বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেগম রোকেয়া শ্রদ্ধাবরেষু

  • সুলতানা লাবু   
  • ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৯:৩৪

বেগম রোকেয়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি। কিন্তু তিনি ছিলেন শিক্ষানুরাগী, শিক্ষক, মুসলিম নারীশিক্ষার অগ্রপথিক। কুসংস্কারের মধ্যে থেকেও তিনি ছিলেন সমাজ সংস্কারক। ১৯১৭ সালে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে বিখ্যাত আলী ভাইদের মা আম্মা বেগম ও অ্যানি বেশানতের আগমন উপলক্ষে গঠিত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে কজন অনুগামীসহ যোগ দিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া।

১৯০৯ সালের ১ অক্টোবর। ভারতের বিহারের ভাগলপুরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শাহ মালেক আব্দুলের সরকারি বাসভবন ‘গোলকুঠি’তে যাত্রা শুরু করল একটি স্কুল। স্কুলের নাম সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। স্কুলের সম্বল মাত্র একটি বেঞ্চি। আর ওই বেঞ্চিতে এঁটে গিয়েছে স্কুলের সব ছাত্রী। স্কুলের ছাত্রীর সংখ্যা যে মাত্র পাঁচজন। এর মধ্যে চারছাত্রীই আব্দুল মালেকের কন্যা। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বেগম রোকেয়া কিন্তু ছাত্রীদের কাছে পরিচিত হলেন ‘স্কুল কি ফুপ্পি’ হিসেবে।

স্কুলের জন্য ছাত্রী জোগাড় করতে এই ফুপ্পি রোকেয়াকে কম কষ্ট করতে হয়নি। নিজেকে বোরকায় ঢেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন। অভিভাবকদের হাতে পায়ে ধরেছেন। কিন্তু গোঁড়া মুসলমান সমাজ পাত্তাই দিল না ফুপ্পিকে। খালি হাতে বিদায় করে দিল।

কিন্তু তিনি বেগম রোকেয়া। এত সহজে ভেঙে পড়েননি। তার ব্যক্তিগত জীবনের উপর দিয়েও ঝড়-ঝাপটা কম যায়নি। সেগুলোকে থোড়াই কেয়ার করে এগিয়ে এসেছেন সমাজের কুসংস্কার ভাঙতে। বাঙালি মুসলমান সমাজকে নতুন করে গড়ে তুলতে। বিশেষ করে অন্তঃপুরবাসিনী মুসলমান নারীদের অন্তত শিক্ষার আলোটুকু দেখানোর অদম্য ইচ্ছে তার মধ্যে। তিনি নিজেও ছিলেন এই অন্তঃপুরেরই একজন।

১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রামে তার জন্ম। বাবা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের। মা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। তার বাবা এবং মা দুজনই ছিলেন অত্যন্ত ধনী ও প্রভাবশালী জমিদার ঘরের সন্তান। বাড়ির বড়রা রোকেয়াকে আদর করে ডাকতেন রুকু বা রকু বলে। বেগম রোকেয়ারা তিন ভাই আর তিন বোন।

অন্য মুসলিম পরিবারের মতো রোকেয়ার পরিবারও ছিল অত্যন্ত রক্ষণশীল। তার বাবা ছিলেন বেশ উচ্চশিক্ষিত। আরবি, উর্দু, ফারসি, বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী। পাশাপাশি সমাজসেবা ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য তার সুনাম ছিল। কিন্তু বাড়ির মেয়েদের পর্দাপ্রথার ব্যাপারে ছিলেন ভীষণ কঠোর। আর সে কারণেই রোকেয়ার ভাইয়েরা পাঠশালায় শিক্ষাসহ স্বাধীনভাবে জ্ঞানচর্চার সুযোগ পেলেও, বোনেরা ছিল বঞ্চিত। মেয়েরা বড়জোর আরবি ও ফারসি ভাষা শিখতে পারত। এই শেখার সুযোগটা ছিল কেবল ধর্মীয় পুস্তক পড়ার জন্য। কিন্তু রোকেয়া ছিলেন ব্যতিক্রম। ভাইদের মতো লেখাপড়ার সুযোগ চাইতেন তিনি। তার আগ্রহে ও ভাইদের উৎসাহে কলকাতার এক ইংরেজ মহিলার কাছে লেখাপড়া শেখার সুযোগও মিলেছিল কিছুদিন। ইংরেজের কাছে লেখাপড়া শিখছে রুকু! ব্যস। পাড়াপড়শি আর আত্মীয়দের মাথায় যেন বজ্রপাত হলো। প্রবল বাধা আসতে লাগল তাদের তরফ থেকে। আর সেই বাধায় পিছু হটলেন রোকেয়ার মা। কিন্তু জ্ঞানতৃষ্ণার্ত রোকেয়াকে রুখবে, এমন সাধ্য কার?

