বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাংবাদিকের সামাজিক মাধ্যম ও দায়বদ্ধতা

  • দিপন দেওয়ান   
  • ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:২৪

মানুষ যেখানে ভাবনা শেষ করে, সেখান থেকে একজন সাংবাদিক ভাবতে শুরু করেন। আর আমরা এখন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছি। শুধু পরিমনির ঘটনা নয়, এমন অনেক ঘটনায় একজন সাংবাদিককে যখন দেখি, রঙ্গ-তামাশায় মেতে ওঠেন, তখন বুঝতে বাকি থাকে না- পরিণতির দৌড়গোড়ায় মনে হয় আমরা। দলীয়করণ, বিভক্তি এসব কারণে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো তো রসাতলে গেছেই।

পেশায় সংবাদকর্মী। পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পরিচয়ের কিছুটা ব্যাপ্তি রয়েছে। আর যখন একজন সাংবাদিক ভালো রিপোর্ট করেন, তখন সামাজিক মাধ্যমে তার ওয়ালে ছড়িয়ে দেয় দ্যুতি। সমাজের আর দশটা মানুষের কাছ থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে ভাবতে হয় একজন সাংবাদিককে।

কেউ বুয়েট, কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং আবার কেউ চিকিৎসা পেশা ছেড়ে এসেছেন সাংবাদিকতায়। বিসিএস ক্যাডার বা ব্যাংকের কড়কড়ে নোটের সুবাস ছেড়ে যুক্ত হয়েছেন নাক সিটকানো পেশা সাংবাদিকতায়। তাহলে অবশ্যই এই পেশার একটা মোহ সবার মধ্যেই কাজ করে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দাপটে নাস্তানাবুদ এখন গণমাধ্যম। সেই ফেসবুকে এখন প্রচুর রিপোর্ট হয়, অনেক শেয়ার হয়। অনেক ঘটনা নিয়ে হয় ট্রল। চলে সেগুলো নিয়ে নগ্ন তামাশা। ক্ষণিকের আনন্দ আর লাইক-শেয়ার পেতে কাউকে হেনস্তা করতে ছাড় দেয় না ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। তবে এতে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়, আপনি আসলে কেমন রুচি কিংবা মানসিকতার ধারক-বাহক।

নায়িকা পরিমনির মা হওয়ার খবরে ফেসবুক ওয়ার্ল্ড নড়েচড়ে বসেছে। শুরু হয়েছে সেই সন্তানের বাবা কে? কবে বিয়ে হলো? কী করে মা হলেন পরিমনি? অনেকের মনে এ ধরনের প্রশ্ন আসতেই পারে। এটা নিয়ে অনেক ধরনের ট্রল হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস আরও কত কী!

এর কদিন আগে এমপি মুরাদ হাসানকে নিয়েও অনেক নোংরা স্ট্যাটাস, ছবি দিয়ে বিকৃত মজা নেয়ার চেষ্টা করেছেন অনেক ‘সাংবাদিক’। সবাই এ নিয়ে রসিকতা শুরু করলেও কিন্তু সমাজে একজন সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় পাওয়া মানুষ এই নোংরামিতে যুক্ত হতে পারেন না। এই অভিযোগ শুনে অনেক সাংবাদিক বলে উঠতে পারেন, ‘ফেসবুকে তো সাংবাদিকতা করতে যাই না। আমার নিজস্ব মতামত তুলে ধরি।’ এটাও ঠিক আছে, তাহলে ধরে নিতে হবে সাংবাদিকতা করে তো আপনার মেধা-মনন-মানসিকতার কোনো উৎকর্ষ সাধন হয়নি।

আবার অনেক সাংবাদিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে গণ্যমান্যদের সঙ্গে হাহা হিহি করে সেলফি তোলেন। সেগুলো আবার গর্ব করে ফেসবুকে আপলোড করেন। একবার ভাবুন তো, যার সঙ্গে সেলফি তুলতে গেলেন, তিনি কি নিজে কখনও আপনার সঙ্গে সেলফি তুলতে গেছেন! বিভিন্নভাবেই নিজের ব্যক্তিত্ব তুলে ধরতে হয়, নিজেকে হালকাভাবে উপস্থাপনের কোনো প্রয়োজন নেই।

মানুষ যেখানে ভাবনা শেষ করে, সেখান থেকে একজন সাংবাদিক ভাবতে শুরু করেন। আর আমরা এখন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছি। শুধু পরিমনির ঘটনা নয়, এমন অনেক ঘটনায় একজন সাংবাদিককে যখন দেখি, রঙ্গ-তামাশায় মেতে ওঠেন, তখন বুঝতে বাকি থাকে না- পরিণতির দৌড়গোড়ায় মনে হয় আমরা। দলীয়করণ, বিভক্তি এসব কারণে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো তো রসাতলে গেছেই। এই প্রজন্মের সাংবাদিকের মানসিকতাও হেলে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ট্রল-যুগের দিকে।

ফেসবুকের আইডিতে যখন একজন সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় তুলে ধরছেন, তখন মনে রাখতে হবে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনি কী লিখবেন। কোন ঘটনাটিকে মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। কারণ সেটি দিয়েই ভার্চুয়াল বন্ধুরা পরিমাপ করবে আপনার পরিবার-বন্ধুজন, রুচিবোধ।

এখন হয়তো অনেকেই লেখকের ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে তল্লাশি চালাতে পারেন, এমন কোনো পোস্ট আছে কি না, যা দিয়ে ট্রল করা করা যায়! ভুল লেখকের হতে পারে। চলুন, সব সাংবাদিক বন্ধু মিলে পেশাটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই, সবক্ষেত্রেই রুচিশীলতার পরিচয় দেই। পেশার সম্মান বাড়াতে আরও পেশাদার এবং সচেতন হই।

লেখক: সাংবাদিক।

এ বিভাগের আরো খবর