বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাহাড়ে শান্তির কপোত কি অধরা?

  • শেখ আব্দুর রহমান   
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৩:১৭

অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দীর্ঘদিন পিছিয়ে থাকা পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিচুক্তির আগে মাত্র ২০০ কিলোমিটারের সড়ক ছিল। রুমা ও থানচি উপজেলার সাঙ্গু নদীর ওপর কোনো সেতু ছিল না। শান্তিচুক্তির পর ১ হাজার ৫ শ ৩২ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৯ হাজার ৮ শ ৩৯ কিলোমিটার পাকা ব্রিজ এবং ১৪১টি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ইন্টারনেট, টেলিযোগাযোগ ও মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের আওতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সঙ্গে তৎকালীন সরকার ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি’ স্বাক্ষর করে। চুক্তির ফলে পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতি-বাঙালি সংঘর্ষ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেলেও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও মৌলিক অগ্রগতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। চুক্তি সম্পাদনের ২৪ বছর পদার্পণকালে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ, উত্থাপিত অভিযোগসমূহ এবং বর্তমান পরিস্থিতি যৌক্তিকভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

ঐতিহাসিক পটভূমি ও চুক্তির বিষয়বস্তু

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের প্রাক্কালে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য অঞ্চলের একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্বায়ত্তশাসন, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচিতির স্বীকৃতির লক্ষ্যে কিছু দাবি উত্থাপন করেন। যুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও অন্যান্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার উক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের পরবর্তী সময়ে দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে মানবেন্দ্র লারমা ভারতে যাওয়ার পরে সংগঠনটিতে শান্তি বাহিনী নামের সামরিক শাখা যুক্ত হয়।

১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে শান্তি বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়তে থাকে এবং সামরিকভাবে অধিকতর সংগঠিত হয়। ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীর একটি সাঁজোয়া বহরের উপর অতর্কিত হামলার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে উক্ত অঞ্চলকে ২৪তম ডিভিশনের জিওসির অধীন করা হয়। সামরিক পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকার উক্ত অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা পাহাড়ি জনগণের মধ্যে অবিশ্বাস ও সংশয়ের জন্ম দেয়। ফলে উক্ত অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে গেরিলা সংগঠনের তৎপরতা নতুন মাত্রা লাভ করে।

প্রায় দুই দশক ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর অবৈধ অস্ত্র সমর্পণের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি পার্বত্য অঞ্চলের জনগণের বিশেষ মর্যাদা ও অবস্থানের স্বীকৃতি নিশ্চিত করেছে। চুক্তিটি ৪ খণ্ডে বিভক্ত, যেখানে ক খণ্ডে ৪টি; খ খণ্ডে ৩৫টি; গ খণ্ডে ১৪টি এবং ঘ খণ্ডে ১৯টি অর্থাৎ সর্বমোট ৭২টি ধারা রয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণভাবে এবং ১৫টি ধারা আংশিকভাবে বাস্তবায়ন করেছে এবং অবশিষ্ট ৯টি ধারার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন।

চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতা

পার্বত্য অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকার অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং কিছু উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রতিবছর উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন বাজেট ছিল ৫০.৫৭ কোটি টাকা, আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দ হয়েছে ১২৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন বাজেট বিগত ২৩ বছরে ২৪ গুণের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

পার্বত্য জেলার বিভিন্ন গ্রুপের পক্ষ থেকে জমির মালিকানা-সংক্রান্ত সমস্যাকে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হতো। উক্ত অঞ্চলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কোনো আইন বা বিধিমালা না থাকায় এর প্রধান কারণ। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ১৯৯৯ সাল থেকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন’ কাজ করছে। এছাড়া, সরকার ২০০১ সালে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন প্রণয়ন করে এবং ২০১৬ সালে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে আরও যুগোপযোগী করা হয়।

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ নামে স্বতন্ত্র্য মন্ত্রণালয় গঠন করে এ অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রমে গতিশীলতা নিশ্চিত করা হয়। পাহাড়ি জনগণের কল্যাণের নিমিত্তে ১৯৯৯ সালে গঠন করা হয় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ’, যার বর্তমান চেয়ারম্যান সন্তু লারমা। এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসমূহের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বিভিন্ন সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে, ১৯৭৬ সালে জারিকৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম বোর্ড অধ্যাদেশ বাতিল করে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৪’ পাস করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিষদসমূহকে অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে আইনের বিভিন্ন ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়। এছাড়া, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগণের যথাযথ সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা হয়।

পার্বত্য এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে এ যাবৎ ১৭৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া, রাঙামাটিতে একটি মেডিক্যাল কলেজ ও একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কোটাসুবিধা প্রদান এবং ৩০ হাজার ৫শ ৪৬ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।

সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পিছিয়ে পড়া নৃগোষ্ঠীর উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নির্ধারিত হারে কোটার অগ্রাধিকার প্রদানসহ পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের শর্ত শিথিল করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।

অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দীর্ঘদিন পিছিয়ে থাকা পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিচুক্তির আগে মাত্র ২০০ কিলোমিটারের সড়ক ছিল। রুমা ও থানচি উপজেলার সাঙ্গু নদীর ওপর কোনো সেতু ছিল না। শান্তিচুক্তির পর ১ হাজার ৫ শ ৩২ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৯ হাজার ৮ শ ৩৯ কিলোমিটার পাকা ব্রিজ এবং ১৪১টি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ইন্টারনেট, টেলিযোগাযোগ ও মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের আওতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করা হয়েছে।

এছাড়া, পার্বত্য এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহের লক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলায় ২ হাজার ৮শ ৯৯ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু এলাকা দুর্গম হওয়ায় সেখানে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা প্রায় অসম্ভব। এসব দুর্গম এলাকায় বসবাসরত ৫ হাজার ৫ শটি পরিবারকে সৌরবিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি কি অধরা?

চুক্তি বাস্তবায়নে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সংসদ উপনেতার নেতৃত্বে ‘পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটি’ এবং সংসদে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতে পারে যে, সরকারের এত উদ্যোগ গ্রহণের পরও বিগত ২৪ বছরে কেন পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি? এখনও কেন পার্বত্য অঞ্চলে রক্তক্ষয়ী সংঘাত দেখা যায়? যদিও এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, সাধারণ মানুষের ওপর এসবের নেতিবাচক প্রভাব ও চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরির কারণে উক্ত ঘটনাসমূহের কারণ পর্যালোচনাপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

পার্বত্য অঞ্চলে অশান্তির মূল কারণ হলো বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল। সন্তু লারমার ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ ভেঙে এখন চারটি দলে বিভক্ত হয়েছে। আঞ্চলিক সংগঠন ও এদের উপদলগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব, বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল হ্রাসের লক্ষ্যে চারদলের মধ্যকার গৃহীত প্রতিশ্রুতিও তারা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়।

এসব উপদলের অভ্যন্তরীণ হানাহানি একদিকে উক্ত অঞ্চলে বিরাজমান শান্তির পরিবেশ নষ্ট করে, অপরদিকে শান্তি চুক্তির বিভিন্ন ধারা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। চলমান এসব সশস্ত্র সংঘর্ষের, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার অবসান ব্যতীত শান্তি চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

চুক্তি বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হওয়ার জন্য পার্বত্য অঞ্চলের সংগঠনগুলো সরকারকে দায়ী করলেও, শান্তির জন্য অস্ত্র সমর্পণের মূল শর্ত তারা বিগত ২৩ বছরেও পূরণ করেনি। এসব অবৈধ অস্ত্র দিয়ে সশস্ত্র দলগুলো স্থানীয় পর্যায়ে অপহরণ, হত্যা ও চাঁদাবাজির করে থাকে। আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হিসাব মতে, পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়ে থাকে।

২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৫শ ৩৬ জনকে অপহরণ এবং ৩শ ৭৬ জনকে হত্যা করা হয়। এসব অপকর্মে জড়িত সংগঠনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে এদের সদস্যদের মূলধারার জনস্রোতে আনার লক্ষ্যে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাছাড়া, যেসব বিষয়ে সরকার ও তাদের মধ্যে এখনও সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে তা দূর করার জন্য সরকারকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

শান্তি চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে করণীয়

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সংঘাত থেকে শান্তির পথে অগ্রযাত্রা কখনো কণ্টকমুক্ত ছিল না। তাছাড়া, শান্তি প্রতিষ্ঠা একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন উদ্যোগ ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি-পাহাড়িদের সঙ্গে বাঙালি ও সরকারি বাহিনীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখার লক্ষ্যে ২৪ বছর আগে সম্পাদিত শান্তি চুক্তি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

তৎকালীন সময়ে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সফল রাজনৈতিক সমাধান এক বিরল অর্জন, যার স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে গৃহীত নানা উদ্যোগ চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছার বার্তা বহন করে।

যদিও ইতোমধ্যে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে সিংভাগের বেশি ধারা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে, অবশিষ্ট ধারা বাস্তবায়নের জন্য পার্বত্য অঞ্চলের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার। পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিকাশ বেগবান করার যে সুযোগ শান্তি চুক্তি সৃষ্টি করেছে তার সফল বাস্তবায়ন বহুলাংশে নির্ভর করছে সেখানে অবস্থানরত জনগণের আন্তরিক সহযোগিতা ও সদিচ্ছার উপর।

শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও এ অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগসমূহ অবশ্যই প্রসংশার দাবিদার। যদিও এসব উদ্যোগসমূহ প্রমাণ করে যে, সরকার এ অঞ্চলকে কখনও বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা মনে করেনি, পাহাড়ি জনগণের মনে এ অনুভূতির সঞ্চার করাও সরকারের দায়িত্ব। সরকার যত উদ্যোগই গ্রহণ করুক না কেন, যতদিন পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন না হবে ততদিনে এর দায়ভার কিছুটা হলেও সরকারের ওপর বর্তাবে।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর