বাংলা নববর্ষ এখন বিশ্বের প্রায় তিরিশ কোটি বাঙালির প্রধানতম ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব। নববর্ষ ছাড়া বাঙালির অন্য সব সামাজিক উৎসবের সঙ্গে ধর্মীয় অনুষঙ্গ যুক্ত রয়েছে। বাঙালি মুসলমানদের ঈদ, হিন্দুর দুর্গাপূজা, বৌদ্ধদের বৌদ্ধপূর্ণিমা কিংবা খ্রিস্টানদের বড়দিনের উৎসবে সব ধর্মের মানুষের আগ্রহ গত কয়েক দশকে বাড়লেও ধর্মীয় মোহরের বাইরে ১ বৈশাখই একমাত্র উৎসব, যা আবহমান বাংলার মেলা, সঙ ও গাজনের সীমানা অতিক্রম করে নগরে প্রবেশ করেছে এবং বাংলাদেশের সব ধর্ম, জাতিসত্তা ও ভাষাভাষি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।
দুশ বছর আগে জমিদারিপ্রথা প্রবর্তনের পর এ দেশের জমিদাররা অর্থনৈতিক প্রয়োজনে বাংলা নববর্ষকে সামাজিক উৎসবে রূপান্তরিত করেন। রাজধানী ঢাকায় ব্যবসায়ীদের হালখাতার গণ্ডি পেরিয়ে বৈশাখের প্রথম দিনটি শেকড়সন্ধানী বাঙালির মিলনমেলায় পরিণত হওয়ার সূচনা ঘটেছে গত শতাব্দীর ষাটের দশকে। ছায়ানটের উদ্যোগে ঢাকায় বাংলা নববর্ষ প্রথম কয়েক বছর উদযাপিত হয়েছে বলধা গার্ডেনে।
জনসমাগম বাড়ার কারণে ১৯৬৭ সাল থেকে মূল আয়োজন রমনার বটমূলে স্থানান্তরিত হয়েছে। ছায়ানটের শিল্পীরা বৈশাখের প্রথম সূর্যোদয়ের মুহূর্তে রমনা পার্কের বটমূলে রবীন্দ্রনাথের বর্ষবন্দনার মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করেন। এরপর যুক্ত হয় চারুকলা ইন্সটিটিউটের ছাত্র-শিক্ষকদের মঙ্গল শোভাযাত্রা, যেখানে অংশগ্রহণ করে সর্বস্তরের মানুষ। রাজধানীর বাইরে বাংলাদেশে এমন কোনো জনপদ নেই, যেখানে ঘটা করে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয় না। ১ বৈশাখ এদেশের আদিবাসীদেরও উৎসবের দিন।
ষাটের দশকের শুরুতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বলা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ হিন্দু, ভারতীয়; পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থি। এর আগে তারা বাংলাকে হিন্দুদের ভাষা হিসেবে অভিহিত করে এর ইসলামিকরণের এক হাস্যকর অথচ ভয়ংকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।
পঞ্চাশের দশকে বাঙালি যেমন বাংলা ভাষার ইসলামিকরণের চক্রান্ত প্রতিহত করেছিল দুই বাংলার খ্যাতিমান লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের মহাসম্মেলন আয়োজন করে, ষাটের দশকের শুরুতে সাড়ম্বরে পালন করেছিল রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী। এরই ধারাবাহিকতায় বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করবার জন্য ‘ছায়ানট’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’, ‘সন্দীপন’ প্রভৃতি সাংস্কৃতিক সংগঠন জন্মলাভ করেছে। ছায়ানটই উদ্যোগ নিয়েছিল রাজধানী ঢাকায় সাড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের, যে সংগঠনের মধ্যমণি ছিলেন ওয়াহিদুল হক ও সানজিদা খাতুন শিল্পী দম্পতি। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ছায়ানটের এই প্রতিবাদ এখন সহস্র সংগঠনের বহুমাত্রিক মহোৎসবে পরিণত হয়েছে।
ষাটের দশকে রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা মূর্ত হয়েছে ১৯৭০-এর জাতীয় নির্বাচনে এবং পরিণতি লাভ করেছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ভেতর ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্র তৈরি করেছে ষাটের দশকের সাংস্কৃতিক আন্দোলন, যা ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধেরও ভিত নির্মাণ করেছে।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ দ্বিখণ্ডিত করে পাকিস্তান সৃষ্টি করা হয়েছিল ধর্মীয় দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল প্রমুখ বলেছিলেন- ভারতবর্ষে মুসলমানরা একটি স্বতন্ত্র জাতি, হিন্দু ও মুসলমান এক দেশে এক জাতি পরিচয়ে থাকতে পারে না। জিন্নাহর এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছিল ঔপনিবেশিক ইংরেজ শাসকরা।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রথমে আপত্তি করলেও একপর্যায়ে দেশভাগ মেনে নিয়েছিল। ভারতবর্ষে হিন্দু আর মুসলিম দুটি আলাদা জাতি এটি প্রমাণ করর জন্য তখন বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষে বহু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে, যার চূড়ান্ত রূপ ছিল পাকিস্তানের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঞ্জাব ও বাংলার দ্বিখণ্ডিকরণ। পাকিস্তানের জন্য পাঞ্জাব ও বাংলাকে ভাঙতে গিয়ে দশ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা এবং প্রায় এক কোটি পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।
