বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বাসের কি দরকার নেই?

  •    
  • ১৮ নভেম্বর, ২০২১ ১৮:৩২

ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর মালিক সমিতি যখন বলল, আর সিটিং সার্ভিস থাকবে না; তখনই শুরু হলো নতুন ঝামেলা। সিটিং সার্ভিস না থাকলে ওয়েবিল ধরে হিসাবের বালাই থাকবে না; নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশিও আদায় করা যাবে না। তাহলে সিটিং সার্ভিসের বাসমালিকরা কোন পদ্ধতিতে টাকা বুঝে পাবেন?

রাজধানীর মালিবাগের কাছে মৌচাক মোড়ে দেশ টিভিতে যখন কাজ শুরু করি তখন সিটি বাসে কাউন্টার সার্ভিসের যুগ। এটিসিএল বিটিসিএল কত নামের সার্ভিস যে চালু হলো। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ থেকে চলত রাজধানী এক্সপ্রেস, মতিঝিল পর্যন্ত। তাতে করে ধানমন্ডি সাতাশ নম্বরে নেমে উঠতাম বনশ্রীগামী আরেকটি বাসে। না হলে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এসে ফাগুন পরিবহন।

সেটা চলত আজিমপুর থেকে কাকরাইল-মৌচাক-রামপুরা হয়ে উত্তরা রুটে। তারপর এল লাব্বাইক- সাভার থেকে মগবাজার-মৌচাক হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত চলত। তাতেও চড়তে হতো রিকশায় কলেজ গেট এসে। কোনো কোনোদিন দুই তিনটা বাস ছেড়ে দিয়েও ওঠার জায়গা মিলত না। একসময় সেই কাউন্টার ব্যবস্থাও উঠে গেল।

মহাখালীর ডিবিসি নিউজে যখন আসা-যাওয়া শুরু করি তখন উপায় ছিল শিয়া মসজিদ থেকে উত্তরা রুটের ভূঁইয়া পরিবহন। বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি নেমে রিকশায় ওয়্যারলেস গেট আসতাম। তারপর চালু হলো বাড্ডা লিংক রোড টু শিয়া মসজিদ হিউম্যান হলার (লেগুনা) সার্ভিস। সেটাও বিশ টাকা করে নিত।

এর কিছুদিন পর শিয়া মসজিদ-বনশ্রী রুটেও চালু হলো আলিফ পরিবহন। গুলশান পর্যন্ত বিশ টাকা ভাড়া, আসনের বাড়তি লোক নেয় না। মন্দ কী? সকাল বেলা অফিসের সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বাসে চড়তে হতো। বেশি দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখলে হিউম্যান হলার তো আছেই।

রমিজউদ্দিন কলেজের দুই ছাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর কচিকাঁচাদের আন্দোলন শুরু হলে বন্ধ হয়ে গেল হিউম্যান হলার সার্ভিস। কেননা এগুলোর চালক ছিল কিশোরশ্রেণি, হালকা যানের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ারই বয়স হয়নি। তো হিউম্যান হলার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আলিফে ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া শুরু হলো। শুরুতে মানবিক বিবেচনায় একজন দুইজন।

তারপর প্রথম চেকের আগে অনেকেই নেমে যাবে তাই সব আসনে যাত্রী দেখাতে বাড়তি নেয়া শুরু হলো। তারপর আর কোনো নিয়মের বালাই রইল না। অফিসে যাওয়ার সময় শুরুর স্টপেজ থেকে বসার সুযোগ মিললেও- ফেরার সময় মাঝপথ থেকে বসার সুযোগ মেলা সহজ হতো না সব সময়। ফলে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়ার বিপক্ষে যাওয়ার উপায় ছিল না।

তখন কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সা হিসাবে শিয়া মসজিদ থেকে মহাখালী পর্যন্ত ৮.২ কিলোমিটারের ভাড়া ছিল ১৩ টাকা, নিত ২০ টাকা। শিয়া মসজিদ থেকে ছেড়ে আসার পর প্রথম চেক আগারগাঁওয়ে- নিয়ম করল চেকের আগে যেখান থেকেই ওঠেন না কেন গুলশান পর্যন্ত ২০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। চেকার মাথা গুনে ওয়েবিলে যাত্রীসংখ্যা লিখে দেবেন; সেগুলো ধরেই দিনশেষে হিসাব করে টাকা বুঝিয়ে দেবেন কন্ডাকটর আর চালক।

আদায় হওয়া টাকার এগারো শতাংশ হিসাবে টাকা পাবেন চালক আর সাত শতাংশ পাবেন কন্ডাকটর। আর চেকের আগে ও পরে ওঠা-নামা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা মিনিমাম ভাড়া (তখন ৭ টাকা থাকলেও ৫ টাকা নিত, তবে একটু দূরে গেলেই ১০ টাকা নিত) ছিল ড্রাইভার কন্ডাকটরের নাশতা আর খাবার খরচ।

ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর মালিক সমিতি যখন বলল, আর সিটিং সার্ভিস থাকবে না; তখনই শুরু হলো নতুন ঝামেলা। সিটিং সার্ভিস না থাকলে ওয়েবিল ধরে হিসাবের বালাই থাকবে না; নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশিও আদায় করা যাবে না। তাহলে সিটিং সার্ভিসের বাসমালিকরা কোন পদ্ধতিতে টাকা বুঝে পাবেন? তারা প্রতি চেকে পাঁচ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়ে ড্রাইভার আর কন্ডাকটরের হিস্যা কমিয়ে দিলেন; ড্রাইভার পাবেন আদায়ের ১০ শতাংশ আর কন্ডাকটর ৬ শতাংশ। কারণ মিনিমাম ভাড়া হয়ে গেছে ১০ টাকা।

আগে যেখানে পাঁচ টাকা নিত এখন নেবে ১০, আর যেখানে ১০ টাকা নিত এখন নেবে ১৫ টাকা! হিসাবটা উইন উইন সিচুয়েশনই ছিল; কিন্তু সিটিং সার্ভিস থাকবে না ঘোষণার পর, যারা শুরুতে বাড়তি লোক ওঠানো হয় না বলেই সাত টাকা বাড়তি দিতে কার্পণ্য করতেন না তারা বেঁকে বসলেন। এখন কেন বাড়তি ভাড়া দেব? আগে ১৩ টাকার জায়গায় ২০ টাকা দিতাম, এখন তা বেড়ে ১৭ টাকা হয়েছে- ২০ টাকা দিলেও তিন টাকা বেশি দিচ্ছি! এখন কী হবে? এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা আছে বলে বোধ হয় না।

আর কোথাও যখন সাম্য তৈরির কোনো চেষ্টা বা ইচ্ছে নেই তখন নগরে বাস সার্ভিস নিয়ে এই সাম্য তৈরির বিষয়টি বেশ কৌতুকবহ। ইচ্ছেমতো বাসভাড়া বাড়িয়ে নিয়ে তারা ঘোষণা দিলেন কোনো সিটিং সার্ভিস থাকবে না। অথচ আমার মতো একটি বড় সংখ্যক যাত্রী আছেন যারা জ্যামে পড়ে ঘামলেও অন্তত ঠ্যালাঠেলি না করে বাসে বসে যাতায়ত করতে চান।

খুলে বললে যারা একটু ভদ্র (!) চাকরি বা ব্যবসা করেন কিন্তু গাড়ি নেই, এমনকি প্রতিদিন সিএনজি-চালিত অটোরিকশায় চড়ার মুরোদ নেই। আর রয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ-তরুণী। গৃহিণীরাও এমন সার্ভিস পেলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

তাদের কথা কি ভাববেন কেউ? বেশি কিছু নয়- সিটিং বাস সার্ভিস নীতিমালা, এর আলোকে শর্তযুক্ত আলাদা রুট পারমিট ও আলাদা ভাড়ার হার ঠিক করে দিলেই সবগুলো রুটে লোকাল এবং সিটিং সার্ভিস বাস চলতে পারে। এটুকু চাওয়া কি খুব বেশি? ফ্রেঞ্চাইজি পদ্ধতিতে ৯টি ক্লাস্টারে ২২টি কোম্পানির আওতায় ৪২টি রুটে বাস চালানোর প্রসঙ্গে নাইবা গেলাম।

লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর