আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আর প্রতিষ্ঠানটি একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়ে প্রস্তুত করছে নির্বাচনী রোডম্যাপ।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরের মধ্যে মূল প্রস্তুতির কাজ সীমানা নির্ধারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কার, আচরণবিধিমালা জারি, ভোটার তালিকাসহ সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ছোট-খাট সহ অন্তত ৪৪টি সংস্কার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যা শীঘ্রই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে ইসি।
এদিকে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সারা বাংলাদেশের মত কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সদস্য এবং নেক্সাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি, আনছারিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বিজিএমইএ ফোরামের মহাসচিব ও বিজিএমইএ পরিচালক -- ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছেন দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার কাজে। তবে গ্রুপিং দ্বন্দ্বে দিশেহারা লাকসাম-মনোহরগঞ্জের তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে আশার আলো জুগিয়েছেন দুর্দিনে দলের হাল ধরা নেতা ড. হোসাইনী।
সাবেক ডাকসু সদস্য ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী নিউজবাংলা২৪.কমকে একান্ত স্বাক্ষাৎকারে এলাকার উন্নয়নে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা জানান।
ড. হোসাইনী বলেন, আমার এলাকার শিক্ষিত,আধা শিক্ষিত এবং সব শ্রেণীর মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আর সব চেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমি এলাকায় গেলে, আমার কোন সিকিউরিটি লাগে না, আমার কোন বডিগার্ড লাগে না। আমার কাছে সাধারণ মানুষরা খুব সহজেই কাছে আসতে পারে। আর আমি এলাকার মানুষকে বেশি ভালোবাসায় তারা সহজেই আমাকে গ্রহন করে। আমি ছাত্রদল-যুবদল করে আজ বিএনপিতে এসেছি। আমি বিএনপিতে সংস্কার, আবিস্কার ও বহিষ্কার নই। আমি কখনও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। আমি যেদিন থেকে পয়সা কামানো শুরু করেছি ওই দিন থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।
অতীত আর বর্তমান নিয়ে বিএনপির এই নেতা প্রসঙ্গ ক্রমে বলেন, ১৯৭১ সালে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির কথা বলা হয়েছে। এখন যে প্রেক্ষাপট এসেছে আদম শুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি হলেও পক্ষান্তরে মানুষ কিন্তু আরও বেশি। যার কারণে প্রশাসনিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার স্বার্থে অনেকগুলি থানা, জেলা এমনকি বিভাগও বাড়িয়েছে। এর অংশ হিসেবে লালমাই (লাকসাম) থানা হয়েছে।
যখন ১৯৯৮ সালে আমি বৃহত্তর লাকসাম-এর যুবদলের আহ্বায়ক ছিলাম, তখন লালমাই আমাদের ছিল। আজকে যারা বিএনপি করে, তারা আমার হাতেই সৃষ্টি। আমি তখন যাদের সাথে বিএনপি করেছি তাদের মধ্যে আকতার ভাই,অলিউল্লাহ,সোলায়ইমান চেয়ারম্যান সহ অনেকে এখন নাই। আর লাকসাম যারা রাজনীতি করে তার মধ্যে বহুল আলোচিত শ্রদ্ধেয় বড় ভাই আবুল কালাম (চৈতী কালাম) আমরা একই ইউনিয়নের। তিনি ২০০১ সালে বিএনপিতে পদার্পণ করে। এটা উনার বক্তৃতা ও বিবৃতিতে উনি সদা বলেন।
১৯৯৬ সালে বিএনপি পরাজিত হবার পর ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে বিএনপির পক্ষ থেকে লাকসামে কথা বলার লোক ছিল না।
১৯৯১ সালে আলমগীর সাহেব এমপি হওয়ার পরেও দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে ব্যর্থ হন।উনি সাংগঠনিকভাবে তেমন তুখোর কোনো রাজনীতিবিদও ছিলেন না।
এ টি এম আলমগীর সাহেব এর আগে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ১৯৯১ সালে নমিনেশন দেওয়ার পর থেকেই তিনি বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। তিনি বিএনপির কর্মী বা নেতা হিসেবে নমিনেশন নেয়নি। উনি তখন চাকরি করতেন । নমিনেশন কনফার্ম করার পরে চাকরি ছেড়ে দেন। দলের নেতাকর্মীদের সাথে তার সে সময় তেমন যোগাযোগ না থাকার কারণে সুসংগঠিত করতে পারেননি, যার ফলে লাকসামে নেতাকর্মী দের মাঝে একটা বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল।আর বিভেদ সৃষ্টি হওয়ার কারণে ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার দাবিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পাস করতে পারেনি।উপ নির্বাচন করে পাস করতে হয়েছে।
বিএনপি নেতা ড. হোসাইনী আরো বলেন, পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচনে মোকসেদ আলী সাহেব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং বিএনপি নেতারা তার সাথে চলে যাওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে বিএনপি’র হাল ধরার লোক ছিল না।তখন বৃহত্তর লাকসাম উপজেলার বিএনপির সভাপতি প্রয়াত নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবু নাসের ভূঁইয়া,আমি, নুরুন্নবী চৌধুরী (ছাত্রদলের দায়িত্বে ছিল), সার্বিক দায়িত্বে আরও ছিলেন সাবেক এমপি রাশেদা বেগম হীরা,কাজী আবুল বাশার (শিল্প ব্যাংক কর্মকর্তা-করমচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক), গিয়াসউদ্দিন কালু(আদমজী জুট মিলের সিবিএ, সাধারণ সম্পাদক), এ,কে,এম আতিকুর রহমান লিটন (বৃহত্তর লাকসাম উপজেলা বিএনপি সদস্য)।
আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম। তৎকালীন জননেতা মির্জা আব্বাস যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জননেতা বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র।তখন আমরা কুমিল্লার অবিসংবাদিত নেত্রী রাবেয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর ভাই,শাহ মোহাম্মদ সেলিম সবাই মিলে লাকসাম বিএনপি সুসংগঠিত করতে নানান ভাবে চেষ্টা করেও স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে এক করতে পারছিলাম না। এবং আমরা কাকে দিয়ে দল গোছাবো এর জন্য উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ঠিক সেই সময়ে আমাকে যুবদলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন কেন্দ্রীয় নেতা বাবু গয়েশ্বর চন্দ্রসহ সিনিয়র নেতাদের কথা অনুযায়ী আমি বৃহত্তর লাকসামের যুবদলের দায়িত্ব নেই। আর আমি ছাত্রদল যুবদল করার পরেই কিন্তু ওই সময় বিএনপি শুরু করি।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হোসাইনী বলেন, আমার রাজনীতির জন্ম ১৯৮৬ সালে ছাত্রদলের রাজনীতির মাধ্যমে। আমি ১৯৯০ সালে নির্বাচিত ডাকসুর মেম্বার ছিলাম। ১৯৮৬ সালে সর্বকনিষ্ঠ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলাম। ১৯৯৪ সালে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম। পরবর্তীতে দাদা গয়েশ্বর সভাপতি থাকাকালীন সময়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় শ্রম বিষয় সম্পাদক ছিলাম। এরপরে আমি ঢাকায় এসে ব্যবসা শুরু করি। আর তখন প্রথম ২০০৭ সালে নির্বাচিত বিজিএমইএর পরিচালক হয়েছি। এবং সে সময়েই কুমিল্লা জেলা বিএনপি কমিটির আমি সদস্য ছিলাম। সামনে পূর্নাঙ্গ কমিটি আসছে, দলের স্বার্থে আশা করি তারা অবশ্যই আমাকে রাখবে হয়তো। তাই সবার উদ্দেশ্যে বলবো দলের জন্য আমাদের ত্যাগ, দলের জন্য শ্রম, দলের জন্য আমার কমিটমেন্ট যেমন ছিল, তেমনি আছে এবং ভর্বিষৎতেও থাকবে। মনে রাখতে হবে সবার আগে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের নির্বাচন প্রেক্ষাপট নিয়ে ড. হোসাইনী বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তারুণ্যের যে চাহিদা বিশেষ করে আমাদের অবিসংবাদিত নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব, উনি যে ভাবে মর্যাদাপূর্ণ দেশ গড়ার লক্ষ্যে ৩১ দফা দিয়েছেন এটা দেশ গড়ার জন্য তরুণদের কাজে আসবে। একটা কথা আছে,এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় তার। সোনার বাংলা গড়তে হলে যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে।