১৯৭১-এ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অভ্যুদয় পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতিতত্ত্বের দর্শনকে অসার ও অমানবিক প্রমাণ করেছে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সার্বিক সহযোগিতার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল ভারতের সরকার ও জনগণ, যার প্রধান কারণ ছিল ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাদের অঙ্গীকার। স্বাধীন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের সময় ধর্মনিরপেক্ষতার রক্ষাকবচ হিসেবে সাংবিধানিকভাবে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন।
এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, কীভাবে পাকিস্তানি শাসকরা এবং তাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক দোসররা ধর্মের নামে শুধু শোষণ-পীড়ন নয়- গণহত্যা ও গণধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধকে বৈধতা দিয়েছে। ধর্মের নামে সব রকম শোষণ-পীড়ন-বৈষম্য ও নরহত্যা অবসানের জন্য ১৯৭২-এর সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে ধর্মের নামে যেকোনো সংগঠন প্রতিষ্ঠার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানি আদর্শের ধারকরা কখনও ইসলামি রাষ্ট্র পাকিস্তান ভেঙে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের অভ্যুদয় মেনে নিতে পারেনি। ’৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যই তারা ১৯৭৫-এ নির্মমভাবে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু এবং তার সহযোগীদের, যারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন ও একটি অনন্যসাধারণ সংবিধান প্রণয়ন করেছে।
এরপর থেকে অধিকাংশ সময় বাংলাদেশ শাসিত হয়েছে মৌলবাদী-সম্প্রদায়িক অপশক্তির দ্বারা, যাদের শক্তির উৎস ছিল সামরিক বাহিনী, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য এবং আমেরিকাও বটে। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য তার দল আওয়ামী লীগকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ একুশ বছর। এই একুশ বছর এবং পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের দশ বছরকে আমরা বলি বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির ‘পাকিস্তানিকরণ’ বা ‘ইসলামিকরণে’র অন্ধকার যুগ।
রাজনৈতিক নেতৃত্ব অনেক সময় মৌলবাদের সঙ্গে আপস করেছে কিংবা উপেক্ষা করেছে বটে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কখনও এদেশে পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের প্রত্যাবর্তন মেনে নেয়নি। এর উজ্জ্বলতম উদাহরণ হচ্ছে সাড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন এবং গোটা ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির মহিমা কীর্তন।
একাত্তরের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন, যার সমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শোচনীয় আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। স্বাধীনতা ও বিজয়ের উৎসব এখন শুধু নির্দিষ্ট দিনে নয়, গোটা মার্চ ও ডিসেম্বর-জুড়ে উদযাপিত হয়, যা চরিত্রগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ।
পাকিস্তানি আমলে বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে শাসক এবং তাদের সহযোগীরা হিন্দুয়ানি আখ্যা দিয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশেও জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক দোসররা বাংলা নববর্ষ উদযাপনসহ বাঙালির যাবতীয় সাংস্কৃতিক আচার ও অভিব্যক্তিকে হিন্দুয়ানি বলে যখন সুযোগ পেয়েছে তখনই এর ওপর হামলা করেছে।
২০০১ সালে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিরা বোমা হামলা করে বহু মানুষকে হতাহত করে। পরের বছর যখন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায়, রমনার বটমূলসহ বাংলা নববর্ষের সব অনুষ্ঠানে জনসমাগম দ্বিগুণ হয়েছে, উৎসব আর প্রতিবাদ একাকার হয়ে গেছে। রাজধানীতে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে ধর্ম-বর্ণ, বিত্ত-লিঙ্গ-বয়স নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ। কণ্ঠে ধারণ করেছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, লালনের কালজয়ী গান, যেখানে মূর্ত হয়েছে বাঙালিত্ব ও মানবতার শাশ্বত চেতনা।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, এক যুগেরও অধিক কাল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরও প্রশাসন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বাঙালিত্বের চেতনাবিনাশী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি ও ভাবনা অপসারিত হয়নি। এই সরকারের আমলেও বাংলা নববর্ষ উদযাপন, মেয়েদের কপালে টিপ পরা, শহীদ মিনারে আলপনা আঁকা ইত্যাদির বিরুদ্ধে পাকিস্তান আমলের মতো ওয়াজের মাধ্যমে বিষোদগার করা হচ্ছে।
