বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তারেক জিয়ার নতুন কৌশল গুজবসন্ত্রাস

  • এস. এম. রাকিবুল হাসান   
  • ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ১৪:৫৪

গুজব সিন্ডিকেটে রয়েছে সেনানিবাসে অবাঞ্ছিত ও চাকরিচ্যুত কজন সেনাকর্মকর্তা, বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত বিদেশে আত্মগোপনকারী ভুঁইফোঁড় সাংবাদিক, রাজাকারের সন্তান ও শিবির ক্যাডার। এ সিন্ডিকেট প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু পরিবার-সরকার, বিচার বিভাগ-দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে; তখনই দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার মানসে বিদেশে বসে ক্রমাগত চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে তারেক জিয়ার নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র। এরা প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার অশুভ প্রয়াস নিয়ে বিশাল অর্থব্যয়ে কিছু সাইবার সন্ত্রাসী ভাড়া করে গড়ে তুলেছে গুজব সিন্ডিকেট।

তাদের এ গুজব সিন্ডিকেটে রয়েছে সেনানিবাসে অবাঞ্ছিত ও চাকরিচ্যুত কজন সেনাকর্মকর্তা, বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত বিদেশে আত্মগোপনকারী ভুঁইফোঁড় সাংবাদিক, রাজাকারের সন্তান ও শিবির ক্যাডার। এ সিন্ডিকেট প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু পরিবার-সরকার, বিচার বিভাগ-দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে।

রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য, ভুয়া ছবি দিয়ে অডিও-ভিডিও তৈরি করে ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তারেক জিয়ার এ গুজব সিন্ডিকেট শুরুর দিকে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেশকে সাময়িক অস্থিতিশীল করতে পারলেও দেশপ্রেমিক জনগণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা উপলব্ধি করতে পেরেছে।

এবার আসা যাক তারেক জিয়া গুজবকে হাতিয়ার হিসেবে কেন ব্যবহার করছে এবং কীভাবে করছে?

জার্মানির নাৎসি নেতা এডলফ হিটলারের তথ্য উপদেষ্টা গোয়েবলস বিশ্বাস করতেন, ‘একটা মিথ্যা দশবার প্রচার করলে তা সত্যে পরিণত হয়।’ ২য় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে এ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তারা অনেক গুজব ছড়িয়েছিল এবং সফলতাও পায়। তারেক রহমান ও তার সংঘবদ্ধ চক্র বিদেশে বসে এই তত্ত্বের আলোকেই গুজব ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

ইতিহাসভিত্তিক গবেষণায় বলা হয়েছে, রাজনীতিতে গুজব বরাবর একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, কলুষিত রাজনৈতিক শক্তির মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির কারণে যাতে ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারার ক্ষতি করা যায়- এ ধরনের মানসিকতা থেকে গুজব ছড়ানোর মতো অপরাধে মানুষ সম্পৃক্ত হয়। এর ফলে যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়ে, এটি তারা কখনও চিন্তা করে না।

রবার্ট এইচ নাপ তার ‘এ সাইকোলজি অব রিউমার’ বইয়ে লিখেছেন, গুজবের তিনটি মৌলিক দিক আছে। প্রথমটি হলো মানুষের মুখ। গুজব এক মুখ থেকে আরেক মুখে প্রচারিত হয়ে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সময় ও মানুষ- এ দুটি উপাদানের কারণে তা বিকৃতও হয় বিভিন্নভাবে। দ্বিতীয় দিকটি হলো- গুজবের জ্ঞান দেয়া। এর দুটো দিক থাকতে পারে। একটি হলো ইতিবাচক আরেকটি হলো নেতিবাচক। তৃতীয় দিকটি হলো মানুষের মন গুজব দ্বারা প্রভাবিত হতে চায় ও গ্রহণ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

জনপ্রত্যাশা থেকে ছিটকে পড়ে গুজব সন্ত্রাসে ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে চলছে বিএনপি। মাঠের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এখন গুজব ছড়িয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত এ গুজব সিন্ডিকেট। এই সংঘবদ্ধ চক্রটির ছড়ানো কিছু গুজবের নমুনা:

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ‘পুলিশের গুলিতে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবুবকর চিকিৎসারত অবস্থায় মারা গেছে!’ এই গুজব ছড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রণক্ষেত্রে পরিণত করেছিল এ চক্রটি।

‘হলে বিদ্যুৎ বন্ধ করে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা হচ্ছে!’ এই গুজবটিও ছড়ানো হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়। কিন্তু প্রত্যেক হলেই বিদ্যুৎ ছিল। সবাই ভেবেছিল আমার হলে হয়তো বিদ্যুৎ আছে, অন্য সব হলে বিদ্যুৎ বন্ধ করে হামলা হচ্ছে।

২০১৮ সালের এপ্রিলে বিএনপির নেতাকর্মীদের শত শত শেয়ারের মাধ্যমে ‘তারেক জিয়াকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হবার আমন্ত্রণ’ শীর্ষক গুজবটি ছড়িয়ে দেয়া হয়; যা পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রতীয়মান হয়।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়ে এমন কিছু গুজব ছড়ানো হয়েছিল, যা তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের অবাক করে দিয়েছে। দেশের বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকাকে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে নকল করে। যার কোনোটাই আসল কাগজ ছিল না। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউকে থেকে পরিচালিত ৭৮টি ফেসবুক আইডির মাধ্যমে তারা এই গুজব ছড়ায়।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতো একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংস আন্দোলনে পরিণত করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পেছনে তখন কলকাঠি নেড়েছিল এই গুজব সিন্ডিকেট। বর্তমানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ‘পরিবহনে হাফ ভাড়া চাই’ শীর্ষক যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংস করে তুলতে ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছে গুজব সিন্ডিকেট।

‘পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে।’ এই গুজবটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে দিয়েছিল এ চক্রটি। এই গুজবকে কেন্দ্র করে ছেলেধরা সন্দেহে দেশজুড়ে গণপিটুনিতে প্রাণ হারায় অন্তত ২০ জন।

২০১২ সালের শেষদিকে ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননা করে ছবি সংযুক্ত করে গুজব ছড়ানোর কুশীলব ছিল এই গুজব সিন্ডিকেট। যার ফলে সামপ্রদায়িক শক্তি রামু উপজেলার ১২ বৌদ্ধ মন্দির ও ৩০টি বাড়িতে আগুন দেয়।

জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ঢাকার পল্লবীতে শাহীন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার একটি পুরোনো ভিডিওকে ফেনীর যতন কুমার সাহার হত্যার ভিডিও বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল এ চক্রটি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় দেশব্যাপী দৃশ্যমান উন্নয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়নে দেশ এখন ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করছে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এই সহজলভ্যতাকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করছে বিএনপি-জামায়াতের মতো স্বার্থান্বেষী মহল।

তারেক জিয়া নিয়ন্ত্রিত গুজব সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রপ্রসূত বিভিন্ন মিথ্যাচারকে ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশীয় ভুঁইফোঁড় ‘পণ্ডিতেরা’। যদিও সাধারণ মানুষ এসব অশুভ শক্তিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপরও সরকারকে ঘায়েল করার অপকৌশল হিসেবে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপশক্তি এখন সাইবারযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা শুধু গুজব ছড়িয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য উসকানি দিচ্ছে মৌলবাদী প্রেতাত্মাদের।

তাদের এ গুজব সন্ত্রাস রুখতে গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারের যোগাযোগের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার চৌকস সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গুজব ছড়ানোর কুশীলবদের ইতোমধ্যেই শনাক্ত করতে পেরেছে সরকার। গুজব ছড়িয়ে দিয়ে যাতে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে এ ব্যাপারে সবসময় তৎপর আমাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল সদস্য।

অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও মিথ্যা তথ্য প্রচার রোধে মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্য ‘আসল চিনি’ নামে একটি উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। গুজব সন্ত্রাসীদের রুখতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে নিজে সচেতন থাকতে হবে এবং আশপাশের সকলকে সচেতন রাখতে হবে।

সবাইকে মনে রাখতে হবে- গুজব একটি সামাজিক অপরাধ, যা একটি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের অন্যতম কারণ। গুজব সৃষ্টি ও গুজব ছড়ানো দুটোই অপরাধ। তাই একজন সুনাগরিক হিসেবে আমাদের ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ( ফেইসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব) কোনো কিছু শেয়ার করার আগে ঘটনার সত্যতা ও প্রকৃত উৎস সম্পর্কে অবগত হয়ে শেয়ার করা উচিত। কেননা, আমাদের শেয়ার করা একটি ভুল তথ্য আমাদের বন্ধু ও অনুসারীদের মাঝে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের এ যুগে আমাদের বিবেকবোধকে কাজে লাগিয়ে কর্মের মাধ্যমে ‘হুজুগে বাঙালি’ তকমা থেকে বেরিয়ে আসা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

লেখক: ছাত্রনেতা

এ বিভাগের আরো খবর