বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনে বিজয়ের পূর্ণতা

  •    
  • ১০ জানুয়ারি, ২০২২ ১৫:০৬

তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য পৃথিবীর জাতি রাষ্ট্রসমূহের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি সবার কাছ থেকে স্বীকৃতিরও আহ্বান জানান। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণের নীতি-কৌশল ও আদর্শের কথাও তিনি জানিয়ে দেন।

আজ ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের এদিনেই পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন স্বদেশভূমিতে পা রাখলেন। গোটা বাংলাদেশ যেন তখনই নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়ের পূর্ণতার স্বাদ অনুভব করে। যদিও ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করার পর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে। তথাপি বিজয়ী জাতির কাছে বঙ্গবন্ধুবিহীন স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়নি, মানুষ অধীর অপেক্ষায় ছিল প্রিয় নেতা পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে আসবেন। এইদিন তিনি ফিরে এলেন। সেই থেকে ১০ জানুয়ারি আমাদের বাঙালি জাতির জীবনে মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অবিচ্ছেদ্য বিজয়-আনন্দের মাহেন্দ্রক্ষণ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

২০২২ সাল বঙ্গবন্ধুর এই ফিরে আসা তথা ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ দিবসের ৫০ বছর পূর্তির বছর। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ফিরে আসার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল সেটিরও বয়স এখন ৫০ পার হয়ে গেছে। আমরা গেল বছর (২০২১ সাল) বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করছি।

১৯৭২ সালের এই দিনে তিনি যদি ফিরে না আসতে পারতেন তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশের পথচলার ইতিহাস শুরুতেই কেবল বিষাদ-যন্ত্রণা, অভাব-অনুভূতি আর শূন্যতা দিয়েই শুরু হতো না, হয়ত নানা বিপর্যয়ও ঘটে যেতে পারত। কারণ গোটা মুক্তিযুদ্ধই ছিল এক চরম প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করার রক্তক্ষয়ী অসম লড়াই। একদিকে জনগণের দেশপ্রেম, যুদ্ধজয়ের মরণপণ আকাঙ্ক্ষা অন্যদিকে নেতা বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণা। সুতরাং তার উপস্থিতি ছাড়া মুক্তিপাগল এই জাতিকে তখন শান্ত করা যেমন কঠিন হতো, প্রতিক্রিয়াশীল দেশি-বিদেশি অপশক্তি ষড়যন্ত্রের কালোথাবা তখনই নতুন করে স্বাধীনতাকে টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করত। বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার মধ্য দিয়ে সেই ষড়যন্ত্র তখন আর ডানা মেলতে পারেনি।

বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য একটি লাল-সবুজের পতাকা দিলেন, চার জাতীয় নীতি ও আদর্শের সংবিধান প্রণয়ন করলেন, পাকিস্তানি রাষ্ট্রচরিত্রের বেড়াজাল থেকে গোটা জাতিকে বের করে এনে একটি আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন দেখালেন, অর্থনৈতিক মুক্তি, শোষণহীন সমাজব্যবস্থা, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে দীক্ষিত ও কর্মদক্ষ মানবসম্পদ তৈরির নির্দেশনা-সংবলিত শিক্ষানীতি প্রণয়ন এবং ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ নীতির আদর্শ নিয়ে পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের সুস্পষ্ট পথনকশা দিলেন।

এমন রাষ্ট্রচিন্তা তিনি সেদিনই গোটা জাতি এবং সারা বিশ্বের মানুষের নিকট তুলে ধরেন। দিনটি তাই শুধু অতীত মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি হয়ে উঠেছিল ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রূপকল্প। সে কারণেই ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এক বিজয়ক্ষণ, সামনে চলার স্বপ্ন দেখা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে রমনা রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক সভায় জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন সেটিতে ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করার ডাক। তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তার সেই ডাক গোটা জাতিকে তখন স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় এতটাই উদ্দীপ্ত করেছিল যে, সব শ্রেণি পেশা ও বয়সের নারী-পুরুষ হানাদার পাকিস্তানিদের অপারেশন সার্চলাইট তথা নির্মম গণহত্যাকে পরোয়া না করে প্রায় শূন্যহাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করেছিল।

স্বাধীনতার ডাক দেয়ার বিষয়টি মুক্তিকামী মানুষের কাছে ছিল বৈধ ন্যায়ের লড়াই, অপরদিকে দখলদার পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে ‘অবৈধ’। তাই পাকিস্তানের শাসকচক্র স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কারণে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। সেখানেই প্রথমে ফয়সালাবাদ এবং পরে মিয়াওয়ালি কেন্দ্রীয় কারাগারের রুদ্ধকক্ষে তাকে বন্দি করে রাখা হয়। কোনো সংবাদ, কাগজপত্র, খবরাখবর জানার সুযোগ তাকে দেয়া হয়নি।

৯ মাস তার কেটেছিল আক্ষরিক অর্থেই একটি অন্ধকার কারা সেলে। ৬ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে একটি সামরিক আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। ঢাকায় যখন ১৬ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করে, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়ে গেল তখনই সামরিক আদালতে তার ‘মৃত্যুদণ্ডের রায়’ দেয়া হলো, কিন্তু সেই রায় কার্যকর করার সাহস সামরিক আদালত কিংবা পাকিস্তান সরকারের ছিল না। ফলে মৃত্যুদণ্ডের রায়টি আদালতের বাইরে অন্য কারোই জানার কোনো সুযোগ ছিল না। কিন্তু প্রহসনের এই বিচার তখন পাকিস্তানেও মূল্যহীন হয়ে গেল। অধিকন্তু পাকিস্তান নিজেকে আর রক্ষা করতে পারল না। পাকিস্তানের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল।

ইয়াহিয়া খান বাধ্য হলেন পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক শাসকের পদ ছেড়ে দিতে। জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক প্রশাসকের পদ গ্রহণ করে ইয়াহিয়াসহ ৭ জন সামরিক কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সামরিক বাহিনী থেকে বহিষ্কার করেন। পাকিস্তানের রাজনীতির মঞ্চে তখন উত্থান-পতনের নানা নাটক চলছিল। সারা বিশ্ব তখন দাবি জানিয়ে আসছিল পাকিস্তানের কারাগার থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের শর্তহীন দ্রুত মুক্তির। এর ব্যত্যয় ঘটলে পাকিস্তানের সঙ্গে সব রাষ্ট্রের সম্পর্কের আবনতি ঘটতে বাধ্য হবে বলেও কোনো কোনো রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে থাকেন।

পাকিস্তানের নয়া প্রেসিডেন্ট ভুট্টো তখন এই লজ্জাজনক ও অবমাননাকর পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার পথ ও উপায় খুঁজছিলেন। ২৩ ডিসেম্বর ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে মিয়ানওয়ালি কারাগার থেকে রাওয়ালপিন্ডির একটি গেস্ট হাউজে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এখানেও তাকে জানতে দেয়া হয়নি যে গত ৯ মাস বাংলাদেশে কী ঘটেছিল? অবশেষে ডিসেম্বরের ২৭ তারিখে জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে তিনি বঙ্গবন্ধুকে বিভ্রান্ত করতে নানা মিথ্যাচারের আশ্রয় নেন। ঢাকাসহ গোটা পূর্ব বাংলা তখন বিদেশিদের দখলে চলে গেছে বলেও বঙ্গবন্ধুকে শোনান। তিনি বঙ্গবন্ধুর সহযোগিতা কামনা করেন।

বঙ্গবন্ধু সেই পরিস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার অবকাশে ছিলেন না বলে ভুট্টোকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। ততদিনে বিশ্ব গণমাধ্যমের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর জীবিত থাকার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায় এবং চারদিক থেকে তার মুক্তির দাবি উচ্চারিত হতে থাকে। বাংলাদেশ সরকার দ্রুত বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাতে থাকে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সব মহল পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছে কড়া প্রতিবাদলিপি পাঠাতে থাকে।

অবশেষে ৭ জানুয়ারি রাতে ভুট্টো চাকলালা বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শেষবারের মতো কনফেডারেশনের ব্যবস্থা করতে বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাফ জবাব ছিল ‘আমি আমার জনগণের কাছে আগে ফিরে যাই, তারপর তোমাকে জবাব জানিয়ে দেব।’ অবশেষে বঙ্গবন্ধুর বিশাল ব্যক্তিত্বের কাছে হার মেনে অনেকটা নিরুপায় হয়েই ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে ড. কামাল হোসেনসহ লন্ডনগামী একটি বিমানে তুলে দেন। তখনই বঙ্গবন্ধুর মুক্তির বিষয়টি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