হোসাইনী আরো বলেন, যারা সত্যিকার অর্থে এই দলের একনিষ্ঠ কর্মী, যারা ছাত্রদল করেছে, যারা যুবদল করেছে, যাদের ছাত্রদল, যুবদলের ট্যাগ রয়েছে, যারা দুঃসময়ে দল থেকে সরে যায়নি, যাদের ক্লিন ইমেজ, যাদের চরিত্রে দোষ খুঁজে পাবেন না, শিক্ষিত এবং যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, মাদকাসক্ত নয়,যাদের রাজনীতি করার ক্যাপাসিটি আছে,গ্রহণযোগ্যতা আছে তাদেরকে তারেক রহমান মূল্যায়ন করবে এটা আমার বিশ্বাস। আমার প্রত্যাশা,দল যদি ভালো মনে করে আমাকে নমিনেশন দেয় আমি দল ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করব। আর যদি দল মনে করে আমার চেয়ে ভালো কেউ আছে,তাহলে আমি মাথা পেতে নেব। এক কথায় দলের সাথে আমি কোনদিন বিরোধিতা করি নাই আর কোন দিন করবো ও না। সামনে নির্বাচন, আমি চাই সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। মানুষ তার পছন্দের প্রার্থীকে খুঁজে পাক।
দেশের নতুন প্রেক্ষাপটে গণ-অভ্যুত্থান প্রসঙ্গ নিয়ে ড. হোসাইনী বলেন, যে রক্তের বিনিময়ে আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম তখনও আমরা পুরোপুরি স্বাধীন হতে পারিনি। আমরা ৯০ এর গণ-অভ্যুত্থান করেছি স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে, তখনও আমরা স্বাধীন হতে পারিনি, যার কারণে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান করতে হয়েছে যেটা ৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্ট যেটাই বলি না কেন। আমি আশা করি, যারা শহীদ হয়েছে, রক্ত দিয়েছে সেই শহীদদের রক্তের সাথে কেউ বেইমানি করবেন না।
হোসাইনী আরো বলেন,একটা সত্যিকার চাঁদাবাজ মুক্ত,মাদকমুক্ত,সামাজিক স্থিতিশীলতা, আইনের শাসন, দুর্নীতিমুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ় কমিটমেন্ট ও তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশ ও দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবো অনন্য উচ্চতায়।
তিনি বলেন, কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) বা লালমাই আমি মনে করি, বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে নির্বাচন করার জন্য আমি প্রস্তুত আছি। আমি বাংলাদেশের কোন আসনেই ভয় পাই না। আমি মনে করি সারা বাংলাদেশ আমাদের, আমাদের প্রতীক একটাই “ধানের শীষ” আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ, আমার নেতা তারেক রহমান। আমাদের আদর্শ ৩১ দফা। তারেক রহমানের নেতৃত্বেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ এবং ধানের শীষের বিজয় হবে ইনশাল্লাহ।
এলাকার জনগণের উদ্দেশে ড. হোসাইনী বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে চাই; তারা এখন পর্যন্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে নাই। তারা সবাই প্রতিবাদ মুখর। একসাথে আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বো, আমরা কোন চাঁদাবাজ, দখলবাজ মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তকে প্রশ্রয় দিবো না এবং সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাব।যারা এই অপকর্ম করবে আপনারা সাংবাদিকগন স্থানীয় জনগণ থেকে খোঁজ খবর নিয়ে সত্য প্রকাশ করুন। ইনশাল্লাহ সুদিন আমাদের আসবেই।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোঃ সোহেল রানা- প্রতিবেদকঃ নিউজবাংলা২৪.কম