আমাদের জনপ্রতিনিধিরা সম্ভবত উড়াল যান ব্যবহার করেন। জমিনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কম। সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন, জনগণ বা ভোটারের সঙ্গে। তাই পথঘাটের সুস্থতার দিকে তাদের সুনজর কম। প্রায় সপ্তাহ খানেক পথে পথে ঘুরে বেড়ালাম উত্তর-দক্ষিণ, পশ্চিমের জনপদ। সুস্থ সড়ক খুব কমই উপভোগ করতে পেরেছি। মহাসড়ক, সড়ক সকলের একই হাল। হাড়হাড্ডি বেরিয়ে গেছে। তার মধ্য দিয়ে পথ চলতে গিয়ে, আমাদের কলকব্জাও এখন নড়বড়ে। পথের কোথাও কোথাও লেখা উন্নয়ন কাজ চলছে। কিন্তু কাজ চলার লক্ষণ দেখতে পাইনি। দুই লেনকে চারলেন করার কাজ কোথাও চলছে কোথাও চলছে না।
বাঘা-নাটোর সড়কের যে হাল মাস দুয়েক আগে দেখেছি এখনও তাই। কালভার্ট ও ছোট সেতু পুনর্নির্মাণ করতে গিয়ে এই সড়কটির জায়গায় জায়গায় অস্ত্রোপচার চলছে। ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা সড়কে বাহনের লম্ফঝম্ফ অসহনীয়। ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর হয়ে খুলনা পৌঁছতে বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েও কষ্টের উপশম হয়নি। খুলনার ভেতরকার রাস্তাও হাড়ের ব্যথা বাড়াল। বগুড়া, রংপুর, সৈয়দপুর, হিলি, নওগাঁ, রাজশাহীর সড়কের দেয়া বেদনা অমবস্যা-পূর্ণিমায় স্মৃতি জাগিয়ে যাবে হয়তো দীর্ঘদিন।
যখন যে জেলায় যাত্রা বিরতি নিয়েছি, চা পানের জন্য কোনো টং বা রেস্তোরাঁয় বসেছি, তখন স্থানীয়দের কাছে জানতে চেয়েছি, রাস্তার এই সর্বনাশা হাল হলো কী করে? তাদের মতে, করোনাকালে রাস্তার মেরামত কাজ হয়নি। রাস্তা দিয়ে কত ওজনের মালবাহী ট্রাক চলবে জানার পরেও, সেই ওজন-সহায়ক রাস্তা তৈরি হয়নি। নিয়মিত পরিচর্যা অনুপস্থিত। তাদের মতে, আগে সড়কের মেরামত কাজের দিকে জনপ্রতিনিধিদের সরাসরি নজর থাকত।
জনগণ তাদের কাছেই সড়ক নিয়ে আবদার অভিযোগ করতেন। কিন্তু এখন জনপ্রতিনিধিরা প্রকল্প তৈরি ও উদ্বোধনের পর সড়ক মহাসড়ক নিয়ে ভাবেন না। সড়ক বিভাগের মর্জিতেই সড়ক মহাসড়কের স্বাস্হ্যের ভালো-মন্দ নির্ভর করে। কারণ জনপ্রতিনিধিদের মনোনয়ন ও জিতে আসাও নির্ভরশীল টাকা ও বিভিন্ন নেতার সঙ্গে সম্পর্কের সুস্বাস্থ্যের ওপর। জনসন্তুষ্টি সেখানে কোনো ভূমিকা রাখছে না।
স্থানীয় মানুষের মতে, দেশে অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দে অসচ্ছলতা নেই। দেশজুড়ে সড়ক, সেতু তৈরি হচ্ছে। সমস্যা হলো সেই নির্মাণ বা উন্নয়নের পরিচর্যা বা আদর নেই। না থাকার কারণ- জনগণের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের দূরত্ব তৈরি হওয়া। জনপ্রতিনিধি ও জনগণ যখন রাজনীতির শুদ্ধতম অনুশীলনে ফিরবে, তখনই সম্ভব হবে সম্পর্কের নিবিড়তম দিনে ফেরা। তখন শুধু সড়ক নয়, জীবনের অন্যান্য যাত্রাও হবে উপভোগ্য।
লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক।