মাঝেমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে; উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে মুখর শিক্ষার্থীরা অনশনে বসেন; অপেক্ষা চলতে থাকে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কথা বলার চেষ্টা চলে। শিক্ষামন্ত্রী কিছু আশ্বাস দেন। সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সংহতি জানান। কখনও কখনও উপাচার্য পদত্যাগ করেন, কখনওবা করেন না; আন্দোলন ঢুকে পড়ে মৃত্যুপুরীতে। উপাচার্য যদি পদত্যাগ করে থাকেন, কিছুদিন সুবাতাস বয়ে যায় বলে মনে হয়। কিন্তু পরক্ষণেই লাউ ও কদুর সাদৃশ্য ধরা পড়ে। তত দিনে শিক্ষার্থীর জীবন থেকে ঝরে যায় কয়েক মাস, বছর।
এই হলো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাস্তবতা। এর বাইরে যা কিছু ঘটে থাকে, তা হলো ক্লাস, পরীক্ষা, ক্লাস...! ক্লাস বা বিদ্যাচর্চার মান নিয়ে অজস্র প্রশ্ন ছড়িয়ে আছে। সত্যি কথা বলতে কি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কখনও কখনও মনে হয়, পরীক্ষা গ্রহণকারী ও ফল প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান। আমরা নিশ্চিতভাবে জানি, পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল বিতরণ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় তাহলে কী ধরনের প্রতিষ্ঠান?
মূলত এই প্রশ্নটিকে সামনে রেখেই আমাদের এগিয়ে যাওয়া দরকার। দুঃখজনক সত্য হলো, এ দেশে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত শক্তিশালী কোনো তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক ধারণা গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের বড় অংশই জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ে লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও গন্তব্য কী। আমি মানছি, আমার এই কথায় সরলীকরণের ঝুঁকি আছে। কিন্তু ব্যক্তিক ও সামাজিক অভিজ্ঞতা আমাকে এই তথ্যই দিয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় হলো অধ্যয়ন ও গবেষণানির্ভর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কোনো অঞ্চলের প্রয়োজনভিত্তিক জ্ঞানচর্চা এর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। এই প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদিত জ্ঞান বর্তমান ও ভবিষ্যতের জনগোষ্ঠীকে একটি জ্ঞানগত সুরক্ষা বলয় তৈরি করে দেবে। কোনো জ্ঞানকে অতীতের প্রেক্ষাপটে রেখে নিয়ে যেতে হয় ভবিষ্যতের অভিমুখে। অর্থাৎ কোনো জ্ঞান ও চিন্তার সাধারণ বর্ণনা দান বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য নয়। বরং প্রচলিত জ্ঞান ও চিন্তাকে প্রশ্ন করা, তর্ক ও বিতর্কের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রধান কাজ। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের কোনো চর্চা বা অনুশীলন নেই। এ দেশে এমন অনেক জ্ঞানশাখা আছে, যেগুলোর শিক্ষার্থীরা জানেন না, কেন তারা ওই ডিসিপ্লিন বা বিভাগে পড়ছেন।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিশ্ববিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ চিন্তা করেও বাংলাদেশে নতুন বিভাগ খোলা হয়ে থাকে। এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেগুলোর জন্ম ঘটেছে কেবল নির্বাচনি ওয়াদার ফল হিসেবে। কিন্তু এভাবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় দূরে থাক, একটি অ্যাকাডেমিক বিভাগ কিংবা অনুষদও তৈরি হতে পারে না। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের ছোট-বড় বিভিন্ন কলেজে করা হয়েছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ার বন্দোবস্ত; যেখানে উচ্চতর গবেষণানির্ভর জ্ঞানের কোনো বাস্তবতা ও সুযোগ নেই। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সে ধরনের কলেজ থেকে কর্মের বাজারে নেমে আসছে প্রচুরসংখ্যক বেকার।
উচ্চশিক্ষাকে কর্মসংস্থানের উপায় হিসেবে যারা ভাবেন, তারা অচিরেই বুঝে ফেলেন, এই পড়া দিয়ে কাজ হবে না, এই প্রতিষ্ঠানও কর্ম-উপযোগী পড়ালেখার জায়গা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ দুই ধারার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীই সত্যিকার অর্থে গণহতাশায় নিমজ্জিত। দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি, গন্তব্যহীনতা তাকে ব্যথিত করে। তারুণ্যের বহুরঙা স্বপ্নগুলো বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যর্থ হয়। তখন সে একমাত্র সম্বল হিসেবে বেছে নেয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আওতায় পরীক্ষা দিয়ে চাকরিপ্রাপ্তির স্বপ্নকে। তখন গৌণ হয়ে পড়ে জ্ঞান, বইপুস্তক, অন্য রকম পড়াশোনা, লেখালেখি কিংবা শিল্পচর্চা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখাকে তারা মনে করে বোঝা, কারণ প্রতিটি মাসে তাকে খরচ করতে হয় কম করে হলেও ৬০০০-৮০০০ টাকা। এই টাকার জোগান সে কোথায় পাবে? রাষ্ট্রের কাছ থেকে তার কিছু বাড়তি প্রত্যাশা তৈরি হয়। অবচেতনেই তাদের মনে প্রতিপক্ষ তৈরি হয়ে যায়; তার প্রতিপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, সরকার– সামগ্রিকভাবে মূলত প্রতিষ্ঠান। সুযোগ পেলেই বিস্ফোরিত হয় তার ক্ষোভ। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য পদত্যাগ করলে ওই প্রতিষ্ঠানের আমূল পরিবর্তন ঘটে না– এ কথা জেনেই সে পদত্যাগের মাধ্যমে পরিবর্তন দেখার আনন্দ বোধ করে। ভাবে, অন্তত কিছুটা সময় তার ভালো হোক। কিন্তু রাজনৈতিক কলকাঠির নিয়মে এই পরিবর্তন সাময়িক।
আসলে চাই আমূল রূপান্তর। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বদলাতে হবে। কে বদলাবে? রাষ্ট্রের পরিচালকবৃন্দ? কখনোই নয়। কারণ তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করে তাদের মতাদর্শ, ক্ষমতা প্রচার ও নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, শিক্ষক সংগঠনগুলো কথা বলে মূলত রাষ্ট্র পরিচালকদের ভাষায়। রাষ্ট্রের ইডিওলজিক্যাল স্টেট অ্যাপারেটাস হিসেবে তারা পদ ও দায়িত্বে বসেন। তাদের কাজ হয়ে ওঠে রাষ্ট্র পরিচালকদের মনমতো কথা বলা। অতএব ধরে নেয়া যায়, রাষ্ট্র পরিচালকরা কোনো রূপান্তরকেই স্বাগত জানাবে না। সরকারের অনুগত উপাচার্য, শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠনগুলোও একই ভঙ্গিতে না-সূচক জবাব দেবে।
রূপান্তরের নেতৃত্ব কে দেবে? এই প্রশ্নের তাৎক্ষণিক মীমাংসা সম্ভব নয়। তবে শিক্ষার্থীকে ভাবতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরে তারা কী চান? উচ্চশিক্ষার নামে বিস্তর অর্থ, শ্রম ও সময় খুইয়ে বেকারত্ব চান? নাকি উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে উচ্চচিন্তার অধিকারী হতে চান? নাকি পেশাগত উজ্জ্বলতা চান? বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজন হিসেবে সামগ্রিক রূপান্তরে সম্পৃক্ত হতে হবে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমি কিছু কথা ভাবি; তার কিছু সারসংক্ষেপ তুলে ধরছি।
শিক্ষা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে হবে বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির প্রয়োজনকে সামনে রেখে। বিষয়বস্তুগুলো যেন স্থানীয় প্রয়োজন মিটিয়ে বিশ্ববাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। পাঠদানের বিষয়, বিভাগের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়ে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করতে হবে।
শিক্ষাপদ্ধতি
বক্তৃতা দাননির্ভর প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে যেতে হবে। কেবল শিক্ষকই বক্তৃতা করবেন না, শিক্ষার্থীকেও বক্তৃতায় সম্পৃক্ত করতে হবে। অর্পিত কাজ, সেমিনার, উপস্থাপনা, আলোচনাচক্র, বিতর্ক, প্রদর্শনী ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে। শ্রেণিকক্ষকে সনাতন পদ্ধতির দাতা ও গ্রহীতার পটভূমি থেকে বের করতে হবে।
গবেষণা
মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে করতে হবে গবেষণামুখী। আবশ্যিকভাবে গবেষণা রীতি, পদ্ধতি ও তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে হবে। মুখ্যত এই ক্ষেত্রেই বাড়াতে হবে অর্থ বরাদ্দ। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য গবেষণাকর্ম হবে আবশ্যিক। এ লক্ষ্যে প্রতিটি বিভাগে গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ গবেষণা সাময়িকী প্রকাশ করার পাশাপাশি এই কেন্দ্র সংরক্ষণ করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের গবেষণার ইতিহাস ও তথ্যাদি।
সৃষ্টিশীলতা
বিশ্ববিদ্যালয়কে সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে। গবেষণার মতো মননশীল জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি সৃষ্টিশীলভাবে আনন্দ উপভোগের বন্দোবস্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পরিচালনায় সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যার কাজ হবে সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, নাট্যকলা, কারুকলা ইত্যাদির পৃষ্ঠপোষকতা দান।
স্থানিকতা
বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্থান বা অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান। যে অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে উঠেছে, সে অঞ্চলবিষয়ক পড়ালেখা ও গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়কে ভূমিকা রাখতে হবে। স্থানীয় জনপদ থেকে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয় নির্বাচন করা জরুরি।
বৈশ্বিকতা
বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখে প্রতিটি বিভাগকে নতুনভাবে সাজাতে হবে। মানবিকবিদ্যা, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসা ও বাণিজ্য অধ্যয়ন এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সাম্প্রতিক বিশ্বপরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ রাখতে হবে। এ জন্য একজন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত একটি বিদেশি ভাষা শিক্ষা আবশ্যিক করা যেতে পারে। কারণ জ্ঞানগত যোগাযোগ স্থাপনে ভাষা শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বৈশ্বিকতার প্রয়োজনেই পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যায়তনিক বিনিময়ের ব্যবস্থা করা জরুরি।
রাজনীতি
স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো রাজনীতি চর্চার প্রতিষ্ঠান নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাখতে হবে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নেতৃত্ব গড়ে তোলার প্রবণতাকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকেও নিয়ে যেতে হবে দলীয় প্রভাবের বাইরে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শ চর্চার সর্বাত্মক সুযোগ রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করে তুলতে হবে।
শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যবর্তী যোগাযোগের সেতু হলো শিক্ষা। একজন শিক্ষক পথপ্রদর্শক। ক্ষমতাকাঠামোর ছক থেকে একজন শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারবেন না। শিক্ষার্থীও যেন ভেবে না বসেন শিক্ষক একই সঙ্গে দাতা ও দাস। প্রকৃতপক্ষে সম্পর্কটিকে ভাবতে হবে প্রাণবন্ত এক জ্ঞানগত সম্পর্ক।
নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ
বিশ্ববিদ্যলয়ের নীতিগ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাতে হবে। নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের মত ও মন্তব্য প্রকাশের সুযোগ রাখতে হবে। ছাত্রসংগঠনগুলোর পুনর্জাগরণ ছাড়া এটি সম্ভব নয়।
প্রশিক্ষণ
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অপরাপর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সম্ভাব্য পেশা বিবেচনায় রেখে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করবে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েই বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ ঘটানো যেতে পারে। এতে করে শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ কাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠবেন।
অ্যালামনাই
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সেতুবন্ধনকে সুদৃঢ় করতে হবে। পেশা নির্বাচন ও কর্মসংস্থানে এ জাতীয় সংগঠন জোরালো ভূমিকা রাখে। এই ধরনের সংগঠনকেও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে রাখতে হবে।
প্রশাসন
বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য নেতা নির্বাচনের ভার শিক্ষকদের ওপরই ছেড়ে দিতে হবে। রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত রাখতে হবে। সরকারি নিয়ন্ত্রণ অকার্যকর হলে প্রশাসনিক কাজের জবাবদিহির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটের মতো অঙ্গগুলোই যথেষ্ট। তবে সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সংখ্যা অবশ্যই বাড়াতে হবে।
এমন নয় যে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা নীতিতে ওপরের বিষয়বস্তুগুলো একদম অনুপস্থিত। অনেক কিছুই আছে, যার অনুশীলন নেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ কারণে আসলে দুটি পথ খোলা: এক. হয় বর্তমান ব্যবস্থাকে মেনে নিন; দুই. নয় প্রচলিত ব্যবস্থাকে উৎখাত করুন। মধ্যবর্তী পথে হাঁটলে উপাচার্য বদলাবে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বদলাবে না। তাহলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?
চাইলেই এই রূপান্তর সম্ভব নয়। আমি বলব, জোরদার আত্মসমালোচনা ও প্রত্যাখ্যানের কথা। আমি বলব, শিক্ষার্থীদের প্রবল প্রতিরোধের কথা। নির্দিষ্ট কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমস্যাগুলো কেন্দ্রীভূত নয়; সমস্যা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে– তার কিছুটা প্রকাশিত, কিছুটা অপ্রকাশিত। প্রায় একই পদ্ধতিতে পরিচালিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়; শিক্ষার্থীদের ওপর সংগঠিত নিপীড়ন ও আচরণ এক। শিক্ষকরাও ভালো নেই; গবেষণা, পড়ালেখা, পদোন্নতি থেকে শুরু করে অফিস রুম, আবাসিক ভবন পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে অসন্তোষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত বাস্তবতা বুঝতে চাইলে শিক্ষার্থীদের কথা শুনুন, শিক্ষকদের কথা শুনুন। তাদের স্বপ্নভঙ্গের গল্পগুলোকে উপেক্ষা করবেন না।
সুমন সাজ্জাদ: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়