বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জ্বালানির মূল্য ও বেকারত্ব

  •    
  • ৩ অক্টোবর, ২০২১ ১৫:৫৩

আমেরিকার হোয়াইট হাউস ইতোমধ্যে তেলের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বিষয়টি নিয়ে কাজও শুরু করেছে। কারণ গত বছরেই তাদের দেশে তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ ভাগ। বাইডেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার অবশ্য সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। তিনি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তবে তেলের দামের বিষয়ে তাদের কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানা যায় না।

ইউরোপে কয়লা, কার্বন ও গ্যাসের দাম বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। অন্যদিকে এ মুহূর্তে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো ৮০.৭০ মার্কিন ডলার করেছে তাদের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। গত তিন বছরের মধ্যে এ দাম রেকর্ড পরিমাণের; এবং ৪ অক্টোবর তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মিটিংয়ের পরে এ দাম তারা আরও বাড়াবে। বেশ কয়েকটি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের মতে, অপরিশোধিত এই তেলের দাম বেড়ে এ বছরের শেষের দিকে ৯০ মার্কিন ডলার হবে।

আমেরিকার হোয়াইট হাউস ইতোমধ্যে তেলের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বিষয়টি নিয়ে কাজও শুরু করেছে। কারণ গত বছরেই তাদের দেশে তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ ভাগ। বাইডেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার অবশ্য সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। তিনি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তবে তেলের দামের বিষয়ে তাদের কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানা যায় না।

তেলের দাম বাড়ার একটি কারণ মনে করা হচ্ছে তেল উৎপাদনে কয়েকটি আমেরিকার কোম্পানির একটু ধীরগতি। তবে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তা মনে করছে না। বরং আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ কেন তেলের দাম বাড়ার বিপক্ষে, এর কারণ তারা বুঝতে পারছে না। তারা এ মুহূর্তে তেলের দাম বাড়াকে যৌক্তিক মনে করছে।

গ্যাসের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ চায়না ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পরস্পরের চাহিদার প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে গ্যাসের সরবরাহ চ্যানেল যথা কাজ করছে না। সেখানে নানানভাবে বাধা পাচ্ছে। যার ফলে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে গ্যাসের দামও রেকর্ড পরিমাণের বাড়ে। তা ছাড়া চায়না কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য কয়লার ব্যবহার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়াতে কয়লার পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে পরিশোধনের অপশন হিসেবে তরল গ্যাসের আমদানি বেড়েছে প্রায় ৯৬ ভাগ বেশি। কিন্তু তারপরেও অস্ট্রেলিয়ার হাইগ্রেড থার্মাল কয়লার দাম টনপ্রতি ২০১ থেকে বেড়ে ২০৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।

তা ছাড়া তেলের দামের বিষয়ে আরও যা সামনে আসছে তা হলো, ভ্যাকসিনেশান-পরবর্তী পুনরায় এই অর্থনীতি চালু হওয়াতে এখন বিমান চলাচল আবার স্বাভাবিক জায়গায় যাবে। এর ফলেও প্রচুর তেলের প্রয়োজন হবে। তাও একটা কারণ হয়ে দাঁড়াবে তেলের দাম বাড়ার। অর্থাৎ এই বছরের শেষে গিয়ে ৯০ মার্কিন ডলারের ওপরেও উঠে যেতে পারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম।

অপরদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির লকডাউন সহজ করার পরে দেখা যাচ্ছে মোটরসাইকেলে হাজার হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবার গ্রামের দিকে যাচ্ছে। এ ধরনের ছবি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের পত্রপত্রিকায় ও নিউজপোর্টালে ছাপা হয়েছে। এর মূল কারণ এই হাজার হাজার তরুণ শ্রমিক এই লকডাউনে তাদের চাকরি হারিয়েছে। তারা সবাই লকডাউনে তাদের সেভিংস ভেঙে খেয়েছে। এখন নিরুপায় হয়ে গ্রামের দিকে যাচ্ছে। তারা যে শুধু এই লকডাউন সহজ করার পরে চলে যাচ্ছে তা নয়। এর আগেও অনেকে চলে গেছে। যেমন আগস্টে হো চি মিন সিটি থেকে এক হাজার মাইল দূরে নগিহ এন গ্রামে চলে গেছে ২৭ বছরের মেয়ে থাই থোয়া। এই দীর্ঘ পথ সে তার মোটরসাইকেলেই যায়। সে এখন গ্রামে তার পরিবারকে চাষের কাজে সাহায্য করছে।