রাতের অন্ধকারে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ত, তখনই জ্ঞান-আলোকের সন্ধানে নেমে পড়তেন রোকেয়া। বড়ভাই ইব্রাহিম সাবের তখন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্র। ছুটি পেলে বাড়িতে আসতেন। তখনই মোমের আলোয় বোন রোকেয়াকে পড়াতেন ইব্রাহিম। বড় ভাইয়ের হাত ধরেই বাংলাভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করলেন রোকেয়া। তারপর ইংরেজি বই।

জ্ঞানসমুদ্রে তার পথচলায় সহায়তা করার জন্য বড় ভাইয়ের কাছে চিরঋণী ছিলেন রোকেয়া। তার ‘পদ্মরাগ’ উপন্যাসটির উৎসর্গপত্রে বেগম রোকেয়া লিখেছেন- ‘দাদা! আমাকে তুমিই হাতে গড়িয়া তুলিয়াছ।’

বড় ভাইয়ের কল্যাণে ইংরেজি ভাষায় তার দক্ষতা তৈরি হলো। কিন্তু মাতৃভাষা বাংলা যে অজানাই রয়ে গেল। সম্ভ্রান্ত মুসলমানদের কাছে তখন বাংলা ছিল ‘নাযায়েজ’ ভাষা। ছেলেরাই যেখানে বাংলাচর্চার ধার ধারে না, সেখানে মেয়েদের বাংলা শেখার কথা তো চিন্তাই করা যায় না। এবার এগিয়ে আসেন রোকেয়ার বড় বোন করিমুন্নেসা। করিমুন্নেসার বিয়ে হয়েছিল টাঙ্গাইলের বিখ্যাত গজনভী জমিদার বাড়িতে। বিয়ের মাত্র নয় বছরের মধ্যে বিধবা হয়ে কলকাতায় চলে এলেন করিমুন্নেসা। করিমুন্নেসার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বিলেতে লেখাপড়া করতে চলে গেল। আর ছোট ছেলের লেখাপড়ার ব্যবস্থা হলো বাড়িতেই। সমাজের প্রবল বাধা ও আপত্তির মুখেও নিজের ছোট ছেলের সঙ্গে ছোট বোন রোকেয়ার লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন করিমুন্নেসা। সেই কৃতজ্ঞতা থেকে বড় বোনকে তিনি স্মরণ করেছেন এভাবে-

“আমি শৈশবে তোমারই স্নেহের প্রসাদে বর্ণ পরিচয় পড়িতে শিখি। অপর অপর আত্মীয়গণ আমার উর্দু ও ফারসি পড়ায় ততো আপত্তি না করলেও বাংলা পড়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন। একমাত্র তুমিই আমার বাংলা পড়ার অনুকূলে ছিলে। আমার বিবাহের পর, তুমিই আশঙ্কা করিয়াছিলে যে, আমি বাংলা ভাষা একেবারে ভুলিয়া যাইব। চৌদ্দ বৎসর ভাগলপুরে থাকিয়া বঙ্গভাষায় কথাবার্তা কহিবার একটি লোক না পাইয়াও যে বঙ্গভাষা ভুলি নাই, তাহা কেবল তোমারই আশীর্বাদে।”

১৮৯৮ সালে আঠারো বছর বয়সে তার বিয়ে হয় খানবাহাদুর সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন বিহারের ভাগলপুরের বাসিন্দা এবং উড়িষ্যার কনিকা স্টেটের কোর্ট অব ওয়ার্ডেসের নিযুক্ত ম্যানেজার। পরের বছর ভাগলপুরের কমিশনারের পার্সোনাল অ্যাসিসটেন্ট হন সাখাওয়াত। বেগম রোকেয়া ছিলেন অসম্ভব সুন্দরী। তার সঙ্গে বিপত্নীক ও এক কন্যা সন্তানের জনক সাখাওয়াতের বিয়ে ঠিক করেছিলেন তার ভাই ইব্রাহিম। এর কারণ ছিল। রোকেয়ার তুলনায় বয়স বেশি হলেও মানুষ হিসেবে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন অসাধারণ। তার ব্যবহার ছিল অমায়িক ও জ্ঞানচর্চার প্রতি ছিল অসম্ভব শ্রদ্ধাবোধ। বিয়ের পর রোকেয়ার জন্য জ্ঞানসাগর উন্মুক্ত করে দেন সাখাওয়াত। স্ত্রীর লেখাপড়ায় বিশেষ যত্নবান তো ছিলেনই, রোকেয়ার সাহিত্যচর্চার প্রতিও ছিল তার সজাগ দৃষ্টি। সংসারের চাপে রোকেয়ার প্রতিভা আর আগ্রহে যাতে ভাটা না পড়ে, সে কারণে অষ্টভুজাকৃতির একটি ঘর বানিয়ে দেন তিনি। সেখানেই নিরিবিলিতে জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করতে থাকেন বেগম রোকেয়া। স্বামীর অনুপ্রেরণা আর সহায়তায় ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন রোকেয়া। দেশি-বিদেশি বই ও পত্রিকা পড়ার সুযোগ পান।

তখন মুসলমান মেয়েদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিলই না বলতে গেলে। নারী শিক্ষার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন দেখতেন রোকেয়া। তার সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশীদারও ছিলেন তার স্বামী। পরামর্শের সঙ্গে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায় দশ হাজার টাকা অনুদান দেন সাখাওয়াত হোসেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, স্কুল প্রতিষ্ঠার আগেই ১৯০৯ সালের ৩ মে বিধবা হন রোকেয়া।

স্বামীর মৃত্যুর পর চরম বেকায়দায় পড়ে যান রোকেয়া। এমনিতেই তার জ্ঞানচর্চার ধৃষ্টতার কারণে নিজের আত্মীয় ও সমাজের কাছে চক্ষুশূল হয়েই ছিলেন। ওদিকে স্বামীর প্রথম পক্ষের মেয়ে ও মেয়েজামাই মিলে শুরু করল তার বিরুদ্ধাচরণ, এবং সেটা ধর্মের দোহাই তুলে। মূল কারণ ছিল সম্পত্তি। অকালেই পরপর দুটি কন্যাসন্তান হারিয়েছেন। বিশ্বসংসারে একা হয়ে পড়লেন রোকেয়া। পারিবারিক বন্ধনহীন বেগম রোকেয়া হয়ে উঠলেন চরম দুঃসাহসী। সম্পত্তিজনিত জটিলতায় ও দুর্ব্যবহারের শিকার হয়ে ভাগলপুরে স্বামীর সম্পত্তি ছেড়ে দিয়ে ১৯১০ সালের ৩ ডিসেম্বর চলে এলেন কলকাতায়। কলকাতায় তার নির্ভর করার মতো চেনাপরিচিত একটি মানুষও ছিল না। কিন্তু ছিল অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও চরম আত্মবিশ্বাস। ওদিকে তিনি চলে আসায় বন্ধ হয়ে গেল ভাগলপুরের বালিকা বিদ্যালয়। তবে কলকাতার ১৩ ওয়ালিউল্লাহ রোডে ভাড়াবাড়িতে নতুন করে শুরু করলেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল।

১৯১১ সালের ১৬ মার্চ দুটো বেঞ্চি আর আটজন ছাত্রী নিয়ে প্রথম ক্লাস শুরু করলেন বেগম রোকেয়া। নিজেই স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকা। নিজের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা ছিল না, কিন্তু স্কুল চালাতে হলো তো অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে। কলকাতার প্রভাবশালী নারীদের সহায়তায় কলকাতা বেথুন, গোখেল মেমোরিয়ালসহ বেশ কিছু মেয়েদের স্কুলে নিয়মিত যাওয়া শুরু করলেন রোকেয়া। ওসব নামি স্কুলের পড়ানোর ধরন, স্কুল পরিচালনার খুঁটিনাটি পদ্ধতি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলেন। আর সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দাঁড় করিয়ে ফেললেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলটি। স্কুলের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছাত্রী জোগাড় করতেও নেমেছিলেন রোকেয়া। কিন্তু নারীশিক্ষার জন্য বাঙালি মুসলমান সমাজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বাধ্য হয়ে স্কুলের শিক্ষার মাধ্যম রাখতে হলো উর্দু। তবু যাতে মুসলমান মেয়েরা লেখাপড়া করে! ছাত্রীদের বেতনও মওকুফ করেছিলেন। এমনকি যাতায়াতের জন্য স্কুলের পক্ষ থেকে দেয়া গাড়ির ভাড়াও নিতেন না। বাঙালি মেয়েদের শিক্ষার জন্য কী অসীম চেষ্টাই না করেছিলেন বেগম রোকেয়া! নিজের সমস্ত সম্বল ঢেলে দিয়েছিলেন স্কুলের জন্য।

তিন বছর পর ছাত্রী ও ক্লাসসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর দুবার জায়গা বদলে ১৯১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৮৬/এ লোয়ার সার্কুলার রোডে একটি দোতলা বাড়িতে স্কুল স্থানান্তর করেন। সে বছর স্কুলের ছাত্রীসংখ্যা ছিল ৮৪ জন।