অতি সম্প্রতি কপালে টিপ পরার জন্য কলেজ শিক্ষক লতা সমাদ্দারের লাঞ্ছনা, নওগাঁ ও সিলেটের গোলাপগঞ্জে হিন্দু শিক্ষকদের হেজাব-নেকাব ইত্যাদি নিয়ে হুমকি প্রদান, বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের গ্রেপ্তার আমাদের বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। মৌলবাদীদের হুমকির কারণে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের উৎসব সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এখন যাত্রাপালা, কবিগান- এসবের জন্য প্রশাসনের কাছে ধর্ণা দিতে হয়, বহু ক্ষেত্রে অনুমতি পাওয়া যায় না। অথচ বঙ্গবন্ধুর সময়ে এ ধরনের বিধিনিষেধ ছিল না।
গ্রাম ও শহরে আগের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সক্রিয়। গ্রামে গ্রামে ওয়াজের নামে তাদের রাজনৈতিক সমাবেশ এবং মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রচার দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। আর এসব ওয়াজে যখন সরকারদলীয় কোনো নেতা বা জনপ্রতিনিধিকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হতে দেখি, তখন সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। আগে আমরা বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেছি।
এখন যখন ধর্মীয় গোষ্ঠীর দাবিমতো পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হয়, সে সময় আমরা কার কাছে যাব? এই আমলেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মৌলবাদী সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানো হচ্ছে। কিন্তু পাঠাগার, সংস্কৃতি কেন্দ্র, মিলনায়তন বা খেলার মাঠ গড়ার কোনো উদ্যোগ নেই। সরকারের কোনো সংস্কৃতি নীতি নেই।
সংস্কৃতির সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক যে অচ্ছেদ্য এবং মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা যে সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ- এটা আমাদের নীতিনির্ধাকরা বুঝতে চান না। রাষ্ট্রকে সংস্কৃতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। আমাদের বাজেটে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ ১ শতাংশেরও কম। এটা অবশ্যই বাড়াতে হবে। বাংলার হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সংস্কৃতি, যার ভেতর প্রোথিত রয়েছে বাঙালির প্রাণ- তা ফিরিয়ে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু যে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করতেন, ফিরতে হবে সেখানে। ধর্মের নামে রাজনীতি এবং খোতবা ও ওয়াজের নামে ভিন্নধর্ম, ভিন্নমত এবং ভিন্ন জীবনধারার অনুসারী মানুষদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা নিষিদ্ধ করতে হবে।
মৌলবাদীদের দাপটে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাদরাসায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদের স্কুলের পোশাকের সঙ্গে হিজাব পরাকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। মৌলবাদীদের এসব মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। যে অভিভাবক তাদের মেয়েদের হিজাব পরাতে চান তাদের জন্য দেশের প্রচুর মহিলা মাদরাসা আছে। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি এভাবে মাদরাসায় রূপান্তরিত করা হয়- একদিন সারা দেশ মোল্লা উমরের তালেবানি আফগানিস্তানে পরিণত হবে!
শেখ হাসিনার সরকার সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ পুনঃস্থাপন করলে এখনও মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অনেক অন্ধকার জমে আছে সমাজ-সংস্কৃতি ও রাজনীতির পরতে পরতে। সংবিধানে এখনও ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ‘বিসমিল্লাহ...’ ইত্যাদি রয়ে গেছে যা আদি সংবিধানের চার মূলনীতির পরিপন্থি। এই অন্ধকার দূর করতে হলে বাঙালির বর্ষবরণের সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের মর্মবাণী হৃদয়ের গভীরে ধারণ করতে হবে। শিক্ষা-সংস্কৃতি, সমাজ ও রাজনীতির সব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে হবে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে আলোকিত করতে হবে। বাংলা নববর্ষে আমাদের শপথ নিতে হবে- ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক চেতনায় আলোকিত ভবিষ্যৎ নির্মাণের।
লেখক: কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা। সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি