ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে একটি শোকমিছিল বের করা হয়েছিল। খালেদ মোশাররফের মা এবং ভাইও সে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। মিছিলের আয়োজকেরা কিন্তু তখনও জানতেন না, এর আগেই জেলের ভেতরে চার নেতাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তাহলে কেন, কিসের ভরসায় তারা এমন মিছিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?

আরেকটি জিজ্ঞাস্য হল, পাল্টা অভ্যুত্থানকারীরা জেলহত্যার আশঙ্কা বা পরিকল্পনার কথা কি আগেভাগে কিছুমাত্র টের পাননি? ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থান দুটি ঘটিয়েছিল সেনাবাহিনীর মধ্যস্তরের কর্মকর্তাদের দুটি গ্রুপ। তাদের পারস্পরিক সম্পর্কে তেমন কোনো দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধের কথা জানা যায়নি। হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে মোশতাক ও জিয়াউর রহমানের দিকে আঙুল তোলা হলেও সংশ্লিষ্ট আরও অনেককেই সন্দেহের বাইরে রাখা যায় না।

জেলহত্যার বিচার শুরু হয় হত্যাকাণ্ডের ২৯ বছর পর ২০০৪ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের শাসনামলে। ওই বছরের ২০ অক্টোবর দেয়া আদালতের রায়ে তিনজন পলাতক সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড, ১২ সেনা কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়া হয়। তবে অভিযুক্ত বিএনপির চারজন সিনিয়র নেতাসহ পাঁচজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।

আরও চার বছর পর ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে হাইকোর্ট জেলহত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছয়জন সামরিক কর্মকর্তাকে বেকসুর খালাস দিয়ে দেয়। তবে তাদের মধ্যে চারজন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দীন আহমেদকে বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১০ সালে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

খালাসপ্রাপ্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে, যার চূড়ান্ত রায় এখনও পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে গভীরতম শোক ও কলঙ্কের মসীলিপ্ত দুটি দিন হলো ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। পাকিস্তানপন্থি স্বাধীনতাবিরোধী সামরিক-বেসামরিক চক্র এ দুই দিনে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদাতা বঙ্গবন্ধুকে, তার রক্তসম্পর্কিতদেরকে এবং তার প্রধান সহায়ক চার নেতাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সমূলে বিনাশ করতে চেয়েছিল।

এ দুই দিনে তারা আমাদের শিরদাঁড়ায় যে মারণ আঘাত হেনেছিল, তার জের এখনও আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এরপর দীর্ঘ দুই দশক ধরে তারা আমাদের অবনত করে রেখেছিল, রাজাকার-আলবদরদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছিল, খুনিদের পুনর্বাসিত করেছিল, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে তাদের বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতি আজ ফিনিক্স পাখির মতো পুনরায় ভষ্মস্তূপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু খুনিদের অপচ্ছায়া এখনও বাংলার ভাগ্যাকাশ থেকে সম্পূর্ণ দূরীভূত হয়নি। এখনও জাতীয় পতাকা বার বার খামচে ধরতে চায় পুরনো শকুনেরা। ১৯৭৫ সালের দুটি তারিখ ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর এখনও আমাদের চেতনায় কালো ছায়া বিস্তার করে থাকে।

আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী খুনিদের আর খুনের মদদদাতাদের মধ্যে যাদের পরিচয় এখনও জনসমক্ষে উদ্ঘাটিত হয়নি, তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় এনে জাতির ভবিষ্যতকে শঙ্কামুক্ত ও বিবেককে ভারমুক্ত করুন।

১৫ আগস্ট আর ৩ নভেম্বরের মতো ভয়াল দিনের মুখোমুখি জাতিকে আর কখনও যেন হতে না হয়, তা যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করার মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সভ্য জাতি হিসাবে বিশ্ব সমাজে আমাদের উঁচু মাথা অনাগত দিনগুলোতে আরও উঁচু করতে হবে।

লেখক: কলামিস্ট, শিক্ষাবিদ, গবেষক, ফোকলোরিস্ট; অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ ও সাবেক উপ-উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

এ বিভাগের আরো খবর