বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিশ্ব ওভারিয়ান ক্যানসার দিবস: লজ্জা যেন না হয় ক্ষতির কারণ

  • রাফে সাদনান আদেল   
  • ৮ মে, ২০২২ ১৩:০৬

নিজেদের শরীর বিশেষ করে লজ্জাস্থানগুলোতে জমাট বাঁধা অযাচিত চাকা বা টিউমারগুলোর কথা তারা কারো সঙ্গে শেয়ার করেন না। এমনকি শেয়ার করেন না তার স্বামীর সঙ্গেও। প্রথম লজ্জা তারপর তা কেটে ফেলার ভয় কাজ করে প্রবলভাবে। এছাড়া চিকিৎসাব্যয়ের কথা তো আছেই। এমন নানাবিধ কারণে তারা শরীরে জিইয়ে রাখে টিউমার। আর সেই টিউমার একসময় লাজ-লজ্জার বালাই উতরে হয়ে ওঠে ক্যানসার।

ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশন বলছে, বর্তমানে যেমন আছে, সেভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ শুধু ওভারিয়ান ক্যানসারেই প্রাণ হারাবে! কী ভয়ানক তথ্য! এরপরও কি আমাদের টনক নড়বে না?

ক্যানসার আক্রান্তের পরিসংখ্যানে চোখ বুলিয়ে নিলে বোঝাই যায় কিভাবে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্যানসারের প্রকোপ। নারী-পুরুষ সমানে সমান এই একটি জায়গায়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীরা ভুগছে বেশি। মূলত, তারা ভোগে স্তন, জরায়ু ও ওভারির ক্যানসারে। যার কারণ অসচেতনতা-লজ্জা, ভয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

২০১০ সালে আমার জীবনেও ক্যানসার শব্দটি এসেছিল। মা আক্রান্ত হয়েছিলেন ওভারিয়ান ক্যানসারে। আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ওভারিয়ান ক্যানসার দিবস তাই লিখতে বসলাম কিছু অভিজ্ঞতার কথা।

আমাদের মায়েদের শরীরের ব্যাপারে সামাজিকভাবেই অনেক লজ্জা কাজ করে, ভয় কাজ করে। মধ্যবিত্ত আর নিন্ম মধ্যবিত্তদের জন্য এই লজ্জার পারদটা একটু বেশিই। নিজেদের শরীর বিশেষ করে লজ্জাস্থানগুলোতে জমাট বাঁধা অযাচিত চাকা বা টিউমারগুলোর কথা তারা কারো সঙ্গে শেয়ার করেন না। এমনকি শেয়ার করেন না তার স্বামীর সঙ্গেও। প্রথম লজ্জা তারপর তা কেটে ফেলার ভয় কাজ করে প্রবলভাবে। এছাড়া চিকিৎসাব্যয়ের কথা তো আছেই। এমন নানাবিধ কারণে তারা শরীরে জিইয়ে রাখে টিউমার। আর সেই টিউমার একসময় লাজ-লজ্জার বালাই উতরে হয়ে ওঠে ক্যানসার।

আর সেকারণেই ক্যানসার অনেক পরিণত হয়ে ধরা পড়ে আমাদের মা-বোনদের শরীরে। তখন চিকিৎসাপদ্ধতি এবং ব্যয় উভয়ই চলে যায় নাগালের প্রায় বাইরে। কিন্তু যদি প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরে ফেলা যেত তবে কিন্তু কোনো ভোগান্তিই পোহাতে হতো না। মাত্র ২০ টাকায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে হয় টিউমার টেস্ট। ঝুঁকিপূর্ণ টিউমার ফেলে দিতেও তেমন একটা খরচ হয় না। আর হলেও তা ক্যানসার চিকিৎসার চেয়ে অনেক সহজলভ্য। অনেকের তো শুধু মুখে খাওয়ার ওষুধেই সেরে যেতে পারে ক্যানসার।

এখন তো প্রায় সব বিভাগীয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোয় আছে ক্যানসার ইউনিট। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যয়বহুল ক্যানসার চিকিৎসার ওষুধগুলোও বিতরণ হচ্ছে প্রায় বিনামূল্যে। তাই ক্যানসারকে আর ভয় নয়।

একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন, আমাদের মতো দেশের মানুষের জন্য ক্যানসারের আর্লি ডিটেকশনের কিন্তু আসলে কোনোই বিকল্প নেই। এর জন্য চাই একটু সচেতনতা আর পাশের মানুষের সহযোগিতা। যেকোনা টিউমারকে অবহেলা করা উচিত নয়। জানানো উচিত কাছের মানুষকে, আর তারপর সময় নষ্ট না করেই নেয়া উচিত চিকিৎসা। এতে করে শুধু আপনিই বাঁচবেন না বেঁচে যাবে পুরো পরিবার। ক্যানসার চিকিৎসায় কত শত পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। পরিবারের আপনজনের কথা ভেবে হলেও আসুন সচেতন হই।

প্রতিটি পরিবারের নারীদের মন খুলে কথা বলার পরিবেশ তৈরি করি। তাদের চিকিৎসায় অধিক মনযোগী হই। ছোট্ট খানিকটা লজ্জা অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে পারলেই আমরা জয় করতে পারব ক্যানসারকে। আসুন আমরা ‘লজ্জা-শরমকে দূরে ঠেলি, ক্যানসারকে চিনে ফেলি- শুরুতেই’। পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলি সুন্দর একটা জীবন।

লেখক: বোর্ড ডিরেক্টর, ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশন।

এ বিভাগের আরো খবর