৮ জানুয়ারি তিনি লন্ডন হিথরো বিমানবন্দরে যখন অবতরণ করেন তখন তাকে লন্ডনে অবস্থানরত বাঙালিদের অনেকেই অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করে। লন্ডনের একটি হোটেলে অবস্থানকালে তার সঙ্গে শুধু বাঙালিরাই নয়, কমনওয়েলথসহ বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও সাক্ষাৎ করেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথ বঙ্গবন্ধুর লন্ডন আগমনের খবর পেয়ে দ্রুত তার লন্ডনের বাইরের অবস্থান থেকে লন্ডনে ফিরে আসেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যখন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অ্যাডওয়ার্ড হিথের সাক্ষাৎ হয় তখনও ব্রিটেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেনি। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সেই প্রটোকল ভঙ্গ করেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এটি ছিল মূলত বঙ্গবন্ধুর প্রগাঢ় দেশপ্রেম এবং বিশাল ব্যক্তিত্বের প্রতি একজন বিদেশি সরকারপ্রধানের আন্তরিক শ্রদ্ধা, সন্মান ও ভালোবাসারই নিদর্শন। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ বিমানে করেই তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’র উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেন। পথিমধ্যে তিনি দিল্লি বিমানবন্দরে কিছু সময়ের জন্য অবস্থান করেছিলেন। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি প্রশাসন, আমলা, রাজনীতিবিদ এবং বিপুল জনসাধারণ বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানায়।

বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরেই স্বতঃস্ফূর্ত এক ভাষণে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের জন্য ভারত সরকার ও সে দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে স্বল্পকালীন বৈঠকে তিনি ভারতীয় সৈন্যবাহিনী ফিরিয়ে আনাসহ বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করেন এবং ভারতের ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি নিয়েই দিল্লি ত্যাগ করেন। দুপুর ১:৪১ মিনিটে তাকে বহনকারী বিমানটি ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করে। গোটা বাংলাদেশ যেন মুহূর্তের মধ্যেই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছিল। নয় মাসের এত কান্না, এত ক্ষয়ক্ষতি, দুঃখ-বেদনা মানুষ যেন বঙ্গবন্ধুকে দেখে মুহূর্তের মধ্যেই ভুলে গিয়েছিল।

সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পথে তাকে বহনকারী গাড়ি চলেছিল পিঁপড়ার গতিতে। কারণ স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিজেদের মাঝে ফিরে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত লাখো বাঙালি তখন বঙ্গবন্ধুর গাড়িবহর ঘিরে আনন্দে মাতোয়ারা। আনন্দে উদ্বেলিত, বিজয়ের গৌরবে অভিষিক্ত এই জনস্রোত সঙ্গে নিয়েই অবশেষে তিনি রেসকোর্স ময়দানে নির্মিত মঞ্চে উঠলেন। এই মঞ্চটিও নির্মিত হয়েছিল ঐতিহাসিক সাতই মার্চের জন্য নির্মিত মঞ্চ স্থাপনের জায়গাতেই। পড়ন্ত বিকেলে বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ মানুষের সামনে আরেকটি আবেগঘন ভাষণ প্রদান করলেন। এতে তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃশ্য দেখে যেতে পারলেন বলে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

ভাষণের বড় অংশ জুড়ে ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জনগণের আত্মত্যাগ, ৩০ লাখ মানুষের প্রাণবিসর্জন, পাকিস্তানিদের বর্বর গণহত্যা, জঘন্য নির্যাতন এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে সহযোগিতা প্রদানের বিষয়গুলো তিনি বাকরুদ্ধ কণ্ঠে উচ্চারণ করতে থাকেন। তিনি ভুলে যাননি ভুট্টোকে দেয়া প্রতিশ্রুতির কথা জানাতে। সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি ভুট্টোকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। পাকিস্তানের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের বাইরে অন্য কিছু হওয়ার নয়।

তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য পৃথিবীর জাতি রাষ্ট্রসমূহের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি সবার কাছ থেকে স্বীকৃতিরও আহ্বান জানান। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণের নীতি-কৌশল ও আদর্শের কথাও তিনি জানিয়ে দেন। গোটা বাংলাদেশ যেমন তার কথায় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ১০ জানুয়ারির রেসকোর্স ময়দানের মঞ্চে সেই স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর আবেগ-ভালোবাসা আর নিখাদ দেশপ্রেমের প্রতিচ্ছবিও যেন তার মুখে দেখতে পাচ্ছিল। তিনি এলেন, বাংলাদেশকে গড়ে তোলার শপথ নিলেন। সেই শপথ তিনি ভঙ্গ করেননি। আমরা তার মতো বাংলাদেশকে আপন করে কজন নিতে পেরেছি? আজকের দিনে সেটিই হোক সবার আত্মজিজ্ঞাসার বিষয়।

লেখক: গবেষক-অধ্যাপক।

এ বিভাগের আরো খবর