১৯১৭ সালের শুরুতেই স্কুলে বাংলা শাখার প্রবর্তন করলেও ১৯১৯ সালে ছাত্রীর অভাবে বন্ধ করে দিতে হলো। ১৯৩১ সালে স্কুলের তিন মুসলিম ছাত্রী ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। ১৯৩২ সালে স্কুলটি আবার জায়গা বদলে চলে আসে ১৬২ নং লোয়ার সার্কুলার রোডে। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় স্কুলের ছাত্রীদের পাশের হার ছিল শতকরা ৭৫।

তার স্কুলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা, হাতের কাজ, সেলাইয়ের কাজসহ শরীরচর্চার শিক্ষাও ছিল বাধ্যতামূলক। চরম বৈরী পরিবেশের মধ্যে থেকেও তিনি নারী শিক্ষায় এনেছিলেন বৈচিত্র্য। সে যুগে যা ছিল অকল্পনীয়।

বেগম রোকেয়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি। কিন্তু তিনি ছিলেন শিক্ষানুরাগী, শিক্ষক, মুসলিম নারীশিক্ষার অগ্রপথিক। কুসংস্কারের মধ্যে থেকেও তিনি ছিলেন সমাজ সংস্কারক। ১৯১৭ সালে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে বিখ্যাত আলী ভাইদের মা আম্মা বেগম ও অ্যানি বেশানতের আগমন উপলক্ষে গঠিত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে কজন অনুগামীসহ যোগ দিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া।

১৯১৬ সালে ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম’ নামে একটি নারী সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯১৭ সালের ১৫ এপ্রিল ওই সংগঠনের ৫০ নারী সদস্যের উপস্থিতিতে প্রথম বার্ষিক সম্মেলন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। নারী ভোটাধিকারের আন্দোলনের নেতৃত্বও দিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। ১৯৩০ সালের ২ ডিসেম্বর প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে উড়োজাহাজে চড়েছিলেন। সেটা নিয়ে ‘বায়ুযানে পঞ্চাশ মাইল’ শিরোনামে একটা লেখাও লিখেছেন।

বাংলা ভাষা শেখা নিষিদ্ধ থাকার পরেও তিনি ছিলেন বাংলা ভাষায় সুসাহিত্যিক। দার্শনিক। চোখে আঙুল দিয়ে তিনি সমাজের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তার কিছু বাক্য এখনও প্রবাদতুল্য। সাহিত্যিক হিসেবে বেগম রোকেয়ার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯০২ সালে। হরেন্দ্রলাল রায় ও জ্ঞানেন্দ্রলাল রায়ের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘নবপ্রভা’ নামক পত্রিকার ফাল্গুন ১৩০৮ সংখ্যায় তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। শিরোনাম ছিল ‘পিপাসা’। প্রথম ইংরেজি রচনা ‘সুলতানাস ড্রিম’ প্রকাশিত হয় ১৯০৫ সালে মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত ‘ইন্ডিয়ান লেডিস ম্যাগাজিন’ নামক পত্রিকায়। সম্পাদক ছিলেন কমলা মাতমিয়া নাথান ও সরোজিনী নাইডু।

তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা মাত্র পাঁচটি- পদ্মরাগ, মতিচুর (দুই খণ্ড), অবরোধবাসিনী ও সুলতানার স্বপ্ন।

বাঙালি মুসলামান মেয়েদের শিক্ষা বিস্তারে তার আরও বড় স্বপ্ন ছিল। বেগম শামসুন্নাহর মাহমুদের কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি সে স্বপ্নের কথাও জানিয়েছিলেন। একটি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মাত্র ৫৩ বছর বয়সে অকালে চলে গেলেন বেগম রোকেয়া। বেঁচে থাকলে হয়ত সে স্বপ্নও পূরণ করতে পারতেন। শিক্ষিত হয়ে আত্মসম্মান নিয়ে পুরুষের পাশাপাশি, পুরুষের সমান অংশীদার হয়ে কী করে সমাজে বেঁচে থাকতে হয়, অসংখ্য বাঙালি মুসলিম নারীকে তিনি শুধু সে স্বপ্নই নয়, পথও দেখিয়েছেন।

জন্ম ও প্রয়াণ দিবসে তার জন্য শ্রদ্ধা।

সহায়ক: আবদুল কাদির সম্পাদিত রোকেয়া রচনাবলী, বাংলা একাডেমি, ঢাকা।

লেখক: শিশুসাহিত্যিক ও কলাম লেখক।

এ বিভাগের আরো খবর