এই বেকারত্ব ভিয়েতনামকে উভয় সংকটে ফেলে দিয়েছে। কারণ ভিয়েতনামের সব কলকারখানা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ মুহূর্তে শতভাগ উৎপাদনে যেতে পারছে না। অন্যদিকে এভাবে যদি শহর থেকে শ্রমিকরা চলে যায়, তাহলে দ্রুত উৎপাদনে ফেরাও সমস্যা। অবশ্য কারখানাগুলো শতভাগ উৎপাদনে গিয়ে শ্রমিকদের থাকা ও খাওয়ার সুবিধা দিলে হয়তো অনেকেই দ্রুত ফিরে আসতে পারত। কিন্তু তা এ মুহূর্তে ভিয়েতনামে সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।

শুধু ভিয়েতনাম নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশেই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বন্ধ হয়েছে ছোট ছোট নানান ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তারা এই কোভিড-১৯-এ তাদের পুঁজি শেষ করে ফেলেছে। তাদের পক্ষে খুব শীঘ্রই আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব নয়। তাই এখানে যারা কাজ হারিয়েছে তাদের বেকারত্ব ঘুচবে কীভাবে, তার কোনো সঠিক নিশানা কোনো দেশের অর্থনীতিবিদরা ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা দিতে পারছে না।

আর অর্থনীতির এই ধ্বংসস্তূপে বসে যখন বেকারের মিছিল বাড়ছে, ওই সময়ে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে তেল, গ্যাস ও কয়লার দাম। এই জ্বালানির মূল্য বাড়াতে শুধু সব দেশে বিদ্যুতের দাম বাড়বে না। খরচ বাড়বে সব ধরনের সেবা খাতে ও পণ্য উৎপাদনে। তাতে করে সেবা খাতের খরচের দায় ও জিনিসপত্রের দামের ধাক্কা গিয়ে পড়বে প্রত্যেক সাধারণ মানুষের ওপরে।

সারা বিশ্বের এই চিত্র থেকে বাংলাদেশও বাইরে নয়। বাংলাদেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর ছেড়ে কত মানুষ গ্রামে চলে গেছে; মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত কত মানুষের সঞ্চয় যে শেষ হয়ে গেছে, তারও কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। পরিসংখ্যান নেই কত ছোট মাপের কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে এবং পুঁজি খেয়ে ফেলেছে কত ব্যবসায়ী। আর সেখানে যারা কাজ করত, তাদের সংসারের কী অবস্থা? বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো শতভাগ কাজ করছে কতসংখ্যক তাও দেখার বিষয়।

আর বর্তমানের ছবিও বদলে দেবে পৃথিবীজুড়ে এই জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে ইতোমধ্যে প্রায় সব ধরনের জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। দাম বেড়ে গেছে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যের। তার ওপর এই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে সেবা খাতের সবকিছুরই খরচ বেড়ে যাবে। যার প্রভাবে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে।

অর্থাৎ একদিকে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত যখন সঞ্চয় ভেঙে ফেলেছে, সে সময়ে তাদের সামনে আসছে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। আর যেকোনো দেশের ও পৃথিবীর এ অবস্থায় কোনো মিরাকল কাউকে রক্ষা করতে পারে না। রক্ষা করতে পারে না কোনো দেশ বা গোটা পৃথিবীর মানুষকে। এর জন্য প্রয়োজন হয় সুচিন্তিত অর্থনৈতিক নীতি। আর করোনা-পরবর্তী পৃথিবী যে অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আসছে, তা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের সংকট। তাই এর মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতিটা অনেক গভীর থেকে নিতে হবে। যোগ্যতা ও দক্ষতার কোনো বিকল্প এখানে নেই। মিরাকলে ভরসা করার কোনো সুযোগ অন্তত এমন সময়ে থাকে না।

এ বিভাগের আরো খবর