বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেখ হাসিনা মানবকল্যাণের জন্যই ফিরে আসেন

  • হীরেন পণ্ডিত   
  • ১৮ মে, ২০২২ ১৬:২১

একজন ব্যক্তি অদম্য সংকল্প এবং কঠোর নিষ্ঠার সঙ্গে ভয়ের কালো মেঘকে সরিয়ে দেন, দেশের মানুষ আশার আলো দেখে। তার পরিচয় প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতার চেয়ে বেশি তিনি এক অদম্য সাহসী মানুষ। তিনি একজন যোদ্ধা ও অভিভাবক। তিনি সাহসিকতার সঙ্গেই কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করছেন, এখন এটি বিশ্বের সেরা উদাহরণ এবং বিশ্ব নেতারা বিশ্বব্যাপী সংকট পরিচালনার জন্য তার উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।

গতকাল ১৭ মে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪২তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ছিল। ১৯৮১ সালের এই দিনে প্রায় ৬ বছর নির্বাসনে থাকার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতকদের ষড়যন্ত্র আর অনিরাপত্তার কারণে পরিবারের সবাইকে হারানোর পরেও দীর্ঘ ৬ বছর দেশে ফিরতে পারেননি তারা।

প্রতিকূলতার মাঝেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এক সময় চাঙা হয়ে ওঠেন; নতুন করে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বলীয়ান হন। তখন শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই নেতা-কর্মীরা কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন।

১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। শেখ হাসিনা সবচেয়ে দুঃসময়ে দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রামে অনেক সর্বদা লড়াই করেছেন। তিনি বার বার মৃত্যুর দ্বার থেকে ফিরে এসেছেন। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে একটি জনপ্রিয় দল হিসেবে ক্ষমতায় এনেছেন এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে যে অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছিলেন তা হলো- বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার এবং পরে ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। আর সেই সুযোগ এসেছিল বাঙালি জাতির আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের হাতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর কালো অন্ধকার গ্রাস করেছিল, সেই অন্ধকার তাড়াতে প্রথমে আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন তিনি। সে মশাল, প্রাথমিক সংকট- সীমাবদ্ধতার পর দিকে দিকে আলোকিত করতে থাকে, শুরু হয় রাহু মুক্তির পালা। সব আবর্জনা দূর করতে প্রভাতে যেমন বাঙালি একাকার হয়, প্রতিশ্রুতিতে সমৃদ্ধ হয়, তেমনি এক শুভ প্রতিশ্রুতির বাতাস বইতে দেখা যায় তার দেশে ফেরার দিন থেকে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণ, বিকাশ এবং মুক্তির লক্ষ্যে অগ্রণী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য তার বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সততা-নিষ্ঠা, যুক্তিবাদী মানসিকতা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা এবং অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব অঙ্গনে এক ভিন্ন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি বিশ্ববিখ্যাত নেতা হিসেবে পরিচিত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এখন আওয়ামী লীগ ১৪ বছর ক্ষমতায় রয়েছে এবং তিনি জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার অদম্য শক্তি-সাহস, মনোবল এবং দৃঢ় নেতৃত্বে বিশ্ব অবাক করে।

২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ২৩তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ একটি ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে এবং ২০৪১ সালে একটি ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ টি মাইলফলক দিয়েছেন প্রথমটি হল ডিজিটাল বাংলাদেশ যা ইতিমধ্যে একটি পর্যায়ে এসছে, দ্বিতীয়টি ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট (এসডিজি) অর্জন করা, তৃতীয়টি ২০৪১ সালে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার এবং চতুর্থটি ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন।

চল্লিশ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এটি একটি অনন্য অর্জন এই ৪০ বছর তিনি শুধু যে আওয়ামী লীগের সভাপতি আছেন তা নয়, তার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত এবং দলের একজন নেতাকর্মীও মনে করেন না যে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প আছে। এটি একজন রাজনৈতিক নেতার অসাধারণ প্রাপ্তি। আর সে কারণেই তারা মনে করে যে শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্র শেখ হাসিনাই।

আওয়ামী লীগ সভাপতির সাফল্যের একটি বড় দিক হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন। তিনি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে রূপ দিয়েছেন। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু থেকে শুরু করে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশকে মনে করা হয় উন্নয়নের রোল মডেল, এটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে। আত্মমর্যাদা এবং নিজের টাকায় পদ্মা সেতু।

শেখ হাসিনা কেবল বাংলাদেশকে উন্নত এবং অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেননি, বাংলাদেশকে একটা আত্মসম্মান মর্যাদায় নিয়ে গেছেন। বিশ্বব্যাংক যখন বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নিয়ে আপত্তি ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল তখন প্রধানমন্ত্রী সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন যে পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। শুধু পদ্মা সেতু নয়, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ বিভিন্ন দৃশ্যমান উন্নয়ন এখন বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদার এক অনন্য জায়গায় নিয়ে গেছে, যেটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশে যখন সংকট তীব্র হয়, যখন সবকিছু আবর্তিত হয় অনিশ্চয়তায়, বাংলার আকাশে কালো মেঘ জমে থাকে, তখন শেখ হাসিনাই আমাদের ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়ান। একজন ব্যক্তি অদম্য সংকল্প এবং কঠোর নিষ্ঠার সঙ্গে ভয়ের কালো মেঘকে সরিয়ে দেন, দেশের মানুষ আশার আলো দেখে।

তার পরিচয় প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতার চেয়ে বেশি তিনি এক অদম্য সাহসী মানুষ। তিনি একজন যোদ্ধা ও অভিভাবক। তিনি সাহসিকতার সঙ্গেই কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করছেন, এখন এটি বিশ্বের সেরা উদাহরণ এবং বিশ্ব নেতারা বিশ্বব্যাপী সংকট পরিচালনার জন্য তার উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।

এই চার দশকে তিনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য লড়াই করেছেন। সংগ্রামের এই গতিপথ ছিল প্রতিকূল। শেখ হাসিনা, যিনি অলৌকিকভাবে ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় বেঁচে যান। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ।

আমরা আমাদের অর্থনীতি এবং সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে একবার নজর দিতে পারি। ২০০৮-০৯ সালে গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের (জিডিপি) পরিমাণ ছিল মাত্র ১০৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০-এ এটি বেড়ে দাঁডিয়েছে ৩৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৮-০৯ সালে রপ্তানি আয় ছিল ১৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৮-১৯ সালে, এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০.৫৪ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৪৪.০৩ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ২০০১ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৭.৯ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৪.৩ শতাংশ। ২০২০ সালে দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ১০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত উনয়ন প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাই-টেক পার্ক এবং আইটি গ্রাম নির্মিত হচ্ছে।

কৃষি-শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আধুনিক প্রযুক্তি সবকিছুর অপূর্ব সমন্বয় ঘটাতে নতুন পরিকল্পনা, চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। বাংলাদেশ আমূল বদলে যাচ্ছে টেকসই উন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এদেশ। দুর্বল, অনুন্নত, নড়বড়ে অবস্থা থেকে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

প্রচলিত অবকাঠামোর আধুনিক রূপান্তর সম্ভাবনার নতুন দিক উন্মোচন করছে প্রতিদিন। যেসব খাত কিংবা ব্যবসা আগে অবহেলিত অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে চলছিল; সেগুলোতে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। অমিত সম্ভাবনার হাতছানি এদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত, আগ্রহী করে তুলছে। অবহেলায়, অযত্নে লালিত সেই সম্ভাবনাময় খাতগুলো ক্রমেই জেগে উঠছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ, দপ্তর, মন্ত্রণালয়গুলো সময়ে সময়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। ফলে সম্ভাবনার নতুন খাতের বিকাশ ঘটে চলেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য রকমের। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৪১তম স্থানে উঠে এসেছে।

শিক্ষায় উন্নতি, যোগাযোগের অবকাঠামো, নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ, সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষার সোশ্যাল সেফটি নেট সাপোর্ট প্রদান, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের সহযোগিতা, অটিজম, প্রধানমন্ত্রীর সরকারের প্রধান উদ্যোগসমূহ বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে মর্যাদা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়ন তার সরকারেরই অবদান।

আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এটিই বর্তমান নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের কাণ্ডারি, আমাদের ভরসা ও আশ্রয়স্থল।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

এ বিভাগের আরো খবর